নেই মমতা, মায়াবতী, স্ট্যালিন, কেজরিওয়াল, অখিলেশ, উদ্ধব, সনিয়ার ডাকা বিরোধীদের বৈঠক না প্রহসন?

নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি এবং এনপিআর বিরোধী আন্দোলনকে আরও জোরদার করার জন্য কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর ডাকা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বৈঠক কার্যত প্রহসনে পরিণত হল সোমবার। তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বৈঠকে যাবেন না। ছিলেন না বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতী, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, আপেরও কেউ ছিলেন না। গরহাজির ছিলেন তামিলনাড়ুতে কংগ্রেসের সহযোগী ডিএমকে-র সভাপতি এম কে স্ট্যালিন, শিবসেনার নেতারা। কংগ্রেস ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন এনসিপি-র শরদ যাদব, সিপিআই-র ডি রাজা, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি-সহ মোট ১৫ দলের নেতারা। সনিয়ার পাশাপাশি কংগ্রেসের তরফে ছিলেন রাহুল গান্ধী, মনমোহন সিংহ, গুলাম নবি আজাদ প্রমুখ। সনিয়া বৈঠকে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এনআরসি, নাগরিকত্ব আইন, এনপিআর ইত্যাদি করে দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। সমস্ত প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মুক্তচিন্তার পরিসরকে হত্যা করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলিকে ঐকবদ্ধ হতে হবে।
কিন্তু বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হবে কেমন করে? এনআরসি, নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে মমতা অনেক আগে পথে নেমেছেন। তিনিই সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধীদের এক হয়ে লড়াই করার লিখিত প্রস্তাব দেন। সনিয়া, শরদ পাওয়ার-সহ অনেকেই মমতার প্রস্তাবে সহমত হন। বস্তুত, মমতাই বিরোধীদের বৈঠকের কথা বলেছিলেন। কিন্তু গত ৮ জানুয়ারি বাংলায় ধর্মঘটের নামে বামেরা এবং কংগ্রেস তাণ্ডব চালিয়েছে, গুন্ডামি করেছে বলে মমতা অভিযোগ করেন। এই কারণে ক্ষুব্ধ মমতা পরের দিন বিধানসভাতে জানিয়ে দেন, তিনি কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে নেই। দিল্লির বৈঠকে যাবেন না। এনআরসি এবং নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তিনি একাই আন্দোলন করবেন। আঞ্চলিক দলগুলি ডাকলে যাবেন।
বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস রাজস্থানে তাঁদের বিধায়কদের কিনে নিয়েছে। তার প্রতিবাদে তিনি এই বৈঠকে থাকবেন না। ডিএমকে-র আবার গোঁসার কারণ হল, তামিলনাড়ুর স্থানীয় কিছু কংগ্রেস নেতা তাঁদের অপমান করছেন। তাই স্ট্যালিন বৈঠক বয়কট করছেন। শিবসেনা মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস এবং শিবসেনার সঙ্গে জোট করে সরকার গড়লেও বৈঠকে যোগ দেয়নি। সামনেই দিল্লি বিধানসভার ভোট। তার আগে কংগ্রেসের সঙ্গে বেশি মাখামাখি করা ঠিক হবে না বলে বৈঠক বয়কট করেছে আপ-ও। এই অবস্থায় তৃণমূল-সহ ছ’টি বড় দলই যেখানে অনুপস্থিত, সেখানে বিরোধী ঐক্য কতটা হল, সেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। দেশজুড়ে যখন ছাত্র ও যুব সমাজ নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি এবং এনপিআর-এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছে, সাধারণ মানুষ যেখানে এর বিরুদ্ধে পথে নেমেছে, সেখানে বিজেপি বিরোধী বড় দলগুলি কেন একত্রিত হতে পারল না, উঠছে সেই প্রশ্নও।

Comments are closed.