‘ঘৃণার রাজনীতিকে একটিও ভোট নয়’, আহ্বান জানিয়ে স্বঘোষিত চৌকিদারদের আক্রমণের মুখে নাসিরুদ্দিন, রোমিলা থাপাররা
দেশবাসীর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছিলেন, ঘৃণার রাজনীতিকে একটিও ভোট নয়। বিজ্ঞানী, লেখক, অভিনেতা, থিয়েটার কর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেদের বিজেপি বিরোধী বিবৃতির প্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়াতে এবার শুরু হয়ে গেল ট্রোলিং। আর লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকদের লক্ষ্য করে স্বঘোষিত চৌকিদারদের লাগাতার আক্রমণ ছাড়ালো শালীনতার সীমা। কেউ ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারকে ভুয়ো ইতিহাসবিদের ‘আখ্যা’ দিচ্ছেন আবার কেউ অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহকে পাকিস্তানী এজেন্টের তকমা দিয়েছেন।
১০০ জনেরও বেশি চিত্র পরিচালক গত সপ্তাহেই বিজেপিকে ভোট না দিতে মানুষের কাছে আবেদন রেখেছিলেন। গত সোমবার প্রায় ২৫০ জন লেখক ও সাহিত্যিক ‘ঘৃণার রাজনীতি’র বিরুদ্ধে মানুষকে ভোট দিতে আবেদন করেছিলেন। বৃহস্পতিবারই এসেছিল প্রায় ২০০ জন বিজ্ঞানী ও প্রায় ৬০০ নাট্যকর্মী, অভিনেতাদের বিজেপি বিরোধী তথা ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে বিবৃতি। সাহিত্যিক অরুন্ধতী রায়, অমিত চৌধুরি, নবনীতা দেব সেন, নয়নতারা সেহগল, ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার, অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ, রত্না পাঠক, কঙ্কনা সেন শর্মা, চিত্র পরিচালক অমল পালেকর, থিয়েটার কর্মী গিরিশ কারনাড, মহেশ দত্তানি প্রমুখ। বিবৃতিতে তাঁদের অভিযোগ ছিল, ধর্ম বা সম্পদায়ের ভিত্তিতে বিভাজনের রাজনীতি করা হচ্ছে। কেউ সরকার বিরোধী সমালোচনা করলেই তাঁকে সরাসরি দেশদ্রোহী তকমা দেওয়া হচ্ছে, বলেও বিবৃতিতে লিখেছিলেন বিশিষ্টজনেরা। ওই লেখক, চিত্র পরিচালক, অভিনেতাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার অভিযোগও আনছেন স্বঘোষিত ‘চৌকিদার’রা। কেউ ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার মিথ্যে ইতিহাস লেখেন বলে ব্যঙ্গ করেছেন, তো কোনও স্বঘোষিত চৌকিদারের নিদান, এদের সবাইকে পাকিস্তানে পাঠানো হোক।
একজন সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করছেন, যারা ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, তাদের আদতে কোনও সামাজিক পরিচিতিই নেই। আর একজন ট্যুইটারে লিখেছেন, বিজেপি বিরোধী বিবৃতির দেওয়ায় ওই লেখক, নাট্যকার, অভিনেতাদের মুখোশ খসে পড়েছে। এরা আসলে কংগ্রেসের হয়ে কাজ করছেন, বলে দাবি তাঁর। আর এক স্বঘোষিত চৌকিদার জানাচ্ছেন, অমল পালেকর, নাসিরুদ্দিনের হাতে বিশেষ কাজ নেই। তাই মোদী বিরোধী প্রচার চালাচ্ছেন এই ‘জোকার’রা।
যে প্রধানমন্ত্রী দেশের বিজ্ঞানীদের পাশে থাকেন, তাঁদের সাফল্য নিজের মুখে তুলে ধরেন, সেই বিজ্ঞানীরা কীভাবে মোদী বিরোধিতা করছেন, প্রশ্ন তুলেছেন এক ‘চৌকিদার’। বিজ্ঞানীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, ভালো করে মাথা কাজে লাগাতে। ‘চৌকিদার’ বিষ্ণু ধানুকা, যাকে মোদী ট্যুইটারে ফলো করেন, তিনি জানাচ্ছেন যতজন অভিনেতা বা নাট্যকর্মী বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন, তাঁর আবেদনে এর চেয়ে ঢের বেশি মানুষ এদের সিনেমা, নাটক প্রত্যাখ্যান করবেন।
সবচেয়ে বেশি আক্রমণের মুখে যাঁকে পড়তে হচ্ছে, সেই অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ, বৃহস্পতিবারের বিবৃতির আগেও একাধিকবার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলে ভক্তদের আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন। এবার তাঁকে পড়তে হল ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখে। এক নেটিজেন দাবি করেছেন, নাসিরুদ্দিনের মতো মানুষরা এদেশের ‘ব্ল্যাক স্পট’। অশালীন আক্রমণের পর নাসিরুদ্দিন শাহকে দেশ ছাড়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। কেউ আবার জানাচ্ছেন, ‘সারফরোশ’ সিনেমায় নাসিরুদ্দিন যে পাকিস্তানী এজেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, বাস্তবেও তিনি তাই। এই কংগ্রেসভক্ত লেখক-সাহিত্যিক-অভিনেতারা আসলে পাকিস্তান, সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও রোহিঙ্গাদের সমর্থনকারী বলে অভিযোগ করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ফলে যে ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা, এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বঘোষিত চৌকিদারদের সেই ‘ঘৃণার রাজনীতি’রই শিকার তাঁরা।
Comments are closed.