আপনার মাস্ক কি সত্যিই আপনাকে রক্ষা করে? জেনে নিন WHO Mask Guideline কী বলছে

গত চার-পাঁচ মাসে আমজনতা অভ্যস্থ হয়েছে এক নতুন অভ্যাসে। তা হল মুখে মাস্ক পরা। পোশাকের সঙ্গে মাস্কও অঙ্গ হয়ে উঠেছে করোনা বিধ্বস্ত জীবনযাত্রায়। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সব দেশে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হয়েছে। কিন্তু সব মাস্ক কি একইরকম সুরক্ষা দেয়? সর্বোচ্চ কতক্ষণ পরা যেতে একটা মাস্ক? কী বলছে WHO?

২০১৬ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসে একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, একজন মানুষ প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ২৩ বার হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করেন। তাই করোনা সংক্রমণ রোধে নিয়মিত হাতধোয়া এবং মুখে মাস্ক পরার উপর এত জোর দেওয়া। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞের দাবি, মাস্ক ব্যবহার করা উপকারী, কিন্তু বাস্তবে হাসপাতালের পরিবেশের বাইরে মাস্ক ব্যবহারের ব্যাপক উপকার পাওয়ার নজির খুব কমই। তাছাড়া, মাস্ক পরলেই হবে না, সেটা থেকে উপকার পেতে হলে জানতে হবে ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি। কোন ধরনের মাস্ক পরলে উপকার পাওয়া যাবে ইত্যাদি। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময় অন্তর মাস্ক বদলাতে হয়। এবং এগুলো যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না, এক্ষেত্রেও WHO Guideline মেনে চলা উচিত।

 

Mask Guideline: কী করবেন, কী করবেন না

how to wear a mask

সরকারি নির্দেশ মেনে কেবল মাস্ক পরলেই চলবে না, জানতে হবে আদৌ তা কাজে লাগছে কি না। অনেকেই সরকারি নির্দেশের চাপে পড়ে একটা মাস্ক মুখে জড়িয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। কেউ কেউ আবার মুখের বদলে গলায় মাদুলির মতো মাস্ক ঝুলিয়ে দিন কাটিয়ে দেন। কিন্তু এতে লাভ কিছু হচ্ছে না। বরং নিজের অজান্তেই নিজের এবং অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, দৈনন্দিন জীবনে মাস্ক ব্যবহার করে জীবাণু সংক্রমণ এড়ানো বেশ কঠিন। তবে অবশ্যই কিছু কার্যকারিতা আছে। তাঁদের মতে, বাজারচলতি বেশিরভাগ মাস্কই নাক ও মুখগহ্বর পুরোপুরি ঢাকতে পারে না। তাই আগে খেয়াল রাখতে হবে মাস্কটি আপনার নাক ও মুখ ঠিকঠাক ঢাকতে পারছে কি না।

চিকিৎসকদের মতে, হাঁচি, কাশি অথবা কথা বলতে গিয়ে সংক্রামিত ব্যক্তির শরীর থেকে বের হওয়া জীবাণু বাতাসে ভেসে এলে মাস্ক তা রোধ করে। এই তালিকায় রয়েছে যে কোনও ধরনের ফ্লু, হুপিং কাশি এবং কয়েক ধরনের ম্যানেঞ্জাইটিসের জীবাণু। এ ক্ষেত্রে যিনি জীবাণু বহনকারী এবং যাঁরা তাঁর সামনে রয়েছেন, সবারই মাস্ক পরা আবশ্যক। আর Covid-19 সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকলে N95 রেস্পিরেটর মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি। এই ধরনের মাস্কে বিশেষ এয়ার ফিল্টার থাকে, যা বাতাসে ভেসে বেড়ানো অতিক্ষুদ্র জীবাণু রুখতে সক্ষম। গোলাকৃতি এই মাস্ক মুখে ঠিকঠাক ফিট করে। বিশেষত যে জায়গায় ভিড় রয়েছে অর্থাৎ বাজার এলাকায় সেখানে এই মাস্ক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে ৷ যখন গাড়িতে সফর করছেন অর্থাৎ যেখানে কোনওভাবেই সোশ্যাল ডিসটেন্সিং সম্ভব নয় সেখানেও মাস্কের ব্যবহার কাজ দেবে।

 

মাস্ক নিয়ে আরও কিছু জরুরি তথ্য

করোনা সংক্রমণ রুখতে মাস্ক ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশের পরই দেশজুড়ে মাস্ক কেনার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। কেউ N95 মাস্ক কিনছেন। কেউ আবার সার্জিক্যাল মাস্কেই কাজ চালাচ্ছেন। কিন্তু জানেন কি N95 এবং সার্জিকাল মাস্কের জোগান তুলনায় কম আর সেই সব মাস্ক স্বাস্থ্যকর্মীদের দরকার, সাধারণ নাগরিকের নয়। আমজনতার জন্য নিতান্ত কাপড়ের মাস্কই যথেষ্ট। তবে তা যেন থ্রি লেয়ার বিশিষ্ট হয়।

