টালমাটাল কমিউনিস্ট চিনের অর্থনীতি, অগাস্টে উৎপাদন বৃদ্ধির হার গত ১৭ বছরের মধ্যে দুর্বলতম

শ্লথতায় আক্রান্ত চিনের অর্থনীতি। গত অগাস্টে কমিউনিস্ট চিনে শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির হারের নিরিখে যা গত সাড়ে ১৭ বছরে দুর্বলতম। ঘরোয়া চাহিদার আকালের পাশাপাশি আমেরিকা-চিন শুল্ক যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে অগাস্টের নিম্নগামী বৃদ্ধির হার বেজিংয়ের কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে চিনের শীর্ষ ব্যাঙ্ক পিপলস ব্যাঙ্ক অফ চায়নার (পিবিওসি) উপর ক্রমেই চাপ বাড়ছে। এমনই প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্সে।
শুধুমাত্র শিল্পক্ষেত্র নয়, খুচরো ব্যবসা কিংবা বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য হ্রাস লক্ষ্য করা গিয়েছে চিনের অর্থনীতিতে। বৃদ্ধির শ্লথতা কাটাতে গত বছর থেকেই বিভিন্ন উৎসাহবর্ধক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি স্থিতিশীলতার ধারেকাছে পৌঁছোয়নি। এই পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বেজিং যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রকৃত অর্থেই উৎসাহবর্ধক পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। যার প্রভাব সরাসরি এসে পড়বে ইতিমধ্যেই টালমাটাল অর্থনীতিতে।
সোমবার প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অগাস্ট মাসে চিনের শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের হার দাঁড়িয়েছে ৪.৪ শতাংশে। যা ২০০২ এর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আজ পর্যন্ত, সবচেয়ে ধীর গতির। এবছর জুলাইয়ে এই হার ছিল ৪.৮ শতাংশ। শুল্ক যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব হিসেবে পাল্লা দিয়ে ডলারের তুলনায় দাম পড়ছে চিনের ইউয়ানের।
চিনের প্রিমিয়ার লি খচিয়াং সোমবার রিপোর্ট প্রকাশের আগে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, নিম্নগামী প্রভাবের জেরে অর্থনীতির ৬ শতাংশ কিংবা তারও বেশি হারে বৃদ্ধি অত্যন্ত কঠিন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে প্রকাশ, আমেরিকা-চিন শুল্ক যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে চিনের সাথে সাথে ধাক্কা খাচ্ছে বিশ্বের অর্থনীতিও। বিগত বেশ কয়েকমাস ধরেই চিনের বৃদ্ধিতে থাবা বসিয়েছে আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধ। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা সহজে কমার নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে রাতারাতি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া কার্যত অসম্ভব। তাহলে কী উপায়?
এক্ষেত্রে পিপলস ব্যাঙ্ক অফ চায়নাকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সুদের হারে কাটছাঁট সাময়িকভাবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে। পাশাপাশি নীতিগত সিদ্ধান্তেও বেশ কিছু বদলের কথা বলছেন তাঁরা।
সেপ্টেম্বরের শুরুতেই পিবিওসি ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম নগদ মজুতের পরিমাণ কমিয়েছিল। এর ফলে আশা করা হয়েছিল, ব্যাঙ্কগুলো ঋণ দিতে আরও উৎসাহিত হবে। কিন্তু দু’সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরও তেমন কোনও আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে আরও জোরালো হয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্কের স্টিমুলাসের ঘোষণার দাবি। মন্দার ঘনঘটা কাটাতে চিনের শীর্ষ ব্যাঙ্ক কি তেমন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে? বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

Comments are closed.