সায়নী বনাম অগ্নিমিত্রা, সপ্তম দফার ভোটে নজরের কেন্দ্রে আসানসোল দক্ষিণ

২৬ এপ্রিল বাংলার সপ্তম দফার নির্বাচন

একুশের নির্বাচনে প্রধান নির্ধারক শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছেন বাংলার মহিলা ভোটাররা। কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যে মহিলা ভোটারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪৯.০১%।

রাজনৈতিক দলগুলিও তাই মহিলা ভোটব্যাঙ্কের মন পেতে তৎপর। প্রায় প্রতিটি জনসভা থেকে তৃণমূল নেত্রী ‘বাংলার মা বোনেদের’ বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। পিছিয়ে নেই বিজেপিও। তাদের ইশতেহারে বাংলার নারীদের জন্য ঢালাও প্রতিশ্রুতির ঘোষণা রয়েছে।

অন্যদিকে পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে রাজ্য সরকারের মেয়েদের জন্য কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মত প্রকল্পগুলি এবার নির্বাচনে তৃণমূলকে ভোট বাক্সে বাড়তি ডিভিডেন্ট দিতে পারে।

ভোটারদের পাশাপাশি, বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকায়ও নারী শক্তির জয়জয়কার। ২৬ এপ্রিল বাংলার সপ্তম দফার নির্বাচন। আর এই দফায় সবথেকে হাইভোল্টেজ কেন্দ্রটির নাম আসানসোল দক্ষিণ। কারণ, এই কেন্দ্রের যুযুধান দুই পক্ষের প্রার্থীর নাম।

আসানসোল দক্ষিণে তৃণমূল প্রার্থী টলিউডের পরিচিত মুখ অভিনেতা সায়নী ঘোষ। বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল, টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সরাসরি যোগ না থাকলেও গ্ল্যামার জগতের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

আসানসোল দক্ষিণে সায়নীর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরেই এই কেন্দ্র আরেকবার খবরে উঠে আসে। আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রটি আসানসোল লোকসভার মধ্যে পড়ে। মোদী জমানায় বাংলায় যে দুটি কেন্দ্রে বিজেপির উত্থান হয় তার মধ্যে একটি আসনসোল দক্ষিণ। ২০১৪ লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় এই কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন।

২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের তাপস চ্যাটার্জি বিধানসভা ভোটে জিতেছিলেন। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের ফলাফলের দিক থেকে গেরুয়া শিবির অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূলের থেকে। উনিশে আসানসোল দক্ষিণে বিজেপি তৃণমূলের থেকে ৫৪ হাজার ভোটে এগিয়ে। এহেন আসনসোল জিততে তৃণমূলের ভরসা ‘স্ট্রিট ফাইটার’ সায়নী।

ভোট ময়দানে প্রথম হলেও রাজনীতি নিয়ে সায়নী সবসময় সরব থেকেছেন। তাঁর প্রতিবাদের হাত থেকে রক্ষা পাননি মমতা ব্যানার্জিও। যদিও সেসব এখন অতীত।
একটি টিভি-শোয়ে জয় শ্রী রাম নিয়ে সায়নীর করা মন্তব্যের জেরে বিজেপি সমর্থকদের রোষানলে পড়তে হয় তাঁকে। সায়নীকে বিজেপি সমর্থকদের করা মন্তব্যের জোরালো প্রতিবাদ করেন মুখ্যমন্ত্রী। শেষে তৃণমূলে যোগ এবং টিকিট প্রাপ্তি। রাজ্য রাজনীতিতে নাটকীয় উত্থান সায়নীর।

নাম ঘোষণা হওয়ার পরেই কার্যত আসানসোল দক্ষিণের গলি, মহল্লা চষে ফেলছেন অভিনেতা। তাঁর শারীরিক ভাষায় প্রমাণিত উনিশের ফলাফল নিয়ে বিন্দু মাত্র চিন্তিত নন তিনি। তবে তাঁর লড়াইয়ে ছোট্ট কাঁটা, বহু বছর আগের একটি ট্যুইট। সায়নীর দাবি ট্যুইটটি তিনি করেননি, তবে বিরোধীরা তা মানতে নারাজ।

অন্যদিকে সায়নীর মত নবাগত না হলেও রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রারও উত্থান ধূমকেতুর মতই। গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েই রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী। এই অল্প সময়ের ব্যবধানেই তিনি একজন পেশাদার রাজনীতিক হয়ে উঠেছেন। তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে বহিরাগত ইস্যুতে শান দিলেও অগ্নিমিত্রা সেদিক থেকে আসানসোলের ভুমিকন্যা। ঘরের মেয়ের পরিচয় নিয়ে একুশের হাইভোল্টেজ নির্বাচন লড়তে চাইছেন। জড়িয়েছেন বিতর্কেও।

এহেন চর্চিত, পরিচিত দুই মুখ আসানসোল দক্ষিণের প্রার্থী। ভোটের ময়দানে ডেবিউ করলেও একুশের প্রার্থী তালিকায় হেভিওয়েট তাঁরা। গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রির দুই তারকার লড়াইয়ে বিজেপি উনিশের মার্জিন ধরে রাখতে পারে, নাকি ২০১৬ এর পুনরাবৃত্তি করে ঘাসফুল শিবির তাদের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করে, জানা যাবে ২ মে।

Comments are closed.