লোকসভার নিরিখে নিজের বিধানসভায় পিছিয়ে ১৮ জন মন্ত্রী, গৌতম দেব, জ্যোতিপ্রিয়, শান্তিরাম, সুজিত বসু সহ অনেকেই বেসামাল গেরুয়া ঝড়ে

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে বাংলায় অভূতপূর্ব ফল করেছে বিজেপি। গেরুয়া দাপটে উত্তরবঙ্গের সব আসনে হেরেছে তৃণমূল। বিজেপির দাপটে দক্ষিণবঙ্গেও ঘর ভেঙেছে রাজ্যে শাসক দলের। আর লোকসভা ভোটের এই ধাক্কায় রীতিমতো বেসামাল রাজ্যের একাধিক হেভিওয়েট মন্ত্রী।
লোকসভা ভোটের ফলের বিধানসভাওয়াড়ি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের ৪৪ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১৮ জন হেভিওয়েট মন্ত্রী নিজের নিজের বিধানসভায় বিজেপির থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। তার মধ্যে অনেকেই পিছিয়ে রয়েছেন বহু ভোটে, যার জেরে রীতিমতো ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা রেজাল্টের নিরিখে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছেন ২৬ জন মন্ত্রী।
লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে রাজ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা প্রাক্তন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী এবং বর্তমানে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের। ২০১১ সালে পরিবর্তনের ভোটে গৌতম দেব ছিলেন উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের প্রধান মুখ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় গৌতম দেবকে। তাঁকে দেওয়া হয় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১৬ সালে তিনি হন পর্যটনমন্ত্রী। এবার লোকসভায় নিজের কেন্দ্র ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে গৌতম দেব পিছিয়ে পড়েছেন ৮৬,১১৭ ভোটে। এই কেন্দ্রটি জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, যে কেন্দ্রে জয় পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়।
বিধানসভায় পিছিয়ে পড়ার নিরিখে গৌতম দেবের ঠিক পরেই রয়েছেন কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের আরেক মন্ত্রী অবনীমোহন জোয়ারদার। তিনি কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে পিছিয়ে রয়েছেন ৫৩,৫৫১ ভোটে। যদিও কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনটি নিজের দখলেই রেখেছে তৃণমূল। ওই কেন্দ্র থেকে জয় পেয়েছেন মহুয়া মৈত্র।
পুরুলিয়ার বলরামপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের আরেক মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোও নিজের কেন্দ্রে প্রবল চাপে। তিনি এই মুহূর্তে পিছিয়ে ৩৫,৪৬৯ ভোটে। নিজের কেন্দ্রে পিছিয়ে থাকার তালিকায় রয়েছেন চাকদার বিধায়ক তথা মন্ত্রী রত্না ঘোষও। তিনি পিছিয়ে ২৯,৯৮৭ ভোটে। তার ঠিক পরেই রয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনের বিধায়ক এবং রাজ্যের মন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা। তিনি পিছিয়ে ২৩,২৫৪ ভোটে। আর মন্ত্রীদের মধ্যে নিজের কেন্দ্রে সবচেয়ে কম ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছেন রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। এই কেন্দ্রে পূর্ণেন্দু বসু পিছিয়ে রয়েছেন মাত্র ৭৪৩ ভোটে। রাজারহাট-গোপালপুর আসনটি দমদম লোকসভার অন্তর্গত। এই লোকসভায় এবারও জয় পেয়েছেন তৃণমূলের সৌগত রায়।
কলকাতার মন্ত্রীদের মধ্যে পিছিয়ে রয়েছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং শশী পাঁজা। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার অন্তর্গত রাসবিহারী কেন্দ্রে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় পিছিয়ে রয়েছেন ৫,৪২১ ভোটে। অন্যদিকে, উত্তর কলকাতা লোকসভার অন্তর্গত শ্যামপুকুর বিধানসভা থেকে পিছিয়ে রয়েছেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী শশী পাঁজা। তাঁর পিছিয়ে থাকার ব্যবধান ২,১৭০।
নিজের কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়া মোট ১৮ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১২ জনই পিছিয়ে রয়েছেন ১০ হাজারের বেশি ভোটে। তার মধ্যে যেমন রয়েছেন হাবড়ার বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (১৯,৪৫২ ভোটে পিছিয়ে), তেমনই রয়েছেন বিধাননগরের বিধায়ক তথা দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু (১৮,৯১৬ ভোটে পিছিয়ে)। আসানসোল উত্তরের বিধায়ক তথা আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক (২০,৩১৪ ভোটে পিছিয়ে), নাটাবাড়ির বিধায়ক তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ (১৮,৫২৫ ভোটে পিছিয়ে) সহ আরও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পিছিয়ে রয়েছেন নিজের বিধানসভায়।
লোকসভা ফলের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই সংগঠন এবং মন্ত্রিসভায় কিছু রদবদল করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাদের এখন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন বিধানসভা ভোটের জন্য। যদিও, মন্ত্রিসভায় আরও কিছু রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছ বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।

Comments are closed.