সাবরীমালা আন্দোলন অযোধ্যা ইস্যুর উচ্চতায় পৌঁছেছে দাবি করে এবার তা নিয়ে দেশব্যাপী কর্মসূচির পরিকল্পনা ভিএইচপির

গত অক্টোবর মাসেই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সব বয়সী মহিলাই প্রবেশ করতে পারবে কেরলের সাবরীমালা মন্দিরে। দর্শন করতে পারবে আয়াপ্পার। নির্দেশে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, মহিলাদের এই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও শারীরবৃত্তীয় কারণের দোহাই দিয়ে তাদের ধর্মাচরণে বাধা দেওয়া মানে তা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যাই বলুক। নিজেদের দাবিতেই এখনও অনড় হিন্দু সংগঠনগুলি। তাদের দাবি, প্রাচীন হিন্দু রীতি ভেঙে, আয়াপ্পা ভক্তদের ভাবাবেগে আঘাত দিয়ে কোনওভাবেই মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না, তা সে শীর্ষ কোর্টের যে নির্দেশই থাকুক না কেন। বিজেপিও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, কেরল সরকারও অনড় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে মহিলাদের আয়াপ্পা দর্শনের সুযোগ করে দিতে। এই নিয়ে বিগত কয়েক মাসে দুপক্ষের মধ্যে বেশ কিছু সংঘর্ষেরও সাক্ষী থেকেছে কেরল।
নিজেদের দাবির পক্ষে ও কোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে গত কয়েকমাসে কেরলজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি, মানব বন্ধন, অনশন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছে হিন্দু সংগঠনগুলি। কিন্তু তাতে কাজের কাজ বিশেষ কিছুই হয়নি। উল্টে বহু সাধারণ ও বিশিষ্ট মানুষ সরকারের পদক্ষেপ ও কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। এরই মাঝে গত ২ জানুয়ারি সাবরিমালা মন্দিরে প্রবেশ করেন বিন্দু ও কনক দুর্গা নামে কেরলের দুই মহিলা। অবসান ঘটে যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রথার। প্রতিবাদে এরপর কেরলজুড়ে ধর্মঘট পালন করে হিন্দু সংগঠনগুলি। গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টে কেরল সরকার জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই কোর্টের নির্দেশের পর প্রায় ৫১ জন মহিলা প্রবেশ করেছেন ওই মন্দিরে। আরও প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মহিলা ইতিমধ্যেই নাম নথিভুক্ত করেছেন, ওই মন্দিরে প্রবেশের জন্য।
সাবরীমালা ইস্যুকে এবার শুধু কেরলে আটকে না রেখে এই প্রাচীন এই হিন্দু রীতিকে হাতিয়ার করে ধর্মীয় ভাবাবেগ দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা ভিএইচপি।
আরএসএসের ইংরাজি মুখপত্র অর্গানাইজারে মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, গত ১৭ জানুয়ারি প্রয়াগরাজের কুম্ভে বৈঠকে বসেছিল ভিএইচপি’র সেন্ট্রাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও বোর্ড অফ ট্রাস্টি, সেখানে অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হয়েছে সাবরীমালা ইস্যুতে এবার একযোগে দেশব্যপী বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সাবরীমালা ইস্যুতে একটি বিষয় ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে যে, কেরল সরকার, জেহাদি, বাম শক্তি আশ্রিত গুণ্ডা ও স্থানীয় প্রশাসন মিলে আয়াপ্পা ভক্তদের উপর অমানবিক অত্যাচার চালাচ্ছে। বলা হয়েছে, আয়াপ্পা ভক্তগণ, আর্য সমাজ, হিন্দু মহিলারা কেরালা সিপিএম সরকারের এই আচরণের বিরুদ্ধে ও প্রাচীন রীতি বাঁচিয়ে রাখতে সেখানে যে আন্দোলন চালাচ্ছে তার পাশে আছে ভিএইচপি ও সাধু সন্তরা। ভিএইচপি মনে করে, সরকার ও বিচার ব্যবস্থার উচিত হিন্দু ভাবাবেগে ও ঐতিহ্যে হস্তক্ষেপ না করা। ওই প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছে, ভিএইচপি মনে করে, সাবরীমালা আন্দোলন অযোধ্যা ইস্যুর মতো উচ্চতায় পৌঁছেছে। তাই এবার তার প্রতিবাদ হবে দেশজুড়ে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেরলে নিজেদের আন্দোলনে বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া হিন্দু সংগঠনগুলি এবার দেশব্যাপী নজর কাড়তে চাইছে, তাই তাদের এই সিদ্ধান্ত।

Comments are closed.