মধ্য প্রদেশের অরণ্যে আদিবাসীদের ওপর কাশ্মীরের ধাঁচে পেলেট গান বা ছররা বন্দুক থেকে গুলি, জখম ৪

কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর পাথরবৃষ্টি রুখতে ব্যবহার হয় পেলেট গান কিংবা ছররা বন্দুক। ছররার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত যুবকদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছে। এবার মধ্য প্রদেশের বুরহানপুর জেলার সিওয়াল গ্রামে একটি উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে আদিবাসীদের উপর একই ধরনের গুলি ব্যবহারের অভিযোগ উঠল বন দফতরের বিরুদ্ধে। ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন অন্তত ৪ জন আদিবাসী মানুষ। বন দফতর সূত্রে দাবি, গ্রামবাসীদের ছোঁড়া ইটের ঘায়ে জখম হয়েছেন ৩ বন কর্মী।
ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার সকালে। বন দফতরের অন্তত ৫০ জন কর্মী বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাজির হন বুরহানপুরের নেপানগর ব্লকের সিওয়াল গ্রামে। তাঁদের সঙ্গে ছিল বাড়ি ভাঙার যন্ত্রপাতি। অবৈধভাবে বনভূমিতে গ্রাম তৈরি করা হয়েছে, এই অভিযোগে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হতেই গোলমাল শুরু হয়। মধ্য প্রদেশে আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মী মাধুরী কে জানিয়েছেন, বেপরোয়া বন কর্মীরা বাড়ি ভাঙার যন্ত্র বা জেসিবি নিয়ে সদ্য ফসল বোনা খেতের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। গ্রামবাসীরা তাঁদের বাধা দেন। কিন্তু বাধা সরিয়ে ফসল নষ্ট করেই এগোতে থাকে বন দফতরের জেসিবি। গ্রামবাসীরা মাটিতে শুয়ে পড়ে জেসিবি বন্ধের দাবি জানাতে থাকেন। অভিযোগ, সেই সময়ই বন দফতরের কর্মীরা গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে পেলেট গান চালাতে শুরু করেন।
গুলি লেগে আহত হন অন্তত ৪ জন। সিওয়ালের আদিবাসী কৃষক গোখর সিংহ বাদোলের তলপেট, ঘাড় ও বুকে পেলেট গানের গুলি এসে লাগে। নিজের জমিতেই লুটিয়ে পড়েন গোখর সিংহ বাদোল। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করলেও উপস্থিত বন কর্তা এবং পুলিশ তাতে কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত মাঝরাত পেরিয়ে বুরহানপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গোখর সিংহ বাদোলকে। কিন্তু ডাক্তাররা জানান, ঘাড়ের গুলি বের করার পরিকাঠামো নেই। তখন তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় ইন্দোরের এমওয়াই হাসপাতালে। বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় সেখানেই ভর্তি গোখর সিংহ। বাকি তিনজনের গুলি লাগে পায়ে, হাতে ও বুকে।
পুলিশের দাবি, সকালে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হতেই বন দফতরের কর্তাদের লক্ষ্য করে পাথর বৃষ্টি শুরু করেন অন্তত ১৫০ গ্রামবাসী। তাঁদের নিরস্ত করতেই বন কর্মীরা পাল্টা ছররা গুলি ছুঁড়েছে।
এবছরের ১৩ ই ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে পাট্টার আবেদন খারিজ হওয়া পরিবারগুলিকে উৎখাত করতে হবে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশের ফলে ১০ লক্ষের বেশি আদিবাসী ও অন্যান্য বনবাসী পরিবারের উচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। পরবর্তীতে অবশ্য এই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত। পয়লা মে, মধ্য প্রদেশ সরকার পাট্টার আবেদনের পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মর্মে সমস্ত জেলা প্রশাসন এবং বন দফতরের কাছে নির্দেশিকা যায়, উচ্ছেদের কাজ স্থগিত রাখার জন্য। মধ্য প্রদেশে আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মী মাধুরীর অভিযোগ, বন দফতর সরকারি সেই নির্দেশিকাকে অমান্য করে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর চেষ্টা করেছে। তা প্রতিরোধ করেছেন গ্রামবাসীরা।
ঘটনায় ৩ অজ্ঞাতপরিচয় বন কর্তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। পাশাপাশি ১৫০ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। যদিও সিওয়ালের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন আধিকারিকদের নাম জানানো সত্ত্বেও এফআইআরে নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতপরিচয় লেখা হয়েছে।

Comments are closed.