আমাদের আর থাকার দরকার কী? দেশ ছেড়ে চলে গেলেই হয়, মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির

বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলির উদ্দেশে শীর্ষ আদালতের রায় প্রসঙ্গে কেন্দ্রের এক অফিসারের চিঠি ঘিরে তোলপাড় সুপ্রিম কোর্ট। রাগে গজরাতে গজরাতে বিচারপতি অরুণ মিশ্র বললেন, তা হলে আমরা সুপ্রিম কোর্টের কাজ গুটিয়ে ফেলি? আমাদের আর থাকার দরকার কী? দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো। সুপ্রিম কোর্ট টেলিকম মন্ত্রকের ওই অফিসারকে অবিলম্বে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করতে বলা হয়েছে। আদালত অবমাননার নোটিসও জারি করা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
গত অক্টোবর মাসে ভোডাফোন, এয়ারটেল-সহ বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলিকে অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ (এডিআর) বাবদ কেন্দ্রকে ৯২ হাজার কোটি টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সম্প্রতি কেন্দ্রের এক ‘ডেস্ক অফিসার’ অ্যাটর্নি জেনারেল সহ একাধিক সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখে জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মাফিক এই পাওনা অর্থ না দিলে টেলিকম সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কোনও দমনমূলক পদক্ষেপ করা হবে না। শুক্রবার এই চিঠি ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় দেশের শীর্ষ আদালতে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্র সরকার পক্ষের উদ্দেশে মন্তব্য করেন, আমরা সুপ্রিম কোর্ট গুটিয়ে ফেলি? কেন্দ্রের এক ডেস্ক অফিসার নিজেকে বিচারপতি মনে করে আমাদের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে দিচ্ছেন? সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহেতার কাছে সুপ্রিম কোর্ট জানতে চায়, কে এই ডেস্ক অফিসার? কীভাবে তিনি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের উপর খবরদারি করেন?
নিউ দিল্লির সঞ্চার ভবনে টেলিকম মন্ত্রকের অফিস থেকে গত জানুয়ারি মাসে লেখা ওই চিঠির বিষয় ছিল, এজিআর পাওনা নিয়ে টেলিকম সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কোনও দমনমূলক পদক্ষেপ করা হবে না। মন্দার দেশপাণ্ডে নামে ওই ডেস্ক অফিসারের পাঠানো এই চিঠি ঘিরে ঝড় ওঠে সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, অর্থহীন সব কাজকর্ম শুরু হয়েছে। দেশে আর আইন-শৃঙ্খলা বলে নেই। এ দেশে না থাকাটাই বোধহয় ভালো, বরং এই দেশ ত্যাগ করাই বেশি ভালো হবে। মনে হচ্ছে, এই আদালতে আর আমার কাজ করার প্রয়োজন নেই। বিচারপতি জানান, যা হয়েছে তা তাঁকে ভয়ানক পীড়া দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট ওই ডেস্ক অফিসারকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রকে। বিচারপতি মিশ্র বলেন, বিচার-ব্যবস্থায় আর কী বাকি আছে? দেশের এই ব্যবস্থার মধ্যে কীভাবে কাজ করব আমি ভেবে পাচ্ছি না! এই চিঠির নেপথ্যে কোনও  বড় হাত রয়েছে বলেও মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই অফিসারের এই কীর্তির পিছনে টাকা এবং ক্ষমতার প্রভাব থাকাও অস্বাভাবিক মনে করছে না আদালত। সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে, আদালত অবমাননার দায়ে তাঁর জেলযাত্রাও হতে পারে। পাশাপাশি যে টেলিকম সংস্থাগুলি এজিআর মেটায়নি তাদেরও আদালত অবমাননার নোটিস দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

Comments are closed.