রাজস্থানে বিজেপির হারের প্রধান কারণ নেতৃত্ব এবং মন্ত্রীদের অযোগ্যতা, মানুষ সেখানে নতুন মুখ চাইছেঃ আরএসএস

রাজস্থানে বিজেপির হারের রাজ্য নেতৃত্ব এবং মন্ত্রীদের অযোগ্যতাকে অন্যতম কারণ বলে দায়ী করল আর এসএস। আরএসএসের ইংরেজি মুখপত্র অর্গানাইজারে রাজস্থানে পদ্ম শিবিরের হারের কারণ পর্যালোচনা করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বিজেপির  হারের সম্ভাব্য কারণগুলির পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরের প্রাপ্ত ভোটের একটা হিসাবও দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনের শুরুতেই লেখা হয়েছে, ১৯৯ টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৯৯ টি ও বিজেপি ৭৩ টি আসনে জিতেছে। কংগ্রেস জয়ী হলেও বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষায় তারা যে আসন পাবে বলে বলা হয়েছিল, তাদের আসন তার থেকে কমেছে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হিসেবে, এই নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছে ১ কোটি ৩৯ লক্ষ ৩৫ হাজার ২০১ টি ভোট যা প্রদত্ত ভোটের ৩৯.৩ শতাংশ। অন্যদিকে, বিজেপি পেয়েছে ১ কোটি ৩৭ লক্ষ, ৫৭ হাজার ৫০২ টি ভোট, যা শতাংশের হিসাবে ৩৮.৮। সংখ্যার হিসাবে বিজেপি কংগ্রেসের তুলনায় ১.৭০ লক্ষ ভোট কম পেলেও, শতাংশের দিক থেকে দেখলে কংগ্রেস এবং বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের ফারাক মাত্র .৫০ শতাংশের। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, প্রদত্ত ভোটের ১.৩ শতাংশ (৪ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭৮১) ভোট পড়েছে নোটায় এবং বহু কেন্দ্রে জয়ী প্রার্থির জয়ের ব্যবধানের থেকেও নোটাতে ভোট বেশি পড়েছে। পাশাপাশি, গতবারের তুলনায় ১.৪৬ শতাংশ ভোট এবারের নির্বাচনে কম পড়েছে। অর্থাৎ ইঙ্গিত স্পষ্ট, ভোট যদি বেশি পড়তো এবং নোটায় যদি ভোট এত বেশি না পড়তো তবে ফলাফল অন্য রকম হলেও হতে পারত বলে মনে করছে আরএসএস।
এরপর প্রতিবেদনে বিজেপির রাজস্থানে এই হারের সম্ভাব্য কিছু কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে লেখা হয়েছে, পোখরান বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী মহন্ত প্রতাপ পুরিকে মাত্র ৮৭২ ভোটে হারিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী সালেহ মহম্মদ। সেখানে নোটায় ভোট পড়েছে ১১২১ টি, অর্থাৎ কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের ব্যবধানের থেকেও মানুষ নোটায় বেশি ভোট দিয়েছেন। কিন্তু কেন এখানে  হারতে হল জনপ্রিয় বিজেপি প্রার্থী মহন্ত প্রতাপ পুরিকে? অর্গানাইজারের প্রতিবেদন বলছে, ভোটের আগে ওখানে গুজব ছড়িয়েছিল, তফশিলি জাতি, উপযাতির লোকেদের মঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না, তাই কিছু মানুষ বিজেপিকে ভোট না দিয়ে হয়তো নোটাকেই বেছে নেয়। তাই এই ফলাফল ওই কেন্দ্রে।
আরও লেখা হয়েছে, মন্ত্রীদের খারাপ পারফরমেন্সও দায়ী এই পরাজয়ের জন্য। যার প্রমাণ রাজ্যের ২০ জন মন্ত্রীকেই হারতে হয়েছে এই নির্বাচনে। সেখাওয়াতি অঞ্চলে বিজেপির খারাপ ফলের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছরে এখানকার রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হয়েছে, বেড়েছে বেকারের সংখ্যা। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ রাজ্যের কোনও নেতা, মন্ত্রী তাঁদের সমস্যার কথা শুনতে আসেননি।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, শিকার, চুরু, ঝুনঝুনুর মতো এলাকাগুলিতে কাজ না করা সত্বেও পুরনো বিধায়কদেরই ফের টিকিট দেয় বিজেপি। যার ফল হাতেনাতে পেয়েছে তারা। এই তিনটি কেন্দ্রই হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। বলা হয়েছে, পার্টির কর্মীরা নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন, যে সব মন্ত্রী, বিধায়ক এলাকায় কাজ করেননি তাঁদের ফের টিকিট দেওয়া উচিত হবে না। কিন্তু নেতৃত্ব কর্মীদের এই পরামর্শ কানে তোলেননি, শুনলে হয়তো আজ এই ফল হোত না।
লেখা হয়েছে, অনেক জায়গায় বিজেপিকে ফের ক্ষমতায় আসা থেকে আটকাতে জোট বেঁধেছিল তফশিলি জাতি, উপজাতির লোকজন ও সংখ্যালঘুরা, সেটাও একটা কারণ পরাজয়ের। আলওয়ার অঞ্চলের ১০ টি সিটের মধ্যে ৮ টিতেই বিজেপির হারের এটি প্রধান কারণ বলে মনে করছে আরএসএস।
কিছু কিছু কেন্দ্রে নেতা, মন্ত্রীদের ঔদ্ধত্য, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং মোদী ম্যাজিকে ভর করে উতড়ে যাওয়ার স্বপ্নও কাল হয়েছে বলে অর্গানাইজারের এই প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ ও নির্দল প্রার্থীদের ভূমিকার কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়েছে, বিজেপি কর্মীদের আস্থা অর্জনে ও মনোবল বাড়াতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য নেতৃত্ব। কর্মীদের দাবি মেনে যদি নতুন, কর্মঠ নতুন মুখ দাঁড় করানো হতো কিছু কেন্দ্রে, তাহলে পার্টি এখানে ইতিহাস রচনা করতে পারতো। লেখা হয়েছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মানুষ চাইছে যোগ্য, উদ্যমী, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন মুখ, যে কাজ করবে মানুষের জন্য। শীর্ষ নেতৃত্ব কি শুনছেন!

Comments are closed.