কাশ্মীর ছাড়া আরও ১০ রাজ্য সংবিধান স্বীকৃত বিশেষ ক্ষমতা ভোগ করে, জানেন কোন রাজ্য এবং কী সেই ক্ষমতা?

রাষ্ট্রপতির নির্দেশের মধ্যে দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা হারিয়েছে। কিন্তু জানেন কি, জম্মু-কাশ্মীর ছাড়াও দেশের আরও ১০ টি রাজ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংবিধান স্বীকৃতভাবে এমনই কিছু বিশেষ ক্ষমতা ভোগ করে?

আর্টিকেল ৩৭১, মহারাষ্ট্র ও গুজরাত

মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতের রাজ্যপালদের একটি বিশেষ ক্ষমতা প্রদত্ত হয়েছে। বিদর্ভ, মারাঠাওয়াড়া, কচ্চ অঞ্চলে উন্নয়ন পর্ষদ তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া আছে এই দুই রাজ্যের রাজ্যপালের হাতে।

আর্টিকেল ৩৭১এ, নাগাল্যান্ড

নাগাদের ধর্মীয় এবং সামাজিক বিষয়ের উপর সংসদে তৈরি করা কোনও আইন, নাগাল্যান্ডে প্রযোজ্য হবে না। বিশেষ ক্ষেত্রে নাগাল্যান্ডের বিধানসভায় সেই প্রস্তাব প্রথমে পেশ করতে হবে এবং পাশ করাতে হবে। তাহলেই একমাত্র নির্দিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে সংসদে সৃষ্ট আইন নাগাল্যান্ডে লাগু হবে।

আর্টিকেল ৩৭১বি, অসম

স্বায়ত্তশাসন এবং তফশিলি উপজাতিদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি চাইলে প্রদত্ত সাংবিধানিক ক্ষমতা এবং উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার বিধায়কদের নিয়ে অসম বিধানসভায় তৈরি হওয়া কোনও কমিটির কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।

আর্টিকেল ৩৭১সি, মনিপুর

৩৭১বি-র সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে এই ধারার।

আর্টিকেল ৩৭১ডি ও ই, অন্ধ্র প্রদেশ

সংবিধানের ৩৭১ডি ধারা। ১৯৭৪ সালে ভারতের সংবিধানে যুক্ত হয় এই ধারা। রাজ্যের মানুষের সুযোগ সুবিধা এবং রক্ষাকবচ তৈরির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযুক্ত হয়। কর্ম সংস্থান এবং শিক্ষার দিক থেকে যাতে রাজ্যের বাসিন্দারা বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতেই এই ধারা।

আর্টিকেল ৩৭১ই ধারায় অন্ধ্র প্রদেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির ক্ষমতা দেওয়া আছে।

আর্টিকেল ৩৭১এফ, সিকিম

১৯৭৫ সালে এই ধারা সংযুক্ত হয়। এই ধারা মোতাবেক সিকিমের বিধানসভায় কোনওভাবেই ৩০ জনের কম সদস্য হবে না। সিকিমের সমস্ত ধরণের মানুষের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে এই বিশেষ ধারার সাহায্যে।

আর্টিকেল ৩৭১জি, মিজোরাম

৩৭১এ ধারার মতোই এক্ষেত্রেও মিজোদের ধর্মীয় এবং সামাজিক বিষয়ের উপর সংসদে তৈরি করা কোনও আইন মিজোরামে প্রযোজ্য হবে না।

আর্টিকেল ৩৭১এইচ, অরুণাচল প্রদেশ

রাজ্যপালের হাতে বিশেষ ক্ষমতা অর্পিত রয়েছে। যে ক্ষমতাবলে রাজ্যপাল আইন শৃঙ্খলা ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে খারিজ করে নতুন নির্দেশনামা জারি করতে পারেন।

আর্টিকেল ৩৭১আই, গোয়া

গোয়া বিধানসভায় সমস্ত ধরণের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে, বিধানসভায় ন্যূনতম ৩০ সদস্যকে নির্বাচিত হতেই হবে।

আর্টিকেল ৩৭১জে

আর্টিকেল ৩৭১জে হায়দরাবাদ ও কর্ণাটকের ৬ টি পিছিয়ে পড়া জেলাকে সংবিধান স্বীকৃত এই বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ সংস্থানের প্রেক্ষিতে গুজরাত ও মহারাষ্ট্রের মতোই এই পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোয় পৃথক উন্নয়ন পর্ষদের মাধ্যমে উন্নয়নের কাজ চালাতে পারবে। পাশাপাশি সরকারি চাকরি এবং শিক্ষায় স্থানীয় সংরক্ষণের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।

এছাড়াও রয়েছে বেশকিছু সিডিউলড এরিয়া বা তফশিলি অঞ্চল। সেখানেও সংবিধান স্বীকৃতভাবে বেশকিছু বিশেষ অধিকার বা ক্ষমতা দেওয়া আছে। অন্ধ্র প্রদেশ, ছত্তিসগঢ়, গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, রাজস্থান এবং তেলেঙ্গানায় রয়েছে ফিফথ সিডিউল বা পঞ্চম তফশিলভুক্ত এলাকা।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে থেকে অঙ্গ রাজ্যগুলোকে অংশত স্বায়ত্তশাসনের অধিকার বা বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার অর্থ হল, প্রশাসনিক কাজকর্মে সুবিধার পাশাপাশি জাতিসত্তার আশা ও আকাঙ্খার দিকে যেন প্রয়োজনীয় নজর দেওয়া যায়, তা নিশ্চিত করা। সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যা খানিকটা হলেও উপেক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় বলেই মনে করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।

Comments are closed.