বিরোধীদের ছন্নছাড়া অবস্থার জন্য ২০১৪ তে সরকার গড়েছেন মোদী, এবার তার পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যাবে নাঃ ইয়েচুরি

২০১৪ সালে বিরোধীদের ছন্নছাড়া অবস্থার জন্যই মাত্র ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েই সরকার গড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ২০১৯ সালে এই ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে একজোট হওয়ার বার্তা দিলেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিএমের মুখপত্র ‘পিপলস ডেমোক্রেসি’র সাম্প্রতিক সংখ্যায় দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এক লেখায় বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এই বার্তা দিয়েছেন।
পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর বিকল্প কে হবেন বলে বিজেপি-আরএসএস যে প্রচার শুরু করেছে, তারও জবাব দিয়ে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক লিখেছেন, ২০০৪ সালেও বিজেপি এই প্রশ্ন তুলেছিল, বাজপেয়ীর বিকল্প কে? কিন্তু মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী হয়ে ১০ বছর দেশ চালিয়েছেন। ইয়েচুরি আশাবাদী, এবারও বিকল্প কেউ উঠে এসে প্রধানমন্ত্রী হবেন, যিনি স্থায়ী এবং ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠন করবেন।
‘পিপলস ডেমোক্রেসি’তে ইয়েচুরি লিখেছেন, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় বিভিন্ন আঞ্চলিক দল মোদী সরকারকে সমর্থন জানিয়ে জোট গড়েছিল। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যে অধিকাংশ আঞ্চলিক দল পদ্ম শিবিরের সঙ্গে জোট সম্পর্ক শেষ করে বেরিয়ে আসে। উদাহরণ হিসেবে তিনি লেখেন, অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দশম পার্টি (টিডিপি) এনডিএ জোট থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অসমে বিজেপি জোট সরকার তৈরি করতে সাহায্যকারী দল, অসম গণ পরিষদ কয়েকদিন আগেই কেন্দ্রের নাগরিকত্ব বিলের (সংশোধনী) বিরোধিতা করে বিজেপি জোট ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিহার ও উত্তর প্রদেশেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। প্রত্যেকটি আঞ্চলিক দলই মোদী সরকারের ওপর ভরসা হারিয়েছে। মহারাষ্ট্রে বিজেপির শরিক শিবসেনাও এখন বিজেপির প্রতি রুষ্ট। তবে আর কিছুদিন পরেই তাদের অবস্থান বোঝা যাবে বলে মনে করেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক। ইয়েচুরি লিখেছেন, জম্মু -কাশ্মীরে পিডিপির সঙ্গে জোট, অসমে অসম গণ পরিষদ-এর সঙ্গে জোট বা অন্ধ্রে টিডিপির সঙ্গে জোট, কোনটাই স্থায়ী না হওয়ার কারণ, বিজেপির সঙ্গে ওই দলগুলির কোনও আদর্শগত মিল নেই।
সিপিএম সাধারণ সম্পাদকের মতে, বিজেপিকে হারাতে বিভিন্ন দল যে এক ছাতার নীচে এসেছে, এতেই ভয় পেয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই বিভিন্ন সময়েই তিনি এই বিরোধী জোটকে সুবিধাবাদী বা আদর্শহীন বলে কটাক্ষ করছেন।
ইয়েচুরির অভিযোগ, যে পদ্ম শিবির ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য বিরোধী দলের নেতাকে ভাঙিয়ে নিয়ে সরকার গঠন করে, বিরোধীদের হুমকি দেয়, তারাই আবার বিরোধীদের আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
মোদী জমানায় দেশের অর্থনীতি থেকে শাসনতান্ত্রিক পরিকাঠামো, ধর্মীয় ঐক্য সবকিছু বিপর্যস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক। কৃষক ও শ্রমিক অসন্তোষ, বেকারত্ব দেশবাসীর স্বাভাবিক জীবনকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ইয়েচুরির কটাক্ষ, যে বিজেপি সরকার দুর্নীতি রোধ করতে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করে, তারাই রাফাল দুর্নীতিতে জড়িত।

Comments are closed.