গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে বাংলার বড়ো সাফল্য, গুজরাতকে পিছনে ফেলে রেকর্ড ২৮৮ কিমি রাস্তার কাজ শেষ

দেশে করোনা পরিস্থিতিতে জারি হওয়া লকডাউনের মধ্যে গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেল বাংলা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাত সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যকে পিছনে ফেলে লকডাউন পিরিয়ডে কাজ শুরুর তিন মাসের মধ্যে ২৮৮ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ করেছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর। কলকাতা ছাড়াও রাজ্যের ২২টি জেলায় রাস্তা সংস্কারের কাজ হয়েছে। রাজ্য-কেন্দ্রের ভাগাভাগিতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে খরচ হয়েছে মোট ৪১৪ কোটি টাকা।

লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়ে এ রাজ্যের বহু পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। তবে তাঁদের রুজিরোজগার যাতে বন্ধ না হয়, তার জন্য গ্রামীণ এলাকাগুলিতে একশো দিনের কাজ সহ নানা সরকারি প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাঁর নির্দেশ ছিল, এইসব কাজে পরিযায়ী শ্রমিকদেরও কাজে লাগাতে হবে।

এদিকে গত ২২ এপ্রিল ছিল লকডাউনের ২৯ তম দিন। ওই দিনই গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের কাজে হাত দেয় রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর। কড়া স্বাস্থ্য বিধি মেনে শুরু হয় কাজ। কোভিড প্রোটোকল মেনে পরিযায়ী শ্রমিকদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তার পরে তাঁদেরও এই কাজে যুক্ত করা হয়। গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে তাঁদের এই অংশগ্রহণ এই নজরকাড়া সাফল্যের সহায়ক হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি বলেন, গ্রামাঞ্চলে আর্থিক বিকাশের লক্ষ্যে গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণে আমরা বরাবর জোর দিয়ে এসেছি। এখন অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে আমাদের অবস্থান অনেক ভালো।

২০২০-২১ আর্থিক বছরে মোট ২ হাজার কিমি রাস্তা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে পঞ্চায়েত দফতর। যদিও লকডাউনের ধাক্কায় চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ধাপে রাস্তা নির্মাণের কাজ প্রায় বন্ধ ছিল। মোদীর রাজ্য গুজরাতে রাস্তা নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭০০ কিমি। তবে তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ২০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। এছাড়া উত্তরপ্রদেশে প্রায় ২২০ কিমি রাস্তার কাজ হয়েছে। উত্তরাখণ্ডে ১৬৭, মধ্যপ্রদেশে ২৬৩, পাঞ্জাবে ১০ এবং অসমে ১০৪ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির স্বপ্নের প্রকল্প ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা’র আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ২০০০-০১ আর্থিক বছরে। আগে এই প্রকল্পে মোট বরাদ্দ অর্থের ৯০ শতাংশ দিত কেন্দ্র। বাকি ১০ শতাংশ ছিল রাজ্যের। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রকল্পে কেন্দ্রের ভাগ কমিয়ে করা হয় ৬০ শতাংশ। ৪০ শতাংশ অর্থ দিতে হয় রাজ্যকে। শোনা যায়, এই কারণেই প্রকল্পের নাম পরিবর্তনে উদ্যোগী হয়েছিলেন মমতা। ২০১৬ সাল থেকে রাজ্যে গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয় ‘গ্রামীণ সড়ক যোজনা’ নামক প্রকল্প হিসেবে। তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বাংলায় মোট রাস্তা নির্মিত হয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ কিমি। তার মধ্যে তৃণমূল জমানাতেই ২৪ হাজার কিমি নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে।

Comments are closed.