পেরিয়ার-আম্বেদকর-লেনিনের অনুগামীরা ‘ইন্টেলেকচুয়াল টেররিস্ট’, রামদেবের মন্তব্যে নিন্দার ঝড় সোশ্যাল মিডিয়ায়

পেরিয়ার-আম্বেদকর-লেনিনের অনুগামীদের ‘ইন্টেলেকচুয়াল টেররিস্ট’ বলে মন্তব্য করে সোশ্যাল মিডিয়ার রোষে পড়লেন যোগগুরু রামদেব। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ রামদেবের গ্রেফতারির দাবিতে রবিবার থেকে ট্যুইটারে শুরু হয়েছে #রামদেব অ্যারেস্ট ট্রেন্ড। পতঞ্জলির সমস্ত পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে নেটিজেনরা।
গত ১১ নভেম্বর রিপাবলিক টিভিতে অর্ণব গোস্বামীকে একটি সাক্ষাৎকার দেন পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের প্রতিষ্ঠাতা রামদেব। সম্প্রতি সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। উঠেছে রামদেবকে গ্রেফতারের দাবি। কিন্তু ঠিক কী বলেছেন রামদেব?
অর্ণব গোস্বামীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রামদেব বিস্ফোরক অভিযোগ করেন, বি আর আম্বেদকর, দ্রাবিড় আন্দোলনের জনক পেরিয়ার ইভি রামাস্বামীর অনুগামীরা এ দেশে ‘বৈচারিক আতঙ্কবাদ’ তৈরি করছে। এই শব্দবন্ধ তাঁর নিজস্ব বলে দাবি করেছেন রামদেব। পাশাপাশি, বামপন্থীদেরও নিশানা করেন রামদেব। তাঁর কথায়, এ দেশের কাছে লেনিন, মার্ক্স বা মাও কখনও আদর্শ হতে পারেন না। আমাদের বিদেশি অপসংস্কৃতির প্রয়োজন নেই। রামদেব যোগ করেন, আম্বেদকরের এক দেশ, এক আইন ও জাতিমুক্ত ভারতের মতবাদকে সমর্থন করলেও এঁদের ‘চ্যালা’রা প্রচণ্ড ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেন তিনি। একইভাবে দ্রাবিড় আন্দোলনের জনক, দক্ষিণের বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ পেরিয়ারকে নিশানা করেন রামদেব। তাঁর অভিযোগ, এঁদের অনুগামীরা ‘বৈচারিক আতঙ্কবাদ’ বা ইন্টেলেকচুয়াল টেররিজমের-এর সাহায্যে দেশভাগের চেষ্টা করেন।
রামদেবের সাক্ষাৎকারের এই ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল ছড়িয়ে পড়তেই নানা মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মাইক্রো ব্লগিং সাইটে রামদেবের পতঞ্জলিকে বয়কট ও তাঁকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছে নেটিজেনরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক হংসরাজ মীনা, যোগী সরকারের সমালোচনা করে গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিক প্রশান্ত কানোজিয়া প্রমুখ ব্যক্তিত্ব রামদেবের এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন। অল ইন্ডিয়া প্রোগ্রেসিভ উইম্যানস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তথা পলিটব্যুরো সদস্য কবিতা কৃষ্ণন বলেন, পেরিয়ার, আম্বেদকর, লেনিনের লড়াই ও মতবাদ সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্পৃশ্যতার বিরোধিতা করে বলেই রামদেবরা তাঁদের আক্রমণ করেন। রবিবার থেকে হ্যাশট্যাগ অ্যারেস্ট রামদেব, হ্যাশট্যাগ শাটডাউন পতঞ্জলি, হ্যাশট্যাগ রামদেব ইনসাল্টস পেরিয়ার ইত্যদি ‘ট্রেন্ড’ চালু হয়ে যায় মাইক্রো ব্লগিং সাউটে। সেই সঙ্গে রামদেবকে কটাক্ষ করে চলে দেদার ট্রোল। পাশাপাশি, পেরিয়ার ই ভি রামাস্বামী, লেনিনের উদ্ধৃতি তুলে ধরে রামদেবের মন্তব্যের জবাব দেওয়া শুরু করেন তাঁর অনুগামীরা।
যদিও এই প্রথম নয়, ২০১৪ সালে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর দলিত বাড়িতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বেফাঁস মন্তব্য থেকে শুরু করে জাতিভেদ প্রথা বিরোধী সংগঠনকে বিভিন্ন সময় কটাক্ষ করেছেন মোদী ঘনিষ্ঠ যোগগুরু।

Comments are closed.