যোগী জমানায় ১৬ মাসে ৩০২৬ এনকাউন্টারে ৭৮ জনের মৃত্যু উত্তর প্রদেশে, এই মডেলই কি বাংলায় আমদানির নিদান বিজেপির?

সোমবার রাজ্যের দুই বিজেপি নেতা নিদান দিয়েছেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে এ রাজ্যে শুরু হবে উত্তর প্রদেশের ধাঁচে এনকাউন্টার। সায়ন্তন বসু বসিরহাটে এবং বিজেপির আর এক নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়া থেকে একযোগে হুঁশিয়ারি দেন, কাটমানি এবং গুণ্ডামি বন্ধে উত্তর প্রদেশের এনকাউন্টার মডেল চালু করা হবে বাংলায়। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি নেতাদের এই জোড়া হুঁশিয়ারিতে রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। তীব্র সমালোচনায় সরব হয়েছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই অভিযোগ করেছিলেন, উত্তর প্রদেশে এনকাউন্টার করে খুন করা হচ্ছে।

কিন্তু কী এই উত্তর প্রদেশ মডেল? সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় যে এনকাউন্টার মডেল আমদানির কথা বলছেন, তা পরিচিত গুজরাত মডেল হিসেবে। আদালত এবং বিচার ব্যবস্থার তোয়াক্কা না করে পুলিশই আইন হাতে তুলে নিয়ে অভিযুক্তকে শাস্তি দিতে থাকলে, তাকেই গুজরাত মডেল হিসেবে এক সময় অভিহিত করা হয়েছিল গোটা দেশে। এই অগণতান্ত্রিক মডেলের সোচ্চার সমালোচনা হলেও, যোগী আদিত্যনাথ লখনউয়ের তখতে বসার পর একাধিকবার বলেছেন, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি গুজরাত মডেলেরই শরণাপন্ন হবেন। যোগীর দাবি যে নেহাত কথার কথা নয়, তা বোঝা যায়, উত্তর প্রদেশে বিজেপি শাসনের প্রথম ১৬ মাসের চালচিত্র দেখলেই। লখনউ প্রশাসন সূত্রে খবর, যোগী জমানায় প্রথম ১৬ মাসে মোট ৩ হাজারটি এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটেছে উত্তর প্রদেশে, তাতে মৃত্যু হয়েছে ৭৮ জনের।

২০১৭ সালের ১৯ শে মার্চ উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন যোগী আদিত্যনাথ। তারপর থেকে তাঁর শাসনের প্রথম ১৬ মাস, অর্থাৎ ২০১৮ র জুলাই পর্যন্ত উত্তর প্রদেশে মোট ৩ হাজার ২৬ টি এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটেছে। তাতে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের। ৭ হাজার ৪৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ৮৩৮ জন এনকাউন্টারে জখম বা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পাশাপাশি স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের এনকাউন্টারে ৯ অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৩৯ জনকে গ্রেফতার করেছে এসটিএফ।

এবার উত্তর প্রদেশের মাটিতে প্রয়োগ হওয়া এই এনকাউন্টার মডেলই বাংলায় আমদানির নিদান দিলেন দুই বিজেপি নেতা। তবে এই প্রথম নয়, লোকসভা ভোটের মুখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের কার্যত একই নিদান দিয়েছিলেন বিজেপির বসিরহাট কেন্দ্রের প্রার্থী সায়ন্তন বসু। বলেছিলেন, কেউ ভোট লুঠ করতে এলে, তার বুক লক্ষ্য করে গুলি করতে বলেছি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। সেই মন্তব্য নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক ছড়ায়। এবার ফের বিতর্কিত মন্তব্য করলেন তিনি। সায়ন্তনের মন্তব্যের সুরই শোনা গেল আর এক বিজেপি নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়।

এই এনকাউন্টার নিয়ে বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকারকে। আদালতের তরফেও জুটেছে ভর্ৎসনা। এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন উত্তর প্রদেশ সহ সারা দেশের মানবাধিকার কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, আইন আদালতের তোয়াক্কা না করে কোনও সরকার এমন এনকাউন্টারের শাসন চালাতে পারে না। এবার সেই দাওয়াই বাংলায় আমদানির ঘোষণা করে বির্তকে ঘৃতাহুতি দুই বিজেপি নেতার।

Comments are closed.