স্রেফ একটা ডিপি বদলেই তোলপাড় সোশ্যাল দুনিয়া। সদ্য নিযুক্ত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা গত মাসেই যোগ দিয়েছেন ট্যুইটারে। দলের মাত্র কয়েকজনকেই ফলো করছেন তিনি, কিন্তু তাঁকে ফলো করছে প্রায় সারা দেশ। সেই ট্যুইটার হ্যান্ডেলেই বৃহস্পতিবার ডিসপ্লে পিকচার বদলে ফেলেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। আর সেই ডিপির ভালো-খারাপ নিয়েই এখন আড়াআড়ি ফাটল সোশ্যাল মিডিয়ায়। একদল তাঁর এই ছকভাঙা অবতারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ আবার কেউ কেউ নিন্দায় মুখর।
ভারতীয় রাজনীতিবিদদের পোশাক পরিচ্ছদে বৈচিত্র থাকলেও তা বড়ই সেকেলে এবং রক্ষণশীল, এমনটা মনে করেন অনেকেই। ডিপি বদলে সেই ভাবনার মূলেই কি আঘাত করলেন রাজীব তনয়া? প্রিয়াঙ্কাকে বরাবর শাড়িতেই দেখতে অভ্যন্ত তাঁর অনুগামীরা। তবে আর পাঁচজনের মতো শাড়ির পাশাপাশি জিনস, টি-শার্টেও সমান স্বচ্ছন্দ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। কংগ্রেস জেনারেল সেক্রেটারিকে নতুন প্রোফাইল পিকচারে দেখা যাচ্ছে নীল শার্ট ও জিনসে। পায়ে কালো স্নিকার্স আর হাতে স্মার্টফোন।
ভারতীয় রাজনীতিতে নেতা ও নেত্রীদের কুর্তা-পাজামা ও শাড়ি পরার যে অলিখিত রেওয়াজ, সেই ছক কি জেনেশুনেই ভাঙলেন প্রিয়াঙ্কা? যেমন কয়েকদিন আগেই মোদীর গড়ে গিয়ে কংগ্রেস নেত্রী তাঁর প্রথম রাজনৈতিক ভাষণে ‘বেহেনো অউর ভাইয়ো’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। উল্টোটা বলে সম্বোধন করাই যেখানে দস্তুর। কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব ট্যুইটারে সেই প্রসঙ্গ তুলতেই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। বলেছেন, আমি ভেবেছিলাম এটা সবার চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ তিনি অত্যন্ত সচেতনভাবেই এমনটা করেছেন। ঠিক তেমনই, তাঁর ডিসপ্লে পিকচারের ক্ষেত্রেও হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মহিলা রাজনীতিবিদ হলেই শাড়ি মাস্ট, এই প্রচলিত ধারণাকে যে তিনি মানেন না, জিনস-শার্টে সাবলীল প্রিয়াঙ্কার ছবি সেকথাই বলছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এভাবেই শতাব্দী প্রাচীন পুরুষতান্ত্রিকতার মূলে প্রিয়াঙ্কা আঘাত করতে চেয়েছেন বলেও মনে করেন অনেকে।
নেট দুনিয়ায় প্রিয়াঙ্কার এই নতুন ছবি নিয়ে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নেটিজেনদের একাংশ প্রিয়াঙ্কার পোশাকের নিন্দায় সরব হয়েছেন। এক ট্যুইটার ইউজার প্রিয়ঙ্কার সমস্ত সভা বয়কট করার দাবি জানাচ্ছেন শুধুমাত্র তাঁর জিনস ও শার্ট পরা ছবির কারণে!
অবশ্য প্রিয়াঙ্কা তাঁর ছবি বদলের জন্য প্রশংসাও কম পাননি। ট্যুইটারে প্রিয়াঙ্কার এক ফলোয়ারের মন্তব্য, অবশেষে এক ভারতীয় মহিলা নেত্রীকে শার্ট ও জিনসে দেখা গেল। ‘স্টিরিওটাইপ’ ভাঙার জন্য প্রিয়াঙ্কাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিয়াঙ্কার ডিপি বদলের সর্বাধিক সমর্থন এসেছে মহিলাদের কাছ থেকেই।
কিছুদিন আগেই বিজেপি সাংসদ হরিশ দ্বিবেদী কটাক্ষ করে বলেছিলেন, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে উত্তর প্রদেশে শাড়ি আর কপালে সিঁদুর পরতে দেখা যায়, আর দিল্লিতে থাকলে জিনস ও টপে।
জিনস-শার্টের ডিপিতে বিজেপির কটাক্ষের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের শতাব্দী প্রাচীন পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতারও মূলে আঘাত করেছেন সনিয়া-রাজীবের মেয়ে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Comments are closed.