পরিসংখ্যান তুলে ধরে মোদীর দাবি খারিজ ডেরেকের, বুধবার রাজনৈতিক জবাব দেবেন মমতা

মোদীর প্রতিটি অভিযোগের ধরে ধরে পালটা জবাব ডেরেকের

২২ ফেব্রুয়ারি হুগলির ডানলপ ময়দানের জনসভা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ করেন প্ৰধানমন্ত্ৰী। পরিসংখ্যান তুলে ধরে মোদীর আনা অভিযোগের জবাব দিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা করার জন্য আদালত গিয়ে মামলা করতে হয়।

ডেরেকের জবাব- ২০২০ তে দূর্গাপূজা করার জন্য বারোয়ারি ক্লাবগুলিকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। এর আগেও ২৫ হাজার টাকা করে ক্লাবগুলিকে দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে বলে তিনি জানান।এমনকী কোভিড পরিস্থিতিতে পুজোর জন্য ক্লাবগুলিকে ইলেকট্রিক বিলেও ৫০% ছাড় দেওয়া হয়।

সোমবারের সভায় মোদী বলেছিলেন, তৃণমূল বাংলার উন্নয়নের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাল্টা তৃণমূল সাংসদ তথ্য দিয়ে দাবি করেন, গত দশ বছরে রাজ্যের জিডিপি ৪.৫১ লাখ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৬.৯ লাখ কোটি টাকা। শতাংশের হিসেবে যা প্রায় ৫৩%। কৃষি ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও দশ বছরে রাজ্যের বিপুল উন্নতি হয়েছে বলে দাবি তৃণমূল সাংসদের।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, পিএম কিষাণ নিধির সুবিধা থেকে মমতা সরকার বাংলার কৃষকদের বঞ্চিত করছে।

ডেরেকের দাবি, রাজ্য সরকারের প্রকল্প অনুযায়ী কৃষকদের বছরে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। ডেরেক বলেন, ২.৫ লক্ষ কৃষকের নাম পিএম কিষান নিধির জন্য পাঠানো হলেও কেন্দ্র এখনও কোনও টাকা পাঠায়নি।

প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারতের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, ডেরেক বলেন, আয়ুষ্মান ভারতের অনেক আগে থেকেই রাজ্যবাসী স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি বলেন আয়ুষ্মান ভারতের জন্য যেখানে ৪০% খরচ রাজ্যকে বহন করতে হয়, সেখানে স্বাস্থ্যসাথীর সমস্ত খরচই রাজ্যের।

প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন পানীয় জল প্রকল্পের জন্য ১৭ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্র রাজ্যকে দিয়েছিলো, ট্যুইটে ডেরেকের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর জল স্বপ্ন প্রকল্প অনুযায়ী রাজ্যে ইতিমধ্যেই ৫৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের ফলে ২ কোটি পরিবার সুবিধা পেয়েছেন।

 

প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ- একটা সময় বাংলাকে শিল্পের রাজধানী বলা হতো। অন্যান্য রাজ্য থেকে প্রচুর মানুষ আসতেন বাংলায় কাজ করতে। অথচ এখন বাংলার মানুষকে কাজের জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে!

ডেরেকের দাবি- ২০১২ সালে বাংলায় স্বল্প বিনিয়োগের ব্যবসার সংখ্যা ছিল ৩৪.৬ লক্ষ বর্তমানে যার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮৯ লক্ষ। ভারতে অন্যতম বৃহৎ আইটি হাব গড়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে।

[আরও পড়ুন- গো ব্যাক স্লোগান, কালো পতাকায় দিলীপকে দার্জিলিং-এ “স্বাগত” মোর্চার]

প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ- পাট শিল্প এবং আলু চাষের বেহাল অবস্থা।

ডেরেকের দাবি- পশ্চিমবঙ্গ শ্রম দফতরের উদ্যোগে জুট সংক্রান্ত নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের যুবকদের। পাশাপাশি রেশন সরবরাহের জন্য রাজ্যের জুট মিলগুলি থেকে ২ কোটি জুট ব্যাগ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ১০০০ হেক্টর জমিকে বাছা হয়েছে রফতানি যোগ্য আলু চাষের জন্য। ৩০ লাখ মেট্রিক টন আলু রাজ্য রফতানি করতে পারে। লকডাউনের সময় যেখানে কেন্দ্র আলুর মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছিল, রাজ্য সেখানে আলু চাষিদের কাছ থেকে ২৫ টাকা প্রতি কেজি আলুর দাম ঠিক করে।

প্ৰধানমন্ত্রীর দাবি- কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে রেলের পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নিয়েছে।

ডেরেকের দাবি- মমতা ব্যানার্জি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দমদম থেকে দক্ষিণশ্বরের মেট্রো পরিষেবার ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। প্রকল্পের প্রথম দফার কাজ ২০১৩ সালে শুরু হয়। সাত বছর ধরে কেন্দ্র রাজ্যের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দিচ্ছেন না। মমতার প্রস্তাবিত ৩১ টি প্রকল্পের জন্য কোনও অর্থ দিচ্ছে না কেন্দ্রের সরকার, বলে অভিযোগ ডেরেকের।

মোদী দাবি করেছিলেন, বিজেপির শাসনকালে দক্ষিনেশ্বর থেকে ব্যারাকপুর সমেত একাধিক রেল রুটের সূচনা হচ্ছে। তৃণমূল সাংসদের দাবি এই প্রকল্পের জন্য রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা ব্যানার্জি ২৫ ফেব্র্রুয়ারি ২০১১ সালে অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন।

সবমিলিয়ে ডানলপের সভা থেকে মোদীর করা প্রতিটি আক্রমণের জবাব দেওয়া শুরু করল তৃণমূল। মঙ্গলবার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মোদীর অভিযোগ খারিজ করলেন ডেরেক। বুধবার সেই ডানলপ ময়দান থেকেই নরেন্দ্র মোদীকে রাজনৈতিক জবাব দেবেন মমতা ব্যানার্জি। তার কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেল।

Comments are closed.