নবান্ন অভিযানে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে শিখ যুবকের পাগড়ি খুলে যাওয়া নিয়েও রাজনীতি! কী জানাল রাজ্য পুলিশ?

বিজেপির নবান্ন অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র সহ পুলিশের হাতে ধৃত শিখ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির পাগড়ি খুলে যাওয়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়। শুক্রবার রাতে বিবৃতি দিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। পাগড়ি খুলে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে হাওড়ায় বিজেপির বিক্ষোভে শামিল হওয়া ওই শিখ ব্যক্তির পাগড়ি ধরে পুলিশ টানেনি। এই অভিযোগ সত্য নয়।

ঠিক কী ঘটেছিল?

বৃহস্পতিবার বিজেপির ‘নবান্ন চলো’ অভিযানে শামিল হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ, দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়, যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্য সহ বিজেপির প্রথম সারির নেতারা। পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে বিভিন্ন এলাকায় বচসা এবং ধস্তাধস্তি বাধে। হাওড়ায় এমনই একটি ধস্তাধস্তির ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক শিখ যুবককে ধরেছে পুলিশ। সেই যুবককে ধরার সময় ধস্তাধস্তিতে তাঁর পাগড়ি খুলে যাচ্ছে। ঘটনাচক্রে বলবিন্দর সিংহ নামে ওই যুবকের হেফাজত থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা যায়, বলবিন্দর বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য কমিটির সদস্য তথা অর্জুন সিংহ ঘনিষ্ঠ বারাকপুরের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্গু পাণ্ডের দেহরক্ষী। আদতে ওই যুবকের বাড়ি পঞ্জাবের ভাতিন্ডা জেলায়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া পিস্তলের লাইসেন্স করানো হয়েছিল জম্মুর রাজৌরি থেকে। অস্ত্র আইন অনুযায়ী পিস্তল নিয়ে রাজৌরির বাইরে কোথাও যাওয়া বেআইনি বলে বিবেচিত হবে। সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গে এই বন্দুক নিয়ে ঘোরা বেআইনি এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৫/২৭ অস্ত্র আইনে বলবিন্দর সিংহের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এদিকে পুলিশের সঙ্গে বলবিন্দরের ধস্তাধস্তির ভিডিও নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।

দিল্লির জংপুরের বিজেপি নেতা ইমপ্রীত সিংহ বক্সি ভিডিওটি ট্যুইট করে লেখেন, ‘প্রিয়াঙ্গু পাণ্ডের দেহরক্ষী বলবিন্দর সিংহের পাগড়ি খুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় ফেলে নৃশংসভাবে মেরেছে বাংলার পুলিশ’। পাগড়ি খুলে দেওয়া শিখ সম্প্রদায়ের কাছে গর্হিত অপরাধের শামিল। তাই বাংলার মুখ্য মন্ত্রী মমতার কাছে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান ইমপ্রীত। তাঁর ট্যুইটটি রিট্যুইট করেন জনৈক নেটিজেন। তিনি আবার প্রাক্তন ক্রিকেটার যুবরাজ সিংহ, হরভজন-সহ অনেককে ট্যাগ করেন। সেই ট্যুইট দেখেই মমতার কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ট্যুইটে আবেদন জানান হরভজন সিংহ। এর মধ্যে আসরে নেমে পড়ে বিজেপিও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন ‘এই ছবি দেখে আমি স্তব্ধ। বাংলার পুলিশ এ কী কাণ্ড ঘটিয়েছে! আদালতে মামলা করার অনুরোধ করছি তেজিন্দার পাল সিংহকে।’ এছাড়া আরও অনেক বিজেপি নেতা প্রতিক্রিয়া জানান।

শুক্রবার রাতে প্রতিক্রিয়া দেয় রাজ্য পুলিশ। একাধিক ট্যুইটে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের তরফে জানানো হয়, বিক্ষোভ মিছিলে ওই ব্যক্তি কেন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আসেন প্রথমে তা জানতে চায় পুলিশ। রাজ্য পুলিশের বিবৃতি অনুযায়ী, ‘ওই ব্যক্তির সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় পাগড়ি আপনা-আপনি খুলে যায়। আমাদের অফিসাররা পাগড়ি খোলার চেষ্টা করেনি। কোনও গোষ্ঠীর ধর্মীয় আবেগে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।’ আর একটি ট্যুইটে রাজ্য পুলিশ জানায়, আমরা সকল ধর্মকে সম্মান প্রদর্শন করি। গ্রেফতারের আগে ওই ব্যক্তিকে পাগড়ি পরে নিতে বলেছিলেন পুলিশ অফিসার। থানায় নিয়ে যাওয়ার ঠিক আগেই সংযুক্ত ছবিটি সংগ্রহ করা হয়েছে।

আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের আগে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার তাঁকে আগে পাগড়ি পরে নিতে বলেন। থানায় নিয়ে যাওয়ার আগে পাগড়ি পরা সেই ছবিও ট্যুইটের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা রাজ্যে আইন- শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিজেদের দায়িত্বে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Comments are closed.