আমেরিকা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ভেনেজুয়েলায় মাদুরো সরকার ফেলতে চাইছে, আশঙ্কা প্রকাশ মার্ক্সবাদী পত্রিকা ‘সোশ্যালিস্ট অ্যাপিল’এ

ওয়াশিংটন কি ভেনেজুয়েলায় নির্বাচিত নিকোলাস মাদুরো সরকারকে ফেলতে উদগ্রীব? এর জন্য তারা কি মদত দিচ্ছে ভেনেজুয়েলার সেনা, সরকারি আধিকারিক এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশকে? এমনই আশঙ্কার কথাই সামনে এল মার্ক্সবাদী সংগঠন ‘সোশ্যালিস্ট অ্যাপিল’এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে।
‘সোশ্যালিস্ট অ্যাপিল’এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, একদিকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ছেঁটে ফেলতে বিরোধী দলের অসাংবিধানিক পদক্ষেপ, আর একদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির হস্তক্ষেপ-এই দুইয়ে মিলে ভেনেজুয়েলায় নতুন করে তৈরি হচ্ছে তীব্র রাজনৈতিক সংকট। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ জর্জ মার্টিন এই প্রতিবেদনে লিখেছেন, ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সেখানে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অযাচিত হস্তক্ষেপ নিয়ে।
গত ২০ শে মে সাধারণ নির্বাচনে জিতে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসেন নিকোলাস মাদুরো। যদিও বিরোধীদের একটা বড় অংশ এই নির্বাচন বয়কট করেছিল। আর পরে যখন সম্প্রতি দেশের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হলেন মাদুরো, শুরু হল রাজনৈতিক অভিসন্ধি। বিরোধী দলের জোয়ান গুইডো দেশের সেনা ও অন্যান্য দলগুলির সমর্থনে নিজে দেশের প্রেসিডেন্ট করার জন্য উদগ্রীব।
স্বভাবতই দেশের মধ্যে শুরু হয় তীব্র রাজনৈতিক সংকট।
জর্জ মার্টিন লিখেছেন, অবৈধভাবে শাসনতন্ত্র পরিবর্তনের এই যে চেষ্টা (coup d’etot), একে মদত দিচ্ছে আমেরিকার মতো সাম্রাজ্যবাদী দেশ। কিছুদিন আগে মার্কিন সেক্রেটারি মাইক পম্পিও ঘোষণা করেন, মাদুরোকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরানো আশু প্রয়োজনীয়। পম্পিওর মতে বিষয়টি ‘matter of urgency’। জর্জ মার্টিন লিখেছেন, এতে একটা বিষয় পরিষ্কার, আমেরিকা জোরপূর্বক শাসনতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটিয়ে ভেনেজুয়েলায় তাদের সাম্রাজ্যবাদী ঘাঁটি গড়তে এতটাই উদগ্রীব যে, সমান্তরাল বা ‘প্যারালাল’ সরকার গড়তে কূটনৈতিক মদত দিচ্ছে সেখানকার বিক্ষুব্ধদের। গোপনে সে দেশের উচ্চপদস্থ সেনা এবং সরকারি কর্মচারীকে ঘুষ দিয়ে কিংবা ব্ল্যাকমেল করে যেন-তেন উপায়ে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলে আন্দোলন করাতে চাইছে। তবে জোয়ান গুইডোকেও প্রেসিডেন্ট করার কোনও গরজ নেই আমেরিকার। তারা যেন সরকার বিরোধী আন্দোলনে মদত দিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টায় ব্যস্ত। এক শ্রেণীর মিডিয়াকেও সরকার বিরোধী খবর প্রকাশ করতে ব্যবহার করছে আমেরিকা। মিডিয়াও বোঝাতে চাইছে, নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাঁকে ছেটে ফেলাই ঠিক কাজ।
মার্টিন লিখেছেন, অন্যদিকে, আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া আবার চাইছে মাদুরো প্রেসিডেন্ট থাকুন। সেখানে আমেরিকা একচেটিয়া রাজত্ব কায়েম করলে তেল আমদানিতে ক্ষতি হবে তাদের। তবে রাশিয়া আপাতত ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি নিয়েছে।
একদিকে, ভেনেজুয়েলার ভগ্ন রাজনৈতিক অবস্থা, তার ওপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিপজ্জনক হস্তক্ষেপ, সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলা আজ গণতন্ত্র, শাসনতন্ত্র, অর্থনীতির এক ভয়াবহ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।

Comments are closed.