ঝাড়খণ্ডে ৪২৫ হেক্টর জমিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে ভোট ঘোষণার দু’সপ্তাহ আগে আদানি গোষ্ঠীকে বেনজিরভাবে এসইজেড ছাড়পত্র কেন্দ্রের

সম্প্রতি দেশের ৫ টি বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে আদানি গোষ্ঠী। গত সপ্তাহেই এই গোষ্ঠীকে ছত্তিসগড়ে অরণ্য এলাকায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে কয়লা খনির ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র। এবার সামনে এল আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা গিয়েছে, নির্বাচন ঘোষণার ঠিক ১২ দিন আগে মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থাকে ঝাড়খণ্ডে ১৪ হাজার কোটি টাকার তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে নজিরবিহীনভাবে স্পেশাল ইকনমিক জোন (এসইজেড) তকমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও একক বা বিচ্ছিন্ন তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পকে এভাবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হল বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রককে বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত নির্দেশিকায় বিশেষ সংশোধনীও আনতে হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
মূলত রফতানি বাড়ানোর লক্ষ্যে স্পেশাল ইকনকিম জোন (এসইজেড) তকমা দেওয়া হয়। এসইজেড তকমা পেলে বিভিন্ন কর প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধা এবং ছাড় পায়। আদানি পাওয়ারকে এসইজেড তকমা দেওয়ার ফলে আরও বিভিন্ন সুবিধার পাশাপাশি মোদী ঘনিষ্ঠ সংস্থাটির বহু অর্থ সাশ্রয়ও হবে। ঠিক কতটা সুবিধা আদানি পাওয়ারের হবে তা পরিষ্কার হবে একটি ছোট্ট উদাহরণ থেকেই। ‘ক্লিন এনার্জি সেস’ বাবদ মোটা টাকা সরকারকে দিতে হয় সংস্থাগুলিকে। কিন্তু স্পেশাল ইকনমিক জোনের তকমা পাওয়া আদানি পাওয়ার প্রজেক্টকে ‘ক্লিন এনার্জি সেস’ বাবদ একটি টাকাও দিতে হবে না। শুধু এভাবেই বছরে আদানি গোষ্ঠীর সাশ্রয় হবে ৩২০ কোটি টাকা!
আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেড বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করার জন্য রাজ্যের গোড্ডা জেলার মোতিয়া, মালি, গাইঘাট গ্রামের ৪২৫ হেক্টর জমি চিহ্নিত করে। তার মধ্যে ২২২.৬৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ এবং বাকি ২০২.৩২ হেক্টর জমির ক্ষেত্রে নীতিগত ছাড়পত্রও তারা পেয়ে গিয়েছে। আদানিদের প্রকল্পে ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করে দুটি ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ইউনিট তৈরি হবে। ২০২২ সালের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আদানিদের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, ঝাড়খণ্ডের এই গোড্ডা প্লান্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০০ শতাংশই রফতানি করা হবে বাংলাদেশে। আর সমস্যা বেধেছে এখানেই। ঝাড়খণ্ডের আইন অনুযায়ী, সে রাজ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি হলে, রাজ্যে অন্তত ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ দিতেই হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বেনজিরভাবে এসইজেড তকমা পাওয়ার পর আদানিদের সেই বাধ্যবাধকতাও আর থাকছে না। ফলে ঝাড়খণ্ডকে বঞ্চিত হতে হবে বলেও মনে করছেন রাজ্যের মানুষের একাংশ। ঝাড়খণ্ড সহ গোটা ভারতে যখন বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমবর্ধমান এবং জোগান নামমাত্র, সেখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের তকমা দিয়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। পাশাপাশি, বিচ্ছিন্নভাবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এসইজেড তকমা পাওয়া নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক।

Comments are closed.