স্বেচ্ছাবসর চালু করে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক SBI তে ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ? কী আছে VRS স্কিমে?

টেলিকম সংস্থা BSNL’র পর এবার দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI) এর জন্য স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প নিয়ে এসেছে কেন্দ্র। দেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টরে একাধিক সংস্কারের অঙ্গ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির পরিচালন ব্যবস্থাকে কর্পোরেট ধাঁচ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। যেখানে স্বেচ্ছাবসর বা VRS  নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সম্প্রতি ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক তাদের স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প ঘোষণা করে দিয়েছে। কী রয়েছে এসবিআই-র এই ভিআরএস প্ল্যানে?

 

এসবিআই-র ভিআরএস প্ল্যান 

জানা গিয়েছে, ১ ডিসেম্বর থেকে প্রায় ৩০ হাজার কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। তার জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছে ভিআরএস-২০২০ খসড়া।

১) যে কর্মীরা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে রয়েছেন এবং নিজেদের কর্মদক্ষতার শীর্ষে নেই, প্রস্তাবিত ‘সেকেন্ড ইনিংস ট্যাপ ভিআরএস-২০২০’পরিকল্পনার আওতায় তাঁদের সম্মানের সঙ্গে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে ব্যক্তিগত কারণে বা ব্যাঙ্কের বাইরে কোনও ব্যক্তিগত-পেশাদারি জীবন কাটাতে চাইলেও সুযোগ মিলবে।

২) ভিআরএস খসড়া অনুযায়ী, কাট-অফ দিনের নিরিখে যে স্থায়ী অফিসার এবং কর্মী ২৫ বছরের চাকরি জীবন পূরণ করেছেন বা যাঁদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি, তাঁরা প্রকল্পের জন্য বিবেচিত হবেন।

৩) ১ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত স্বেচ্ছাবসর গ্রহণের আবেদন জমা নেওয়া হবে।

৪) স্বেচ্ছাবসরের যে যোগ্যতা তুলে ধরা হয়েছে এই খসড়ায় তাতে দেখা যাচ্ছে ভিআরএস প্ল্যানের আওতায় আসছেন এসবিআই এর ৩০ হাজার ১৯০ জন কর্মী।

৫) ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে কর্মীদের স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের আবেদন মঞ্জুর হবে, তাঁদের চাকরি জীবনের অবশিষ্ট সময়ের ৫০ শতাংশ বেতন দেওয়া হবে। তবে সর্বাধিক ১৮ মাসের বেতন মিলবে। অর্থাৎ, নির্ধারিত বয়সের ৩৬ মাস বা দেড় বছর আগে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করলে সংশ্লিষ্ট অফিসার বা কর্মী ৫০ শতাংশ বেতন পাবেন। কেউ যদি ৫৬ বা ৫৭ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি সর্বাধিক ১৮ মাসের বেতন পাবেন।

এছাড়া গ্র্যাচুইটি, পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড সহ একাধিক সুবিধা পাবেন কর্মীরা। এই নয়া প্রকল্পের আওতায় যাঁরা স্বেচ্ছায় অবসর নেবেন, তাঁরা দু’বছরের কুলিং-অফ পিরিয়ডের পর আবারও ব্যাঙ্কে যোগ দিতে পারবেন। যেদিন তিনি অবসর নেবেন, সেদিন থেকে ওই দু’বছরের মেয়াদ হিসেব হবে।

 

এসবিআই ‘র ভিআরএস প্ল্যানে লাভ কী? 

গত অর্থবর্ষ পর্যন্ত এসবিআইয়ের মোট কর্মী সংখ্যা ছিল ২.৪৯ লক্ষ। প্রাথমিকভাবে ১১ হাজার ৫৬৫ জন অফিসার এবং ১৮ হাজার ৬২৫ জন কর্মী স্বেচ্ছা অবসরের জন্য বিবেচিত হবেন বলে জানা গিয়েছে। যা ব্যাঙ্কের মোট কর্মী সংখ্যার ১০ শতাংশেরও বেশি। এর মধ্যে যদি ৩০ শতাংশ অফিসার এবং কর্মীও অবসর গ্রহণ করেন, তাহলে ব্যাঙ্কের আনুমানিক ২,১৭০.৮৫ কোটি টাকা খরচ বাঁচবে।

এর আগে ২০১৭ সালে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় মেশার আগে তাদের পাঁচটি শাখা কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দিয়েছিল। ২০০১ সালেও এই একই পথে হেঁটেছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।

ভিআরএসের নামে কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছে বিভিন্ন কর্মী সংগঠন। তাদের অভিযোগ, অতিমারি করোনার জেরে মানুষের পেশাগত জীবন যখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, দেশে কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি আরও কঠিন, তখন ভিআরএস প্রকল্পের ঘোষণা কর্মীদের আরও চাপে ফেলবে।

এদিকে করোনার ধাক্কায় খুব প্রয়োজন ছাড়া কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রক, দফতর, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বা সংস্থায় নতুন পদ তৈরি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এই ভিআরএস প্ল্যানের তীব্র বিরোধিতা করছেন ব্যঙ্ক কর্মীরা। ব্যাঙ্ক কর্মী সংগঠন ন্যাশনাল অর্গানাইজ়েশন অব ব্যাঙ্ক ওয়ার্কার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট অশ্বনি রানারের অভিযোগ, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের রুজি-রোজগার নিয়ে আশঙ্কার সময় স্বেচ্ছাবসরের সিদ্ধান্ত আসলে এসবিআই কর্তৃপক্ষের কর্মী বিরোধী মনোভাবকে প্রকাশ।

Comments are closed.