কেরলের সাবরিমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ নিয়ে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে, আজ থেকে ফের বন্ধ মন্দির

সকল বয়সের মহিলারা প্রবেশ করতে পারবে কেরলের সাবরিমালা মন্দিরে, গত মাসের শেষে সুপ্রিম কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ের পর ১৮ অক্টোবর মন্দিরের পুজ্যো দেবতা আয়াপ্পার পুজোর জন্য খুলেছিল এই মন্দির। আর তা নিয়েই গত পাঁচ দিন ধরে মন্দির চত্বরসহ কেরলজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র উত্তেজনার পরিবেশ। মহিলাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে মন্দিরে প্রবেশের। রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে কেরলের সিপিএম সরকার এবং বিজেপির মধ্যে।
এদিকে, সোমবার পুজার্চনার পর রাত দশটায় আবার মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সাবরিমালা মন্দির কর্তৃপক্ষ। মন্দির পক্ষের তরফে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে, মন্দিরে যদি জোর করে মহিলাদের প্রবেশ করানোর চেষ্টা হয় বা যুগ যুগ ধরে চলে আসা রীতিতে আঘাত আসে, মন্দির অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সেক্ষেত্রে যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির দায় বর্তাবে পুলিশ-প্রশাসনের উপর। সূত্রের খবর, মন্দির চত্বরের ভিতর কয়েকশো লোক জড়ো করে রেখেছে মন্দির কমিটি। জোর করে মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করানো হলে তারা বাধা দান ও হামলা চালাতে পারে। ইতিমধ্যেই পুলিশের তরফে সাংবাদিকদেরও সতর্ক করা হয়েছে, মন্দিরের আশপাশে খবর করতে গেলে তাঁদের ওপরও হামলা চালানো হতে পারে বলে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ অক্টোবর সাবরিমালা মন্দির খোলার পর থেকেই উত্তপ্ত মন্দির চত্বরসহ গোটা কেরল। একদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের জেরে গত পাঁচ দিনে বেশ কিছু মহিলা মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাঁদের মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কেরল প্রশাসনের অভিযোগ, মন্দির কর্তৃপক্ষ দুষ্কৃতীদের এনে জড়ো করেছে মন্দির চত্বরে, তারাই বাধা দিচ্ছে মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশে। গত কয়েকদিনে মহিলা সাংবাদিকসহ ৯ জন মহিলার আক্রান্ত হওয়ার, বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার খবর মিলেছে। প্রশাসনও এই ঘটনায় যথেষ্ট বিব্রত।
সিপিএম নেতৃত্বাধীন কেরলের পিনারাই বিজয়ন সরকার জানিয়েছে, তারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানবে। কিন্তু বাস্তবে সেই নির্দেশ মানতে গিয়ে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে পুলিশকে। মন্দিরে প্রবেশে বাধাদানকারী কয়েকজনকে গত কয়েকদিনে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার প্রতিবাদে একাধিক ধর্মীয় সংগঠন রাজ্যজুড়ে সবকটি থানা অভিযান করেছে। ধর্মীয় সংগঠনগুলি দাবি করেছে, ধৃতদের ছাড়তে হবে, সরকার সাবরিমালা মন্দিরের ঐতিহ্য ভাঙতে চাইছে।
বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কেরলের অধিকাংশ আয়াপ্পাপ্রেমী মানুষও ভালোভাবে নেননি। তাদের মতে, এই মন্দিরে মহিলাদের, বিশেষ করে রীতি ভেঙে ১০ থেকে ৫০ বছরের ঋতুমতী মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করলে রুষ্ট হবেন আয়াপ্পা। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও জানিয়েছেন, এই নির্দেশ দেওয়ার আগে মানুষের ভাবাবেগের কথা মাথায় রাখা উচিত ছিল শীর্ষ আদালতের।
বিজেপি গোটা বিষয় নিয়ে কেরল বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে। সিপিএমের বিরুদ্ধে গিয়ে কংগ্রেসের তরফেও বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এড়িয়ে নতুন অর্ডিনান্স জারি করে কেন্দ্র এই অচলাবস্থার সমাধান করুক। কিন্তু কেরল সিপিএমের দাবি, এই উত্তেজনার পিছনে ইন্ধন রয়েছে আরএসএস ও বিজেপির। পাল্টা বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছে, তারা একমাসব্যাপী বিশেষ পদযাত্রা করবে গোটা কেরলে। মানুষকে বোঝানো হবে সাবরিমালার ঐতিহ্য নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বাধীন কেরল সরকার।

Comments are closed.