Arogya Setu App কী? কীভাবে কাজ করে? করোনা সংক্রমণ রুখতে কার্যকরী হবে এই অ্যাপ?

করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশে ভাষণে যে যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তার একটি ছিল Aarogya Setu App. প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনার সংক্রমণ রুখতে  আরোগ্য সেতু অ্যাপ অবশ্যই ডাউনলোড করুন আপনার স্মার্ট ফোনে৷ অন্যদেরও এই অ্যাপ ডাউনলোড করতে অনুপ্রাণিত করুন।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে এবং মানুষকে সতর্ক করতে গত ২ এপ্রিল এই অ্যাপ আনে কেন্দ্রীয় সরকার। অ্যাপ্লিকেশনটি লঞ্চ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪ কোটির বেশি মানুষ ডাউনলোড করেছেন এই Aarogya Setu App. কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ একটি ট্যুইটে জানান, ৬ কোটির থেকে বেশি ডাউনলোড হয়েছে অ্যাপটি।

 

কীভাবে কাজ করে আরোগ্য সেতু অ্যাপ?

গুগল প্লে স্টোর (Google Play Store) থেকে প্রচুর মানুষ এই অ্যাপ ডাউনলোড করলেও গুজব রটে, এই অ্যাপ ব্যবহার করা বিপজ্জনক। কারণ, জনগণের উপর নজরদারি করতেই নাকি এই অ্যাপ এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও আন্তর্জাতিক মহলে ভারত সরকারের এই অ্যাপের প্রশংসা করা হয়েছিল। এর মধ্যে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয় আড়িপাতা বা নজরদারির খবর একেবারেই ভিত্তিহীন এবং স্রেফ গুজব।

 

Arogya Setu অ্যাপের খুঁটিনাটি

ব্যবহারকারীর নাম, ঠিকানা, বয়স কোনও তথ্যই জানতে চাইবে না Arogya Setu App. এটি নতুন ভার্সনের অ্যাপের জন্য প্রযোজ্য। তবে পুরনো ভার্সনেও ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। আরোগ্য সেতু অ্যাপে ব্যবহারকারীর নাম, ঠিকানা, বয়স, জীবিকা, গত ৩০ দিনে কোনও বিদেশ সফর করেছেন কি না, এই সব তথ্য দিতে বলা হলেও তা বাধ্যতামূলক নয়। এই অ্যাপ ইনস্টল করার পরে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) চাওয়া হয়। যাতে সাইবার অপরাধীদের থেকে কবল থেকে তথ্য রক্ষা করা যায়। মোবাইল নম্বর ছাড়া আর কোনও ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হয় না এই আরোগ্য সেতু অ্যাপে। অন্যান্য বেশ কিছু অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় স্মার্টফোনের ফাইলস, গ্যালারি, কন্ট্যাক্টস, ক্যামেরা, এসএমএস ইত্যাদি অ্যাকসেসের জন্যও অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু Arogya Setu App তা নয়। মোবাইলের লোকেশন আর ব্লুটুথের সাহায্যে করোনা সংক্রান্ত যাবতীয় আপডেট দিতে সক্ষম এই অ্যাপ।

 

Arogya Setu অ্যাপের সুবিধা

ব্যবহারকারীর পরিচিত অথবা সম্প্রতি যোগাযোগ হয়েছে এমন কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হন, এই অ্যাপ সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ট পাঠাবে। ব্যবহারকারীর এলাকায় কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি দেখা গেলে তা নিয়েও ব্যবহারকারীকে সচেতন করবে আরোগ্য সেতু। যে যে সংক্রমিত জায়গা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন, সেই তথ্যও চটজলদি দিয়ে দিতে পারে Arogya Setu App.

 

নিরাপত্তার প্রশ্নে কেন্দ্র প্লে স্টোরের বক্তব্য

কেন্দ্রের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ব্যবহারকারীদের মনিটর করার জন্যই এই অ্যাপ, নজরদারির কোনও প্রশ্নই নেই। এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে মানুষ যাতে করোনা সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পান, সেটাই মূল লক্ষ্য। ব্যবহারকারীরা স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে যাতে সচেতন করতেই আরোগ্য সেতু অ্যাপ। প্রায় একই কথা জানাচ্ছে গুগল প্লে স্টোরও।

 

আঞ্চলিক ভাষায় আপডেট

করোনা সংক্রান্ত আপডেটের জন্য বেশ কিছু অ্যাপ আছে। কিন্তু সেগুলি প্রায়ই ইংরেজি এবং অন্যান্য বিদেশি ভাষায়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের বোধগম্যের জন্য আরোগ্য সেতু অ্যাপে মোট ১১ টি ভাষার অপশন রয়েছে। আগামী দিনে আরও ভাষার অপশন নিয়ে আসা হবে বলে জানানো হয়েছে সরকারের তরফে।

 

কীভাবে ব্যবহার করবেন এই করোনা সম্পর্কিত অ্যাপ (How to Use Arogya Setu App?)

how to use Arogya Setu App

 

প্রথমে অ্যাপ স্টোরে গিয়ে ডাউনলোড করে ফেলতে হবে আরোগ্য সেতু অ্যাপ। ১১টি ভাষার মধ্যে বেছে নিতে হবে নিজের পছন্দের ভাষা। এরপর ‘Register Now’ অপশনে ক্লিক করে সমস্ত নিয়মবিধি জেনে নিতে হবে। তারপর, ‘I Agree’ অপশন প্রেস করতে হবে। লিঙ্গ, নাম, বয়স এবং জীবিকা তালিকা পূরণ করতে হবে। যদিও এগুলি দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি জানতে পারবেন না। স্বেচ্ছাসেবক হতে চাইলে বক্সে টিক। এরপর ক্লিক করতে হবে ‘Submit’ অপশনে। সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সাম্প্রতিক সমস্ত তথ্য পেতে শুরু করবেন ব্যবহারকারী।

 

আনইনস্টল করলে Arogya Setu অ্যাপে কোনও তথ্য জমা থাকবে না

যখন খুশি Arogya Setu App আন-ইনস্টল করে দিতে পারেন ব্যবহারকারী। তাতে মোবাইল নম্বর বা অন্যান্য তথ্যও আরোগ্য সেতু অ্যাপ থেকে মুছে যাবে। দ্বিতীয়বার যদি কেউ আবার এই অ্যাপ ইনস্টল করেন, তাহলে নতুন করে তাঁকে আবার মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

 

কীভাবে কমবে করোনা সংক্রমণ?

প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাস নিয়ে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছেন গবেষকরা। বারবার এই ভাইরাসের চরিত্র বদল হচ্ছে। এই অবস্থায় সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, সুষম খাবার খাওয়া, শারীরিক অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে ফিট রাখার মতো সতর্কতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

 

যে সব জায়গায় বেশি মানুষ জমায়েত করেন, সেই সব স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে করোনা নিয়ে অতিপ্রচার, অপপ্রচার এবং বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে। যা বিশ্বাস করলে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি। তাই গুজবে কান দেবেন না। Social distancing মেনে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন করুন, সময়মতো ঘুমোন, হালকা ব্যায়াম করুন এবং অবশ্যই নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। কেবলমাত্র বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া সঠিক তথ্যের ওপর ভরসা রাখুন।

করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্যকারী এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত তথ্য নিজে জানুন আর পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখুন। তথ্যের জন্য কেবল নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত উৎস, যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় বা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) ওয়েবসাইট, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তি ও ঘোষণা, সংবাদমাধ্যমের দেওয়া তথ্যের উপর ভরসা রাখুন।

Comments are closed.