কর্মসংস্থান থেকে কৃষিঃ এডিআর-এর সমীক্ষায় বড় ধাক্কা মোদী সরকারের, সব মাপকাঠিতেই সাধারণের চেয়েও খারাপ ফল ‘আচ্ছে দিনে’র সরকারের

আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই দেশজুড়ে শুরু হয়ে যাবে লোকসভা ভোট। আসন্ন লোকসভা ভোটে কী কী বিষয় মাথায় রেখে ভোট দেবেন দেশের কোটি কোটি মানুষ? সন্ত্রাসবাদ নাকি কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য অথবা দুর্নীতি, কোনটি এবারের ভোটের নির্ণায়ক ইস্যু হয়ে উঠবে?
২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দেশের ৫৪৩ টি লোকসভা কেন্দ্রের ২ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪৮৭ জন ভোটারের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়েছিল অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস বা এডিআর। তাতেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য, কর্মসংস্থান থেকে কৃষি, গণপরিবহণ থেকে সেচের জল, অধিকাংশ মাপকাঠিতেই সাধারণের থেকেও কম নম্বর পেয়েছে ‘আচ্ছে দিনের’ সরকার। যদিও এই সমীক্ষার পর কাশ্মীরে জঙ্গি হানা থেকে সার্জিকাল স্ট্রাইকের মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে, নির্বাচনে যার প্রভাব কী হতে পারে তা স্বাভাবিকভাবেই এই সমীক্ষায় উঠে আসেনি।
এডিআর তার সমীক্ষায় মূলত তিনটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিল। প্রথমত, ভোটারদের অগ্রাধিকারের তালিকায় কোন কোন ইস্যু রয়েছে। দ্বিতীয়ত, সেই সমস্ত ইস্যুতে সরকারকে কত নম্বর দিচ্ছেন ভোটাররা এবং তৃতীয়ত কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে বদলে যেতে পারে ভোটদানের প্রবণতা।
সমীক্ষায় পানীয় জল, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, খাদ্যের যোগান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণপরিবহণের মতো মোট ৩১ টি বিষয় রাখা হয়েছিল, যেগুলি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও জীবিকার সঙ্গে জড়িত। সমীক্ষার প্রথমেই ভোটারদের ৫ টি অগ্রাধিকারের বিষয় তালিকায় নথিভুক্ত করা হয়। তারপর সেই বিষয়গুলির সঙ্গে সরকারের কাজের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট তৈরি করা হয়। শেষে খুব ভালো, সাধারণ এবং খারাপ, এই তিনটি পৃথক মাপকাঠিতে ফেলা হয় সাধারণ ভোটারের অগ্রাধিকার এবং সেই সূত্রে সরকারের কাজকে। খুব ভালোর মান রাখা হয় ৫, সাধারণ ৩ এবং খারাপের মাপকাঠি ১। মোট ৩১ টি বিষয়ের মধ্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ১০ টি ইস্যুকে বেছে নেওয়া হয়েছে সমীক্ষার রিপোর্টে।
দেশের ৫৪৩ টি লোকসভা কেন্দ্রের ২ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪৮৭ জন ভোটারের ওপর করা এডিআরের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, কর্মসংস্থানকে দেশের সরকার নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি ভাবছেন সমীক্ষার ৪৬.৮০ শতাংশ মানুষ। সরকারের পারফরমেন্স কেমন? সমীক্ষায় উঠে এসেছে ভোটাররা সরকারকে কর্মসংস্থান ইস্যুতে ২.১৫ নম্বর দিয়েছেন। অর্থাৎ সাধারণের চেয়ে খারাপ।
