ভেঙে গেল প্রাচীন প্রথা, কেরলে সিপিমের ৫০ লক্ষ মহিলার মানব প্রাচীরের পর বুধবারই সাবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করলেন দুই মহিলা

সাবরীমালা মন্দিরে সব বয়সী মহিলার প্রবেশাধিকারের পক্ষে সওয়াল করে মঙ্গলবারই কেরলে ৫০ লক্ষ মহিলার নজিরবিহীন মানব প্রাচীর গড়েছিল সিপিএম। আর বুধবার ভোররাতেই প্রথমবার এই মন্দিরে ঢুকতে পারলেন ৫০ বছরের কম বয়সী দুই মহিলা। সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস টানাপোড়েনের পর অবশেষে এদিন ভোরে বিন্দু এবং কণকদুর্গা নামে সদ্য ৪০ পেরনো দুই মহিলা সাবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেন এবং আরাধ্য দেবতা আয়াপ্পা দর্শণ করেন।
নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনই ভেঙে গেল যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রাচীন প্রথা। জানা গেছে, এদিন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ কেরলের সাবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পেরেছেন দুই মহিলা বিন্দু ও কণকদুর্গা।
এর আগেও প্রতিরোধ এড়িয়ে এই মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন কেরলের কোঝিকোড়ের কোইল্যান্ডির বাসিন্দা বিন্দু ও মল্লপুরমের অঙ্গদিপুরমের বাসিন্দা কণকদুর্গা। কিন্তু সেবার তাঁদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কেরলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ওই দুই মহিলা জানিয়েছেন, পুলিশের সহায়তায় ও নিরাপত্তায় তাঁরা এদিন ভোরে সাবরীমালা মন্দিরে আয়াপ্পার দর্শণ করতে পেরেছেন। তবে ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে গিয়ে তাঁরা আয়াপ্পা দর্শণ করেছেন। মন্দিরের হোলি ১৮ স্টেপস ধরে তাঁরা সেখানে যাতে পারেননি।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সাবরীমালা মন্দিরে সব বয়সী মহিলা প্রবেশ করতে পারবেন। কারণ, শুধুমাত্র লিঙ্গগত পরিচয় ও মহিলাদের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়ার কারণে তাঁদের ধর্মাচরণে বাধা দেওয়া যায় না। যদি তা হয় তাহলে তা গণতন্ত্রে মানুষের ধর্মাচরণের অধিকারে হস্তক্ষেপের সমান। যদিও, যুগ যুগ ধরে কেরলের এই প্রাচীন মন্দিরে মহিলাদের, বিশেষ করে ১০ থেকে ৫০ বছরের ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কারণ প্রচলিত আছে, ঋতুমতী মহিলারা এই মন্দিরে প্রবেশ করলে রুষ্ট হবেন মন্দিরের আরাধ্য দেবতা আয়াপ্পা।
কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে সিপিএম নেতৃত্বাধীন কেরলের বাম সরকার স্বাগত জানালেও, বিরোধিতা শুরু করে বিজেপি। বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন ও সাবরীমালা মন্দির কর্তৃপক্ষ শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পরও মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ করতে দিতে রাজি হয়নি। খোদ বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব জানায়, রায় দেওয়ার আগে মানুষের ভাবাবেগের কথা মাথায় রাখা উচিত ছিল কোর্টের। এই রায়ের বিরুদ্ধে মানুষের ভাবাবেগের কথা বলে বিজেপির রাস্তাই নেয় কেরল কংগ্রেসও।
এরপর কোর্টের নির্দেশের কপি হাতে দফায় দফায় যতবারই সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন মহিলারা, ততবারই বাধা দেওয়া হয়েছে তাঁদের। আক্রান্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন মহিলা সমাজ কর্মী ও সাংবাদিক। অভিযোগ ওঠে, মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশে বাধা দিতে দুষ্কৃতী ভাড়া করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পিনারাই বিজয়ন সরকারও কোর্টের নির্দেশ মানা হবে বলে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। অবশেষে বুধবার মন্দিরে প্রবেশ করতে পারলেন দুই মহিলা।

Comments are closed.