এনডিটিভি’র শীর্ষপদ ছাড়তে হবে প্রণয় রায় এবং তাঁর স্ত্রীকে, নজিরবিহীন নির্দেশ সেবির! পিছনে কি রাজনীতি? জল্পনা

এনডিটিভি-র (নিউ দিল্লি টেলিভিশন লিমিটেড) সমস্ত শীর্ষপদ থেকে সরতে হবে প্রণয় রায় এবং তাঁর স্ত্রী রাধিকা রায়কে। দু’বছরের জন্য ছাড়তে হবে সংস্থার ডিরেক্টরের পদ। শুক্রবার এমনই নির্দেশ দিয়েছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি)। এর ফলে আগামী দু’বছরের জন্য এনডিটিভি-র পরিচালন পর্ষদ থেকেও সরে থাকতে হবে রায় দম্পতিকে। পাশাপাশি প্রণয় রায়, রাধিকা রায় এবং তাঁদের সংস্থা আরআরপিআর (রাধিকা রায় প্রণয় রায়) হোল্ডিংস, শেয়ার বাজারেও প্রবেশ করতে পারবে না।
সেবির অভিযোগ, ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দুটি ঋণ প্রদাণকারী সংস্থার সঙ্গে সংস্থার চুক্তির তথ্য শেয়ার বাজারে গোপন করেছেন প্রণয় রায় এবং রাধিকা রায়। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই শুক্রবার এমন নির্দেশ দিয়েছে সেবি। নির্দেশের তীব্র বিরোধিতা করে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে এনডিটিভি কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার সেবির এই নজিরবিহীন নির্দেশ নিয়ে দেশের সংবাদমাধ্যম জগতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। অনেকেই এর পিছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন। অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী অবস্থান নেওয়ার জন্যই কি দেশের টেলিভিশন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ প্রণয় রায়কে বারবার হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে, প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।
বর্তমানে এনডিটিভির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর চেয়ারপার্সন পদে রয়েছেন প্রণয় রায়। তাঁর স্ত্রী রাধিকা রায় সংস্থার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। সেবির শুক্রবারের নির্দেশ অনুযায়ী, রায় দম্পতি আগামী এক বছর অন্য কোনও সংস্থার ডিরেক্টর অথবা ম্যানেজারিয়াল পদেও থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ, এনডিটিভির পাশাপাশি অন্য কোনও সংস্থারও শীর্ষ পদে থাকতে পারবেন না তাঁরা।
২০০৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে এনডিটিভি প্রথমে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, তারপর বিশ্বপ্রধান কমার্শিয়াল প্রাইভেট লিমিটেড (ভিসিপিএল) নামক একটি সংস্থার থেকে ঋণ নেয়। কিন্তু এই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রণয় রায় কিংবা রাধিকা রায় শেয়ার বাজারে জানাননি। ফলে এই ঋণ-তথ্য না জেনেই এনডিটিভির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন বহু মানুষ, যা প্রতারণার নামান্তর। এই মর্মে অভিযোগ দায়েরের পরই তদন্ত শুরু করে সেবি। তারই ফলশ্রুতি শুক্রবারের নির্দেশ।
সেবির এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিবৃতি জারি করেছে এনডিটিভি। তাতে রায় দম্পতির তরফে জানানো হয়েছে, সেবির এই নির্দেশ ভয়াবহ, ভুল আইনের প্রয়োগ এবং বিকৃত। সেবির নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা, বিবৃতিও তাও জানানো হয়েছে।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও প্রণয় রায় ও রাধিকা রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭ সালে প্রণয়-রাধিকার বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। তথ্য গোপনের মাধ্যমে একটি ব্যাঙ্কের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগে সেবার প্রণয়-রাধিকার দিল্লি ও দেহরাদুনের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু তারপর সেই মামলার হদিশ জানা যায়নি। সেই ঘটনার ঠিক দু’বছর বাদে ফের ধাক্কা খেলেন ভারতের টেলিভিশন নিউজের পথিকৃৎ প্রণয় রায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, কট্টর মোদী বিরোধী খবর সম্প্রচারের জন্যই বারবার সরকারের রোষে পড়তে হচ্ছে ডক্টর রায়কে। যদিও আইন আইনের পথেই চলবে, এখানে রাজনীতির হস্তক্ষেপ নেই, বলেই জানাচ্ছে বিজেপি।

Comments are closed.