উত্তর-পূর্বে লাগু নয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, তাও কেন জ্বলছে অসম-ত্রিপুরা?

রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। এবার তার আইনে পরিণত হওয়া কেবল রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের সাক্ষরের অপেক্ষা। রাজ্যসভায় যখন বিরোধীদের হাজার যুক্তি সত্ত্বেও স্রেফ সংখ্যার জোরে পাশ হচ্ছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, তখন আগুন জ্বলছে দেশের উত্তর-পূর্বাংশে (Assam Protest)। পরিস্থিতি এমনই যে সেনা পর্যন্ত নামাতে হয়েছে প্রশাসনকে। কিন্তু কেন এই বিক্ষোভ?
সংসদের দুই কক্ষেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, ষষ্ঠ তফশিলে অন্তর্ভুক্ত এলাকা এবং ইনার লাইন পারমিটের আওতায় থাকা এলাকায় লাগু হবে না নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অংশ এর ফলে বাদ পড়েছে। কিন্তু তাও কেন জ্বলছে অসম, ত্রিপুরা? এই অংশের মানুষের ক্ষোভের কারণ কী?
জ্বলন্ত অসম, ত্রিপুরার ক্ষোভের কারণ খুঁজতে যেতে হবে বেশ খানিকটা পিছনে। উত্তর-পূর্বের জনজাতির দীর্ঘদিনের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে আসা বাংলাভাষী মানুষরা তাদের বিষয় সম্পত্তির উপর কব্জা করছে। ফলে ওই অঞ্চলের ভূমিপুত্ররা বঞ্চিত হচ্ছেন। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলা ভাষার আগ্রাসনের ফলে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ছে অহমীয়া সহ বিভিন্ন জনজাতির নিজস্ব ভাষা। এই প্রেক্ষিতেই ভূমিপুত্রদের দাবি ছিল, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিদেশ থেকে আসা মানুষের অসম সহ উত্তর-পূর্বে কোনও স্থান নেই।
কিন্তু লোকসভা এবং পরবর্তীতে রাজ্যসভায় পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে এমন কোনও সংস্থান রাখা হয়নি। বরং সেখানে বলা হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে। যেখানে অ-মুসলিম হলে এবং কিছু শর্ত পূরণ করলেই ভারতের নাগরিকত্ব আদায় করার পথ প্রশস্ত হয়েছে বলে মনে করছেন অসম (Assam Protest), ত্রিপুরার আন্দোলনকারীরা। এতে আখেরে উত্তর-পূর্বের জনজাতির কোনও সুবিধা তো হবেই না উল্টে সমস্যা বাড়বে বহুগুণ। আন্দোলনকারীদের দাবি, ধর্ম নয় ভাষার ভিত্তিতে করা হোক নাগরিক সংশোধনী। কিন্তু সেই দাবি মানেনি কেন্দ্রীয় সরকার। আন্দোলনকারীদের দাবি, উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন অংশকে এই বিলের বাইরে রাখা হয়েছে। ফলে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ এবার যে অংশ ইনার লাইন পারমিট এবং ষষ্ঠ তফশিলের বাইরে রয়ে গেল, তাতে ভিড় জমাবেন এবং নয়া আইনের ফলে তাঁরা নাগরিকত্বও পেয়ে যাবেন। তাঁদের দাবি, এর ফলে আদত বাসিন্দাদের স্বার্থহানি হবে।
এর আগেও একই দাবিতে উত্তপ্ত হয়েছিল অসম সহ উত্তর পূর্ব। অল অসম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (আসু) লাগাতার আন্দোলনের হিংসাত্মক প্রভাব ছড়িয়েছিল সারা দেশেই। অসম অ্যাকর্ডের মাধ্যমে সেই ক্ষোভ প্রশমিত হলেও, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে তা ফের প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, অসমের বিদেশি খেদাও (পক্ষান্তরে বাঙালি খেদাও) আন্দোলন যে সংগঠিত শক্তির মাধ্যমে ব্যাপক জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল, এবার তা উধাও। কোনও সংগঠিত শক্তির ডাকে এবারের আন্দোলনে নামেননি অসমবাসী। মূলত পড়ুয়ারা কোনও নির্দিষ্ট পতাকা ছাড়াই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করছেন। আসু আছে ঠিকই কিন্তু চালিকাশক্তি হিসেবে তাকে বিবেচনা করা যায় না। একইসঙ্গে বিভিন্ন সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির মাধ্যমে চলছে ধরনা, বিক্ষোভ। ফলে আগামী দিনে এই আন্দোলন কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার।

Comments are closed.