উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ডে নির্যাতিতার গাড়িতে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা, মৃত ২, অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিবারের

উত্তর প্রদেশের উন্নাওয়ে ধর্ষণ কাণ্ডে নিগৃহীতা তরুণী এবং তাঁর পরিবার রবিবার মুখোমুখি হলেন ভয়ঙ্কর পথ দুর্ঘটনার। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২ জনের, নিগৃহীতা তরুণী গুরুতর জখম। অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তরুণীর মা।
উত্তর প্রদেশের জেলবন্দি বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা তরুণীর গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কার ঘটনায় সামনে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। রবিবারের দুর্ঘটনায় তরুণীর কাকিমা ও মাসির মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন তাঁদের আইনজীবী মহেন্দ্র সিংহ চৌহ্বান। লখনউয়ের ট্রমা সেন্টারে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে তরুণী নিজে।
জানা গিয়েছে, যে ট্রাকটি তরুণীদের গাড়িতে মুখোমুখি ধাক্কা মেরে পালায়, তার নম্বর প্লেটে কালি লেপা ছিল। আরও চমকে যাওয়ার মতো ব্যাপার হল, আদালতের নির্দেশে যে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীর ২৪ ঘণ্টা তরুণীর সঙ্গে থাকার কথা, তিনি দুর্ঘটনার দিন কাজেই আসেননি।
ঘাতক ট্রাকটির নম্বর প্লেটের শেষ কয়েকটি নম্বরে কালি লেপা ছিল কেন, এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠেছে। তাহলে কি পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালানোর চেষ্টাতেই ইচ্ছাকৃতভাবে নম্বর প্লেটে গ্রিজ লেপা হয়েছে? এই প্রশ্ন উঠছে। যদিও পুলিশের একাংশে এই ঘটনার একটি ভিন্ন ব্যাখ্যাও আছে, তা হল, এলাকায় প্রায় সমস্ত ট্রাকই মাল ওভারলোড করে। রাস্তায় পুলিশের চেকিং থেকে বাঁচতে অনেক ট্রাক নম্বর প্লেটে কালি লেপে পালায়। ঘাতক ট্রাকটিও তেমনই কিছু করে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। লখনউ জোনের এডিজি রাজীব কৃষ্ণন বলছেন, ঘাতক ট্রাকটি সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ট্রাকের নম্বর প্লেটে কালি লেপা ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
নিগৃহীতা তরুণীকে সর্বক্ষণ নিরাপত্তা দিতে আদালত পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল। কোর্টের নির্দেশেই ৩ জন সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মীর অভিযোগকারিণীর সঙ্গে থাকার কথা। কিন্তু রবিবার তাঁরা কেউ ছিলেন না। মাঝপথে বেপরোয়া ট্রাক ধাক্কা মারে তাঁদের গাড়িতে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অভিযোগকারিণীর কাকিমা ও মাসির। গুরুতর আহত আইনজীবী। তরুণীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
উন্নাওয়ের বাঙ্গারমউ বিধানসভা থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন কুলদীপ সিংহ সেঙ্গার। অভিযোগ, ২০১৭ র ৪ ঠা জুন চাকরি চাইতে বিধায়কের কাছে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন উন্নাওয়ের ওই তরুণী। কিন্তু বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে মানা করে দেয় পুলিশ। শেষে মুখ্যমন্ত্রী যোগীর লখনউয়ের বাসভবনের সামনে তরুণীকে নিয়ে তাঁর মা আত্মহত্যা করতে গেলে, গ্রেফতার করা হয় বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারকে। অভিযোগ, দাদার গ্রেফতারির প্রতিশোধ নিতে কুলদীপের ভাই তরুণীর বাবাকে প্রথমে গাছে বেঁধে বেধড়ক পেটায়, তারপর পুলিশের হাতে তুলে দেয়। হেফাজতেই মৃত্যু হয় অভিযোগকারী তরুণীর বাবার। এখানেই শেষ নয়, তরুণীর কাকা মহেশকে একটি মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। এখনও রায়বেরেলি জেলেই বন্দি মহেশ। তাঁর সঙ্গে দেখা করতেই রবিবার বেরিয়েছিলেন তরুণী ও অন্যান্যরা। মাঝপথে দুর্ঘটনা।

Comments are closed.