ভেনেজুয়েলায় মাদুরোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা ফের ব্যর্থ মার্কিন মদতপুষ্ট গুয়াইডোর, দেশজুড়ে অশান্তির বাতাবরণ

মঙ্গলবার ভোর ৫ টা ৪৬। সোশ্যাল মিডিয়ার পর্দায় ভেসে উঠলেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা জুয়ান গুয়াইডো। ভিডিও বার্তায় বললেন, ‘প্রধান মিলিটারি ইউনিটের সদর দফতর থেকে ঘোষণা করছি, অপারেশন ফ্রিডমের চূড়ান্ত পর্যায় শুরু হল।’
তাহলে কি নিকোলাস মাদুরোকে উৎখাত করা হয়েছে? সেনা কি তাহলে আর মাদুরোর নিয়ন্ত্রণে নেই? ভেনেজুয়েলায় কি সেনা অভ্যুত্থান ঘটালেন গুয়াইডো? সঙ্গে সঙ্গে সারা দুনিয়ায় চাঞ্চল্য।
গুয়াইডো ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষকে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে নির্দেশ দেন। জানিয়ে দেন, এবার গন্তব্য প্রেসিডেন্ট মাদুরোর প্রাসাদ। গত ২৪ শে জানুয়ারি, একটি পথসভায় নিজেকে দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন মদতপুষ্ট জুয়ান গুয়াইডো। কিন্তু তারপর থেকে মিরাফ্লোরেস প্রাসাদের দিকে তিনি ক’কদম হাঁটতে পেরেছেন, তা আজও রহস্যাবৃত। মঙ্গলবার ভোরে গুয়াইডোর ভিডিও বার্তায় সাড়া দিয়ে পথে নামেন তাঁর সমর্থকেরা। তাতে যোগ দেন সেনার উর্দি পড়া বেশ কয়েকজন। সবাই মিলে রাজপথ ধরে হাঁটতে থাকেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বাসভবন মিরাফ্লোরেস প্রাসাদের দিকে। সে দেশে মিলিটারি অভ্যুত্থান হল কি না তা নিয়ে যখন দুনিয়াজুড়ে জল্পনা, ঠিক তখনই এল মোক্ষম সংবাদ। পথ প্রহরীদের ছোড়া টিয়ার গ্যাস সহ্য করতে না পেরে রণে ভঙ্গ দিয়েছেন গুয়াইডো। মাঝপথ থেকেই পাত্তা নেই তাঁর।
পরিস্থিতি ঠিক কী, তা নিয়ে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। আদৌ অভ্যুত্থান, নাকি আগের দু’বারের মতোই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টা? এমনকী জাতীয় টিভি কিংবা রেডিও স্টেশন দখল করার কোনও খবরও নেই। উর্দিধারীদেরও আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। গুয়াইডোর তরফে কোনও বার্তা না পেয়ে দিশেহারা তাঁর সমর্থকেরা এই পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে বার্তা দিলেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। অভ্যুত্থানের দাবি উড়িয়ে দিয়ে মাদুরো জানালেন, সব কিছু ঠিক আছে। দেশবাসী নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। জানা গেল, সেনা বাহিনীর একটি ছোট্ট অংশকে গুয়াইডো ভুল বুঝিয়ে সঙ্গে নিয়েছিলেন। গুয়াইডোর সঙ্গে ভিডিওতে থাকা এক সেনা কর্মী জানান, তাঁকে হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলে, জেল ভাঙার ষড়যন্ত্রের খবর পাওয়া গিয়েছে, তেমন কিছু হলে সাথে সাথে তা রুখতে হবে। পরে তিনি বুঝতে পারেন, জেল ভাঙা নয়, হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে আসলে তাঁকে অভ্যুত্থানে অংশ নিতে বলা হয়েছিল।
এই নিয়ে তৃতীয়বার ‘রাতারাতি অভ্যুত্থান’ ঘটানোর পরিকল্পনা বানচাল করলেন মাদুরো। আর যতবার অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে, ততই যেন ক্ষেপে উঠছে আমেরিকা। গুয়াইডোর এই চূড়ান্ত ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর আমেরিকা দু’মুখো কৌশল নেয়। একদিকে ট্যুইটের পর ট্যুইটে ট্রাম্প সরাসরি আক্রমণ করতে থাকেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে, অন্যদিকে এই অভ্যুত্থানকে সফল হিসেবে দুনিয়ার কাছে তুলে ধরতে, বিভিন্ন ফেক ইমেজারির আশ্রয় নেওয়া হয় ওয়াশিংটনের তরফে। কিন্তু তা ধোপে টেকেনি। আমেরিকার দেখাদেখি মাদুরোর সমালোচনা করেছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, চিলি এবং মার্কিন ঘনিষ্ঠ ইউরোপের কয়েকটি দেশ। আর আমেরিকার এই চক্রান্তের প্রকাশ্য সমালোচনা করেছে রাশিয়া এবং চিন।
‘অভ্যুত্থানে’ অংশ নেওয়া সেনা আধিকারিকদের একজন স্প্যানিশ দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। ২৫ জন সেনা অফিসার ব্রাজিল দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেরাচ্ছেন ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নায়ক জুয়ান গুয়াইডো।
রাত সাড়ে ৮ টা নাগাদ অজ্ঞাতবাস থেকে আবার একটি বার্তা দেন গুয়াইডো। ঝুলে পড়া মুখ, ঘুমে ঢুলে আসা চোখের গুয়াইডো বার্তা দিলেন, অপারেশন ফ্রিডম চলবে। নিজে তিনি যাই বলুন কিংবা আমেরিকা তাঁর হয়ে যতই আগ্রাসন দেখাক, নেতার ভেঙে পড়া শরীরি ভাষা বুঝতে ভুল হচ্ছে না গুয়াইডো অনুগামীদের।

Comments are closed.