উচ্চবর্ণের ফতোয়ায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ হল ৪০ দলিত বাচ্চার, মর্মান্তিক ঘটনা তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে

গ্রীষ্মের ছুটি শেষ। একে একে খুলছে স্কুল। অনেকদিন পর আবার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে কচিকাঁচারা। কিন্তু সেই সময়ই স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল তামিলনাড়ুর মাদুরাই জেলার এস ভালায়াপাত্তি গ্রামের ৪০ দলিত শিশুর। কারণ, গ্রামের উচ্চ বর্ণের ফতোয়া। যে ফতোয়া বলছে, উচ্চবর্ণের ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে পড়াশোনা করতে পারবে না দলিত পরিবারের সন্তানরা। তাই স্কুল যাওয়া বন্ধ করে বাড়িতেই বন্দি থাকতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামের দলিত পড়ুয়ারা।
এস ভালায়াপাত্তি গ্রামে প্রভাবশালী উচ্চবর্ণের মুথারাইয়াররা। অভিযোগ, মুথারাইয়ার সম্প্রদায়ের তরফে সম্প্রতি হুমকি দেওয়া হয়েছে, যে স্কুলে তাঁদের সন্তানরা পড়েন, সেখানে দলিত বাচ্চার পাঠানো যাবে না। এই নির্দেশ অমান্য করে দলিতরা সেখানে পড়তে গেলে পরিণতি অত্যন্ত খারাপ হবে। কয়েকজন এই হুমকি অগ্রাহ্য করে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোয়, উচ্চবর্ণের পড়ুয়ারা বেধড়ক মারধর করে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ।
তামিলনাড়ুর এস ভালায়াপাত্তি গ্রামে ৫৫ টি দলিত পরিবার বাস করে আর উচ্চবর্ণের মুথারিয়ার সম্প্রদায়ের ২০০ টি পরিবার।
ঘটনার সূত্রপাত, এ বছর এপ্রিলে। গ্রামের একটি মন্দিরে আচমকা প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যায় দলিতদের। যুগ যুগ ধরে গ্রামের সকলে যে মন্দিরে পুজো দিতেন, সেখানে রাতারাতি দলিত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল দলিত পরিবারগুলো। কিন্তু আজ পর্যন্ত মন্দিরে প্রবেশাধিকার ফিরে পাননি দলিতরা। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার স্কুলে গিয়ে উচ্চবর্ণের ছাত্রদের পাশে বসে পড়া বন্ধ হয়ে গেল গ্রামের দলিতদের।
আমার ১৩ বছরের ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়েছিলাম। সে যখন বাড়ি ফিরল, দেখি সারা মুখে রক্ত, আহত। বলছেন গ্রামেরই দলিত পরিবারের এক গৃহবধূ। মুথারাইয়ার সম্প্রদায়ের ছাত্ররা স্কুলের মধ্যেই দলিত পড়ুয়াদের হেনস্থা করছে, মারধর করছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এই অবস্থায় ছেলেকে স্কুলে পাঠাবো কী করে? প্রশ্ন, বছর ৩৭ এর আন্নালক্ষ্মীর। অগত্যা চলছে গ্রামের সরকারি স্কুল ছেড়ে দূরে স্কুলের খোঁজ। পড়াশোনা না করিয়ে তো আর ছেলে মেয়েদের ঘরে বসিয়ে রাখতে পারব না, তাই দূরে কোনও স্কুলের খোঁজ করছি, বলছেন আন্নালক্ষ্মী। পাশাপাশি সবার পক্ষে যে দূরের বেসরকারি স্কুলে বাচ্চাদের পাঠানোর সামর্থ হবে না, তাও স্বীকার করে নিচ্ছেন তিনি।
দলিতদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানাচ্ছে, মন্দিরে দলিতদের প্রবেশাধিকার কেড়ে নিয়েই খুশি হয়নি উচ্চবর্ণের মানুষরা। ক্রমশ দলিতদের গ্রামের পুকুর, রাস্তা ব্যবহার করা এবং রেশন তোলাও বন্ধ হয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়, দলিতদের কোণঠাসা করার শেষ চেষ্টা হিসেবে ৮ ই জুন উচ্চবর্ণের হিন্দুরা হামলা চালায় গ্রামের দলিত মহল্লাতে। হামলায় ৪ জন গুরুতরভাবে আহত হন, ২২ টি বাড়িতে ভাঙচুর এবং তারপর আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পোড়ানো হয় ৫ টি বাইক। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির দাবি, হামলার ঠিক আগে গ্রামের মুথারিয়ার সম্প্রদায়ের লোকেরা জড়ো হয়েছিলেন, একমাত্র সরকারি স্কুলের মাঠে, সেখানেই হামলার নীল নকশা ঠিক হয়। যে স্কুলে প্রবেশাধিকার নেই দলিত পড়ুয়াদের।

Comments are closed.