লক্ষ্য ১০০ শতাংশ সাক্ষরতা, বিশ্ব ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে শিক্ষার আলো জ্বালছেন কেমব্রিজের প্রাক্তনী সুনীতা

মাত্র এক বছরের মধ্যে কেরলের এর্নাকুলাম জেলার ১০০ শতাংশ মানুষের সাক্ষরতার হার বিস্মিত করেছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের প্রজেক্ট ম্যানেজার অর্থনীতিবিদ সুনীতা গান্ধীকে। এরপরেই ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে দেশে ফেরেন তিনি। দেশের ১০০ শতাংশ মানুষকে সাক্ষর করার অভিযানে নামেন উত্তর প্রদেশের লখনউয়ের বাসিন্দা সুনীতা গান্ধী। মাত্র ৫ টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে হাজার হাজার মানুষকে অক্ষর পরিচয় করাচ্ছেন কেমব্রিজের প্রাক্তনী সুনীতা।
উত্তর প্রদেশের অখ্যাত কারাউনি গ্রামের ৮০০-র বেশি নিরক্ষর মহিলা এখন সরকারি অফিসে গেলে আর টিপসই দেন না। কলম তুলে নেন। আর এসবই সম্ভব হয়েছে গত ৪ বছর ধরে সুনীতা গান্ধীর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দেবী সংস্থান’ এর লাগাতার প্রয়াসে।
ছোট থেকেই পড়াশোনায় তুখোড় সুনীতা। তাঁর বাবা ডঃ জগদীশ গান্ধীও গণসাক্ষরতায় উল্লেখযোগ্য ছাপ রেখেছেন। লখনউয়ের বিখ্যাত সিটি মন্টেসরি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। ২০১৫ সালে যে স্কুলে পড়ূয়া সংখ্যা ৫০ হাজার ছুঁয়েছিল। নাম উঠেছিল গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। এই পরিবারের মেয়ে সুনীতা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি করেন। তারপর দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের প্রজেক্ট ম্যানেজার ও ইকনমিস্ট হিসাবে কাজ করেছেন। তাঁর শিক্ষাবিষয়ক গবেষণাধর্মী মডেল ১৪ টিরও বেশি দেশে গৃহীত হয়েছে। সেই গবেষণার কাজ করতে গিয়েই একদিন সুনীতা গান্ধীর চোখ আটকায় কেরলের এর্নাকুলামের একটি পরিসংখ্যানে। দেখেন, সেখানে মাত্র ১ বছরের প্রচেষ্টায় ১০০ শতাংশ মানুষ সাক্ষর হয়েছেন। এরপরেই চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন সুনীতা। দেশের ১০০ শতাংশ মানুষকে সাক্ষর করে তোলার লক্ষকে পাথেয় করে ২০১৫ সালে সাক্ষরতার অভিযানে নেমে পড়েন সুনীতা গান্ধী। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রথমে যুক্ত হন ৪০ জন। প্রথম ১৫ ঘন্টার মধ্যেই ৭৯ জন নিরক্ষরকে অক্ষরজ্ঞান করিয়েছিল সুনীতার মস্তিষ্কপ্রসূত শিক্ষা পদ্ধতি। এরপর মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে লখনউ, কানপুর, হায়দরাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালরু এবং মুম্বইয়ের পিছিয়ে পড়া এলাকার মানুষদের সাক্ষর করিয়েছে সুনীতার গ্লোবাল ড্রিমস লিটরেসি মিশন (জিডিএলএম)।
উত্তর প্রদেশের কারাউনি গ্রামকে সুনীতারা বেছে নিয়েছিলেন সেখানকার স্ত্রী সাক্ষরতার হার অত্যন্ত নিম্নগামী বলে। প্রথমে মাত্র ২২ জন মহিলা গ্রামের ১৮০ জনকে শিক্ষিত করে। সেই  ১৮০ জন মহিলাই গ্রামের ৮০০ মহিলাকে লেখাপড়া করতে শিখিয়েছেন। কিন্তু সুনীতা গান্ধীর লক্ষ্য কেবল ৮০০ জনকে সাক্ষর করা নয়। তাঁর কথায়, দেশের প্রত্যেক শিক্ষিত নাগরিক যদি একজন নিরক্ষরকে সাক্ষর করেন, তবে ১০০ শতাংশ সাক্ষরতা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।

Comments are closed.