কেন সিঙ্গাপুরে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হার বিশ্বে সবচেয়ে কম?

করোনা তাণ্ডবে গোটা পৃথিবীতে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের। প্রতি মুহুর্তে এই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হার কমবেশি ৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন করোনা সংক্রমিতের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। এবার দেশ ভেদে এই হারে বেশি কিংবা কম। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিশ্বে মৃত্যু হার সবচেয়ে কম সিঙ্গাপুরে।

সাউথ ইস্ট এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে মোট ৫৭ হাজার সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২৭ জনের। সিঙ্গাপুরে করোনার কেস ফ্যাটালিটি কাউন্ট ০.০৫ শতাংশ। সিঙ্গাপুরের আকারের ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডের কেস ফ্যাটালিটি রেট যথাক্রমে ৩ এবং ৪ শতাংশ। বিশ্বের গড় ৩ শতাংশ। গত ২ মাসে সিঙ্গাপুরে করোনায় একজনেরও মৃত্যু হয়নি।

কোন মন্ত্রে এমন সাফল্য? উত্তর খুঁজে দেখেছে আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্স।

 

ইনফেকশন ডেমোগ্রাফি 

সিঙ্গাপুরে ৯৫ শতাংশ সংক্রমিতরা ২০ থেকে ৩০ বছরের পরিযায়ী কর্মী। বেশিরভাগই ডরমিটরিতে থাকেন এবং নির্মাণ বা জাহাজ নির্মাণের মতো শ্রমনিবিড় শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। শেষ কয়েকমাসের অভিজ্ঞতা বলছে, করোনাভাইরাস অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের ক্ষেত্রে অতটা মারাত্মক হচ্ছে না। ফলে সিঙ্গাপুরের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় হাবকেই একেবারে শুরুতে বোতলবন্দি করতে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন।

 

ডিটেকশন 

সিঙ্গাপুরের আগ্রাসী কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত নির্ণয় এবং নমুনা পরীক্ষার প্রশংসা করেছে স্বয়ং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সরকারি সূত্রে খবর, দেশের ৯ লক্ষ মানুষের সোয়াব টেস্ট করা হয়েছে, যা ৫৭ লক্ষ জনসংখ্যার সিঙ্গাপুরের ১৫ শতাংশ।

ডরমিটরির বাসিন্দাদের নিয়মিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশে ১৩ বছরের কম বয়সী উপসর্গ যুক্তের বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একইভাবে ৬০ বছরের উপরের মানুষেরা পরীক্ষা করাচ্ছেন ফ্রিতে। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের সু লি ইয়াং বলছেন, আমরা যত বেশি পরীক্ষা করতে পারব, মৃত্যুর সংখ্যা তত কমে আসবে।

 

হাসপাতাল 

সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশ্বে বিখ্যাত। অগুন্তি বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীর রাজধানী সিঙ্গাপুরে স্বভাবতই চিকিৎসা পরিকাঠামো দুর্দান্ত। কিন্তু মহামারি সামাল দেওয়ার পরিকাঠামো মজুত ছিল কি? সু লি ইয়াং বলছেন, মহামারি সামাল দিতে প্রতিটি হাসপাতাল এলাকার অডিটোরিয়াম ভাড়া নিয়েছে। সেখানে কম উপসর্গদের রাখা হচ্ছে। সেখানেই আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করতে পারলে, প্রধান হাসপাতাল বিল্ডিংয়ের সঙ্গে কোনও যোগ না রেখেই সমান্তরাল ব্যবস্থা চালানো সম্ভব হচ্ছে। খুব সিরিয়াস না হলে সিঙ্গাপুরে কোনও হাসপাতালেই নিজের বিল্ডিংয়ে করোনা রোগী দেখার প্রয়োজন হচ্ছে না, বলছেন ইয়াং।

এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে ৪২ জন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ৪৯০ জনকে বিভিন্ন সেফ হোম ফেসিলিটিতে রাখা হয়েছে।

 

মাস্ক বাধ্যতামূলক 

এপ্রিল থেকেই শহর-রাষ্ট্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছে। মানুষ সেই কথা শুনেছেন। সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য কর্তাদের মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমস্ত গাইডলাইন অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে। ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিং এবং মাস্ক বাধ্যতামূলক হওয়ায় সংক্রমণ মাত্রাছাড়া গতিতে ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা রুখে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

Comments are closed.