এরপর স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে ভোট দেওয়ার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সমীক্ষার ৩৪.৬০ শতাংশ মানুষ। এক্ষেত্রে তাঁরা মনে করছেন সরকার মাত্র ২.৩৫ নম্বর পাওয়ার যোগ্য। যার অর্থ, এক্ষেত্রেও সরকারের স্কোর সাধারণের চেয়ে খারাপ।
পানীয় জল। সমীক্ষার ৩০.৫০ শতাংশ মানুষ পানীয় জলকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম নির্ণায়ক বলে মনে করছেন। তাদের মতে সরকারকে এক্ষেত্রে দেওয়া যেতে পারে ২.৫২ নম্বর। অর্থাৎ, সাধারণের চেয়ে খারাপ।
সমীক্ষায় ২৮.৩৪ শতাংশ মানুষ মনে করছেন রাস্তাঘাট ভোটের অন্যতম ইস্যু। সরকার তাদের কাছ থেকে পেয়েছে ২.৪১ নম্বর, যা সমীক্ষার মাপকাঠিতে সাধারণের চেয়ে খারাপ।
এরপর আসছে উন্নত গণপরিবহণ। সমীক্ষায় ২৭.৩৫ শতাংশ মানুষই মনে করেন উন্নত গণপরিবহণ আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রধান ইস্যু। সরকারকে তারা দিচ্ছেন সাধারণের চেয়ে খারাপ, ২.৫৮ নম্বর।
এরপর সমীক্ষায় অন্যতম প্রধান ইস্যু হিসেবে উঠে আসছে চাষের কাজে জলের জোগান। শতকরা ২৬.৪০ জন মানুষ মনে করেন এটাই এবারের ভোটের প্রধান ইস্যু। সরকারকে এক্ষেত্রে মাত্র ২.১৮ নম্বর দিচ্ছেন তারা। যা ফল হিসেবে সাধারণের চেয়ে খারাপ।
সমীক্ষায় ২৫.৬২ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, কৃষিকাজের জন্য ঋণের জোগান এই লোকসভার সবচেয়ে বড় ইস্যু হতে চলেছে। এক্ষেত্রেও সরকার সাধারণের চেয়ে খারাপ কাজ করেছে বলে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে। সরকার পেয়েছে ২.১৫ নম্বর।
উৎপাদিত ফসলের বিক্রয়মূল্যকে ২৫.৪১ শতাংশ মানুষ সবচেয়ে বড় বিষয় বলে মনে করছেন। তারা সরকারকে এবিষয়ে ২.২৩ নম্বর দিয়েছেন, যা সমীক্ষার মাপকাঠিতে সাধারণের চেয়েও খারাপ ফল।
কৃষিকাজে প্রয়োজনীয় বীজ এবং সার কিনতে সরকারি ভর্তুকিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে মনে করছেন ২৫.০৬ শতাংশ মানুষ। এই বিষয়ে সরকার পেয়েছে ২.০৬ নম্বর। এক্ষেত্রেও সরকারের ফল সাধারণের চেয়ে খারাপ।
আইন শৃঙ্খলাকে আসন্ন নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে ভাবছেন সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ২৩.৯৫ শতাংশ মানুষ। তারা এক্ষেত্রে সরকারকে দিয়েছেন ২.২৬ নম্বর। আইন শৃঙ্খলা ক্ষেত্রেও সরকারের পারফরমেন্স সাধারণের চেয়ে খারাপ বলে এডিআরের সমীক্ষায় প্রকাশ।
অর্থাৎ, কর্মসংস্থান হোক কিংবা কৃষি, ভোটারদের চোখে সবকটি ইস্যুতেই বর্তমান সরকার সাধারণের চেয়ে খারাপ কাজ করেছে। এবং সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, ২০১৭ সালে একই সমীক্ষায় যে ইস্যুগুলি প্রথম দশে উঠে এসেছিল, ২০১৮ সালের সমীক্ষাতেও তার কোনও বদল হয়নি। কিন্তু সমীক্ষার যে ফল উঠে এসেছে, তাতে সাধারণের চাইতেও খারাপ কাজ করেছে সরকার। যা শাসক দলের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট।

Comments are closed.