সব্যসাচী মুখার্জি: হতাশায় ডুবে ১৭ বছর বয়সে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম! বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি বাঙালি ফ্যাশন ডিজাইনারের

অনুষ্কা শর্মা থেকে দীপিকা পাডুকোন, ইশা আম্বানী থেকে রানি মুখার্জি। ঝলমলে সাজে ক্যামেরার সামনে আসা মানেই ইদানীং এক বঙ্গসন্তানেরও খ্যাতির নতুন মাইল ফলক তৈরি হওয়া। তিনি সব্যসাচী মুখার্জি। সাম্প্রতিককালে কোনও ডিজাইনার ভারতীয় সুন্দরীদের মনোজগতে এভাবে একচেটিয়া সাম্রাজ্য বিস্তার করতে পারেননি। কিন্তু জানেন কি, অনুষ্কা থেকে দীপিকা, যাঁর পোশাকে এমন উচ্ছল সৌন্দর্যের মহাকাব্য লেখেন, হতাশায় ডুবে তিনি নিজে গিয়েছিলেন আত্মহত্যা করতে?
ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জি জানিয়েছেন তাঁর সেই সব দিনের কথা। কী বলেছেন সব্যসাচী? সম্প্রতি ইটি প্যানাশেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারকা ডিজাইনার উজার করে দিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের এক অজানা অধ্যায়ের বৃত্তান্ত। জানিয়েছেন, সমাজের উপহাস-পরিহাসে হতাশার অন্ধকারে ডুবে গিয়ে কীভাবে ১৭ বছর বয়সে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন তিনি। জানিয়েছেন কীভাবে আত্মহত্যা করতে না পারাই তাঁকে রসদ যুগিয়েছিল ঘুরে দাঁড়াতে, নিজের পথ খুঁজে বের করতে। সব্যসাচী জানিয়েছেন, তিনি ঠিক কীভাবে নিজেকে মেলে ধরবেন, সেই ধারণাই তাঁর ছিল না। তাই কখনও ডাক্তারি আবার কখনও অর্থনীতিতে হাত পাকাচ্ছিলেন। কিন্তু এসব যে তাঁর কাজ নয়, তা বুঝতে পারছিলেন ষোলো আনা। শেষ পর্যন্ত হতাশার বশেই নিজেকে সাজিয়ে তুলেছিলেন উগ্র সাজে। যেখানে সব্যসাচীর মাথার চুলের রং কমলা, পরনে সেফটিপিন দিয়ে আটকানো ছেঁড়া জিনস। এই উগ্র, চড়া সাজপোশাক তাঁকে হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে যেমন সাহায্য করেছিল, তেমনই এনে দিয়েছিল এক অনাস্বাদিত অনুভূতি, ফ্যাশনের বর্ণপরিচয়। তারপর বাকিটা ইতিহাস। আসলে ভিতরে পুষে রাখা রাগ, ক্ষোভ আর হতাশা বেরিয়ে এসেছিল ওই চড়া সাজ পোশাকের পরতে পরতে, বলছেন সব্যসাচী মুখার্জি।
কিছুদিন আগে সব্যসাচীর একটি ইনস্টা পোস্টে তুমুল বিতর্ক হয়। পোস্টে সব্যসাচী লিখেছিলেন, যে মহিলারা অতিরিক্ত সাজেন, মেকআপ করেন, গয়না পরেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তাঁরা ভিতরে ভিতরে রক্তাক্ত। তাঁদের সঙ্গ দিন, সারিয়ে তুলুন। কারণ, সহানুভূতি যে কোনও বহুমূল্য গয়নার চেয়েও বেশি মহার্ঘ।

সব্যসাচীর এই পোস্ট নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। প্রশ্ন ওঠে, মেয়েদের স্বাধীনতা নিয়ে কীভাবে এমন তির্যক মন্তব্য করতে পারেন একজন পুরুষ? বিতর্কের মুখে সব্যসাচী নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ইন্টারভিউতে সব্যসাচী পরিষ্কার করেছেন, কেন তিনি একথা বলেছিলেন। ‘বলতে চেয়েছিলাম, আরও একটু সচেতন হোন। আরও একটু সহানুভূতির বিকাশ ঘটুক মনে। মানুষের সাজপোশাক নিয়ে আলটপকা মন্তব্য করার আগে দয়া করে একবার ভেবে দেখুন, এর মধ্যে দিয়ে তাঁর ভেতরের রাগের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে না তো? ঠিক যেমন হয়েছিল আমার ক্ষেত্রে।’
ইদানীং নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রকাশ্যে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানিয়ে এই ডিজাইনার বলেছেন, হতাশা সর্দি-কাশির মতোই একটি সাধারণ ব্যাপার। যা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন সাহচর্যের এবং সহানুভূতির।
অজি ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল থেকে বিরাট কোহলি কিংবা দীপিকা পাডুকোন। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি নিয়ে ইদানীং প্রকাশ্যে কথা বলার রেওয়াজ তৈরি হচ্ছে। এই বদলকে অত্যন্ত ইতিবাচক বলছেন সব্যসাচী মুখার্জি। আর তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, এখন হতাশায় ভোগেন না? সব্যসাচীর উত্তর, বাঙালি তো! হতাশা আসছে মনে হলেই খাওয়ার থালা সাজিয়ে বসে যাই। পেট ভরলেই হতাশা হাওয়া!

Comments are closed.