দেশের ৮৩ শতাংশ সাংসদই কোটিপতি, কোটিপতি তালিকায় নাম নেই বাম সাংসদদের। ৫ লাখের কম টাকা তৃণমূলের উমা সোরেনের

দেশের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের আর দু’সপ্তাহও বাকি নেই। কিন্তু এর আগে, অর্থাৎ ষোড়শ লোকসভায় যাঁরা সাংসদ ছিলেন, কী ছিল তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ?  ফৌজদারি মামলা এবং অভিযোগের নিরিখেই বা এগিয়ে ছিলেন কোন দলের সাংসদরা? এই সমস্ত তথ্য নিয়ে একটি সমীক্ষা রিপোর্ট বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা  এডিআর।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন এই সাংসদরা,  সেই হলফনামার ভিত্তিতেই প্রকাশ করা হয়েছে এই সমীক্ষা রিপোর্ট।

এই রিপোর্টে দেশের ৫৪৩ টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৫২১ জন সাংসদের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। বাকি ২২ টি আসন বর্তমানে ফাঁকা রয়েছে, এই আসনগুলিতে কোনও সাংসদ নেই।

এই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ৫২১ জন সাংসদের মধ্যে দেশের ৪৩০ জনই কোটিপতি। যা শতাংশের হিসেবে প্রায় ৮৩ শতাংশ।  সবথেকে বেশি কোটিপতি সাংসদ রয়েছেন বিজেপিতে।  তাদের ২৬৭ জনের মধ্যে ২২৭ জন বর্তমান সাংসদ কোটিপতি ( ৮৫ শতাংশ)।  বিজেপির পরেই রয়েছে কংগ্রেস। তাদের ৪৫ জন সাংসদের মধ্যে ৩৭ জন কোটিপতি (৮৭ শতাংশ)। এর পরে রয়েছে এআইএডিএমকে। তাদের ৩৭ জন সাংসদের মধ্যে ২২ জন কোটিপতি। তৃণমূল কংগ্রেসের ৩৪ জনের মধ্যে  কোটিপতি সাংসদের সংখ্যা ২২।

গড়ে হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে, এই ৫২১ জন সাংসদের প্রত্যেকের গড় সম্পত্তির পরিমাণ ১৪.৭২ কোটি টাকা। বিজেপি সাংসদদের সম্পত্তির গড় পরিমাণ ১১.৮৯ কোটি টাকা।  কংগ্রেস সাংসদদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ ১৫. ৪৭ কোটি টাকা।  এআইএডিএমকে সাংসদদের সম্পত্তির গড় পরিমাণ ৬.৪৭ কোটি টাকা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ ২.৫৬ কোটি টাকা। এই সাংসদদের মধ্যে রয়েছেন এমন ৩২ জন যাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকারও বেশি।

এই তালিকায় সবার প্রথমেই নাম রয়েছে অন্ধ্র প্রদেশের গুন্টুর এর টিডিপি সাংসদ জয়দেব গাল্লার নাম। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৬৪৩ কোটি টাকা। দু’নম্বরে রয়েছেন তেলেঙ্গানার ছেভেল্লা কেন্দ্রের টিআরএস সাংসদ কোনডা বিশ্বেশ্বর রেড্ডির নাম। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৫২৮ কোটি টাকা। তিন নম্বরে নাম রয়েছে অন্ধ প্রদেশের নারসা পূরমের  বিজেপি সাংসদ গোকারাজু গঙ্গা রাজুর। এই সাংসদের সম্পত্তির পরিমাণ ২৮৮ কোটি টাকা।

সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছে, গত লোকসভার সাংসদদের মধ্যে যে দু’জনের টাকার পরিমাণ সব থেকে কম, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ঝাড়গ্রামের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ উমা সোরেন।  তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ লক্ষ টাকার কম।

৪৫ জন সাংসদের  বার্ষিক আয় ১ কোটি টাকারও বেশি।

সম্পত্তির পাশাপাশি ফৌজদারি মামলার পরিসংখ্যানও পেশ করেছে এডিআর এবং ন্যাশনাল ইলেকশন ওয়াচ। সেই সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, দেশের ৫২১ জন সাংসদের মধ্যে ১৭৪ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা।  শতাংশের হিসেবে যা ৩৩ শতাংশ। খুন, অপহরণ,  মহিলা নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত দেশের ১০৬ জন সাংসদ।  তাঁদের মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে খুনের অভিযোগ। বিজেপির ৪ জন, কংগ্রেসের ১ জন এবং  আরজেডি, এনসিপি এবং এলজেপির ১ জন করে সাংসদের বিরুদ্ধে রয়েছে খুনের অভিযোগ। খুনের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে ১৪ জন সাংসদের বিরুদ্ধে।  সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ১৪ জন সাংসদের বিরুদ্ধে।

লোকসভায় সাংসদদের মধ্যে যাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার অভিযোগ রয়েছে,  তাঁদের মধ্যে রয়েছেন  বিজেপির ৯২ জন,  কংগ্রেসের ৭ জন,  এআইএডিএমকের ৬ জন, শিবসেনার ১৫ জন এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ৭ জন সংসদ।

Comments are closed.