বিপুল আর্থিক নয়ছয়! টাইমস অফ ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে মোদীকে চিঠি সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর, টাইমিং নিয়ে প্রশ্ন জহর সরকারের

বিভিন্ন ইস্যুতে আলটপকা মন্তব্য করে শিরোনামে উঠে আসা তাঁর কাছে নতুন নয়। কিছুদিন আগেই কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের নাম বদলে ঝাঁসির রানির নামে রাখার দাবি তুলেছিলেন। অর্থনীতির হাল ফেরাতে দিয়েছিলেন টাকায় লক্ষী ঠাকুরের ছবি দেওয়ার দাওয়াইও। এবার বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী পড়লেন দেশের সবচেয়ে বড় মিডিয়া হাউস, টাইমস গ্রুপকে নিয়ে। স্বামীর অভিযোগের নেপথ্যে অনেকেই রাজনীতি দেখছেন।
বিপুল আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট সমস্ত কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে পুরোদস্তুর তদন্ত করা হোক টাইমস অফ ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এই দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠিয়েছেন এই বিতর্কিত বিজেপি সাংসদ। যা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
পি গুরু নামে একটি সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দাবি করা হয়, টাইমস অফ ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আয়কর দফতর, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, সিবিআই, সেবি এবং এসএফআইওকে দিয়ে তদন্তের আবেদন করেছেন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তাঁর অভিযোগ, বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি এবং বেআইনি আর্থিক লেনদেনে জড়িত দেশের বৃহত্তম সংবাদ মাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়া গ্রুপের সিংহভাগ শেয়ারের মালিক সমীর জৈন, বিনীত জৈন এবং তাঁদের মা ইন্দু জৈন। এই প্রসঙ্গে ২৬ পাতার পিটিশন দাখিল করেছেন বিজেপি সাংসদ। সেই পিটিশনের কপি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছেও।
সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই উঠে আসছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন। প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও তথা অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি আমলা জহর সরকার প্রশ্ন তুলেছেন, ইদানীং টাইমস গোষ্ঠী নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি, এনপিআর নিয়ে দেশজুড়ে চলা প্রতিবাদের খবর ফলাও করে প্রকাশ করছে, এই রাগেই কি বিজেপি নেতা তড়িঘড়ি তদন্তের দাবি করে টাইমস গ্রুপকে চাপে ফেলার পথ নিলেন?

বিরোধীদের উপর কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বারবার উঠেছে। মমতা ব্যানার্জি থেকে শুরু করে শরদ পাওয়ার, বা কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম, দেশের প্রত্যেক বিরোধী নেতার মুখেই এই অভিযোগ বহুশ্রুত। প্রসঙ্গত জেএনইউ হিংসার ক্ষেত্রেও আহত হওয়া পড়ুয়াদের বিরুদ্ধেই প্রথমে মামলা দায়ের করেছিল দিল্লি পুলিশ। এই প্রেক্ষিতে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সংবাদমাধ্যম টাইমস গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্তের আর্জি জানালেন এক বিজেপি নেতা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, যদি টাইমস গ্রুপ কোনও ধরনের অনৈতিকতায় জড়িয়ে থাকে, তাহলে তদন্ত হোক পুরোদমে। কিন্তু অভিযোগ করার জন্য এই সময় কেন বেছে নিলেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী? যখন দেশ সিএএ, এনআরসি, এনপিআর বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে শাসকের পেশি শক্তির প্রদর্শন, তখন সেই সংবাদ অবশ্যম্ভাবীভাবে উঠে এসেছে দেশের সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্র দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার পাতায়। তাই কি চাপে পড়ে এখন টাইমস গ্রুপের উপর কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দিয়ে শায়েস্তা করার চেষ্টা করছেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মতো বিজেপির নেতারা?

Comments are closed.