Yes Bank: ত্রাতার ভূমিকায় SBI, কিন্তু বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এসবিআই ডুবলে তার বোঝা কে ঘাড়ে নেবে?
মোদী জমানায় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম ধস নেমেছিল আইএল অ্যান্ড এফএস-এ। তারপর ডিএইচএফএল, পিএমসি ব্যাঙ্ক এবং এখন ইয়েস ব্যাঙ্ক। একের পর এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়ায় প্রশ্ন উঠছে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থির দিকে, আমজনতার সঞ্চয়ের নিরাপত্তা নিয়ে।
এদিকে কেন্দ্র ও আরবিআই একযোগে ঘোষণা করেছে, ইয়েস ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। তাঁদের অর্থ সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু শুধু তো আমানতকারী নয়, ইয়েস ব্যাঙ্কের ১৮ হাজার কর্মীও চাকরি নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন।
পরিত্রাতার ভূমিকায় এসবিআই
ইয়েস ব্যাঙ্ককে ভরাডুবি থেকে রক্ষা করতে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই)-কে বেছে নেওয়া হয়েছে। আরবিআই- এর খসড়া অনুযায়ী ইয়েস ব্যাঙ্কের ৪৯ শতাংশ মালিকানা কিনবে এসবিআই। শনিবার জানা যায়, ইয়েস ব্যাঙ্ককে বাঁচাতে এসবিআই ঢালছে আড়াই হাজার কোটি টাকা এবং আরবিআই দেবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ।
ইয়েস ব্যাঙ্কের ভবিষ্যত, কর্মীদের চাকরি এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে শুক্রবার দীর্ঘ সময় ধরে বৈঠক করেন এসবিআই- এর চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার, সেবি-র চেয়ারম্যান অজয় ত্যাগী। তারপরেই সামনে আসে পরিকল্পনার খসড়া। অর্থমন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্য, ৩ এপ্রিলের মধ্যে ইয়েস ব্যাঙ্ককে পুনরুজ্জীবিত করা। কিন্তু এসবিআই এত টাকা ঢাললে দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারের কী অবস্থা হবে সে প্রশ্নের উত্তর নেই। প্রশ্ন উঠছে ভবিষ্যতে অন্য কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিপর্যয়ে পড়লে সেই দায়ভারও এসবিআই-র উপর চাপানো হবে কি না। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলছেন, কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেই খাদে পড়তে দেব না। কিন্তু এমনিতেই দেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টরের দূরবস্থার সময়ে এসবিআই-এর উপর এই চাপের ফল যদি নেতিবাচক হয়, তবে তার দায়িত্ব কার ঘাড়ে গিয়ে পড়বে সে প্রশ্নও তুলছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
ইয়েস ব্যাঙ্কের ভরাডুবি নিয়ে মতামত
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ দাবি করছেন, দেউলিয়া ঘোষণা করা রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান অনিল আম্বানী, সুভাষ চন্দ্রের এসেল গোষ্ঠীর মতো মোদী সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সংস্থাগুলিকে ঋণ দিয়েই ভেঙে পড়ে ইয়েস ব্যাঙ্ক। এছাড়া আইএল অ্যান্ড এফসি, ভোডাফোনের মতো সংস্থা ঋণের টাকা ফেরত না দেওয়ায় ইয়েস ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারের হাল খারাপ হয়। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেন অর্থ মন্ত্রক থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগেই উদ্যোগী হল না? প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম অভিযোগ করছেন, শূন্য নেট ভ্যালু থাকা ইয়েস ব্যাঙ্কের ভার এসবিআই-এর মাথায় দেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত। এসবিআই কে স্বেচ্ছাসেবীর মতো ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ইয়েস ব্যাঙ্কের বোঝা এসবিআই-এর উপর
বর্তমানে ইয়েস ব্যাঙ্কের ২৫৫ কোটি টাকা শেয়ার রয়েছে বলে ড্রাফটে জানানো হয়েছে। এসবিআই-কে এর ৪৯ শতাংশ শেয়ার নিতে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ, এখনই ইয়েস ব্যাঙ্কের ৪৯ শতাংশ শেয়ারের দায়িত্ব এসবিআই একা নিলে জরুরিকালীনভাবে তাদের বিনিয়োগ করতে হবে ২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। ডুবতে বসা ইয়েস ব্যাঙ্কের ত্রাতার ভূমিকায় উঠে আসা এসবিআই যদি ভবিষ্যতে আর্থিক সংকটে পড়ে তখন কী করা হবে? দেশজুড়ে শাখা, সম্পত্তি, লাভের নিরিখে বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩৪ কোটি। তার বিপর্যয় হলে ভার সামলানো কিন্তু সহজ হবে না।