 

মাস্ক নিয়ে WHO এর গাইডলাইন (WHO’s Mask Guideline)

how not to wear a mask

 

বিশ্বজোড়া কোভিড পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গত ৬ এপ্রিল মাস্ক সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন সংশোধন করা হয়। গত ৫ জুন একটি নয়া গাইডলাইন দিয়েছে হু। তাতে বলা হয়েছে, মাস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে যে কোনও সুস্থ ব্যক্তি যেমন সংক্রমণের আশঙ্কা কমাতে পারেন, তেমনি সংক্রমিত ব্যক্তিকেও মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক প্রমুখকে আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যদিও শুধুমাত্র মাস্ক ব্যবহার করে যে মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ রোখা যাবে না, এ কথাও জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মাস্ক পরার সঙ্গে হাত ধোয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে সংক্রমিতের সঙ্গে একই ঘরে থাকলে দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি মেডিক্যাল মাস্ক পরা জরুরি। অন্যান্যদের নন মেডিক্যাল মাস্ক পরলেই চলবে। মাস্ক যেন নাক ও মুখ ঠিকভাবে ঢেকে রাখে এবং একই মাস্ক যেন অন্য কেউ না ব্যবহার করেন, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সাধারণ মাস্ক কেনার সময়ও দেখে নিতে হবে এটা যেন থ্রি লেয়ার বিশিষ্ট হয়। জলে ভেজা বা ঘামে ভেজা মাস্ক ব্যবহার করা যাবে না। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তা বদলাতে হবে। তাই কাজে বেরলে একাধিক মাস্ক সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। নন মেডিক্যাল মাস্ক ধোয়ার সময় হাল্কাভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং অন্যান্য জামাকাপড়ের সঙ্গে মাস্ক ধোয়া চলবে না। গরম জল না থাকলে মৃদু ডিটারজেন্ট দিয়ে স্বাভাবিক জলেই মাস্ক ধুতে হবে। নন মেডিক্যাল মাস্কের অভাব থাকলে ফেস শিল্ড ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে হু।

মাস্ক পরা অবস্থায় মুখে হাত দিতে হলে অবশ্যই হাত পরিষ্কার করবেন। সেক্ষেত্রে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন। তবে মাস্ক পরে মুখ হাত না দেওয়ার চেষ্টা করাই উচিত বলে জানাচ্ছে হু-র গাইডলাইন। সিঙ্গেল ইউজ মাস্ক ব্যবহার করতে বারণ করা হয়েছে। যদি ব্যবহার করেন, ব্যবহারের পরে যেখানে সেখানে ফেলবেন না।

 

করোনা এবং মাস্ক নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কিছু উপদেশ

হু-র তরফে ডাক্তার ভ্যান কেরখোভ জানিয়েছেন, “আমরা সব দেশের সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছি, তারা যেন জনসাধারণকে মাস্ক পরতে উৎসাহিত করে।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অনেক রকম সুরক্ষা উপকরণের মধ্যে একটি হল মাস্ক। তবে মানুষ যেন মনে না করে যে, মাস্ক পরলেই ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিশ্চিতভাবে সুরক্ষিত থাকবেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর টেড্রোস ঘেব্রেয়েসাসের কথায়, “শুধু মাস্ক কখনও আপনাকে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত রাখবে না।”

 

মাস্ক ব্যবহারের কিছু নিয়ম (Norms of Wearing a Mask)

Norms of Wearing a Mask

 

একটানা মাস্ক পরে থাকার ফলে ত্বকে চুলকানি, র‌্যাশ এবং দাগের মতো অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই সমস্তগুলির হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রচুর পরিমানে জল পান করুন। এর ফলে ত্বক হাইড্রেটেড থাকবে, ত্বকের সমস্যাও কম হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্ক পরার ফলে যে সমস্যাগুলি দেখা দিচ্ছে তা নির্দিষ্টি পরিমানে জল পান করলে সহজেই দূর হবে।

এছাড়া মাস্ক পরার অন্তত ২০ মিনিট আগে ফেস ক্রিম অবশ্যই ব্যবহার করুন। চাইলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন। এই ক্রিম ব্যবহার করলে মুখে জ্বালা এবং ফুসকুড়ি কমবে। মাস্ক খোলার পরে আপনার হাত অবশ্যই সাবান অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের যত্ন নিতে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে নিন। এর ফলে ত্বকের দাগগুলি হালকা হতে শুরু করবে। যাদের ঘাম হয়, তাঁদের মাস্ক ব্যবহার করার আগে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে তবেই মাস্ক পরুন। ঘামযুক্ত ত্বকে মাস্ক পরলে ত্বকের সমস্যা আরও বেশি হতে পারে। এর পাশাপাশি অয়েল ফ্রি ক্রিম ব্যবহার করুন। অয়েল ফ্রি ক্রিম ব্যবহার করলে ঘাম কম হবে।

Comments are closed.