‘উমর খালিদকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়নি,’ সাংবাদিকের অসত্য বয়ান সম্বলিত ভিডিও ভাইরাল

দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবের সামনে দিল্লি জেএনইউয়ের ছাত্র উমর খালিদকে লক্ষ্য করে গুলি চালনার খবরে সোমবার বিকেল থেকে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। ঘটনার পরই এক সাংবাদিক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন, গুলি চালনার সময় উমর খালিদ ছিলেন না। অন্য এক সাংবাদিক সেই খবর ট্যুইট করেন, যা ১৬০০ বার রিট্যুইট হয়। পুরো ঘটনা নিয়ে খবর করেছে altnews.in. সেই খবর হুবহু প্রকাশ করলাম আমরা।

সোমবার দুপুরের পরই খবরটা ছড়িয়েছিল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। দিল্লি জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উমর খালিদকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবের বাইরে ঘটনাটি ঘটে। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন উমর। বন্দুক ফেলে পালিয়ে যায় ওই দুষ্কৃতী।
খবরটা জানাজানি হতেই তুমুল আলোড়ন ছড়ায়। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর আরও একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। যেখানে সন্তোষ কুমার নামে দৈনিক ভাস্কর সংবাদপত্রের এক সাংবাদিককে বলতে শোনা যায় যে, কনস্টিটিউশন ক্লাবের বাইরে গুলি চালনার একটি ঘটনা ঘটলেও, সে সময় উমর খালিদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ভিডিওটিতে ওই সাংবাদিক দাবি করেন যে, তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁর কথায়, কনস্টিটিউশন ক্লাবের গেটের কাছে একটি চায়ের দোকানের সামনে দুই ব্যক্তির মধ্যে তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতি শুরু হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি তখন অপর ব্যক্তিকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে, বন্দুক বার করে তাঁর দিকে গুলি চালাতে যান। তখন সেখানে উপস্থিত লোকেদের বাধায় ওই দুষ্কৃতী সেখান থেকে শুন্যে একটি গুলি ছুড়ে পালায়। সন্তোষের দাবি, ঘটনার সময় উমর খালিদ সেখানে উপস্থিতই ছিলেন না।
সন্তোষের এই বক্তব্য সম্বলিত ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যে ট্যুইটারে পোস্ট করেন এবিপি নিউজের সাংবাদিক ভিকাশ ভাদোরিয়া। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে এই ট্যুইটি ১ হাজার ৬০০ বার রি-ট্যুইট করা হয়। ডানপন্থী বহু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী সন্তোষ কুমারের এই ভিডিওকে সামনে রেখে বলতে শুরু করেন, আদতে আক্রান্ত হওয়ার মিথ্যা নাটক করছেন উমর খালিদ। postcard news-এর প্রতিষ্ঠাতাসহ আরও অনেকে, যাঁদের ট্যুইটারে ফলো করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তাঁরা সন্তোষ কুমারের এই ভিডিওটি শেয়ার করতে শুরু করেন।
এরপর, গুলি চালনার ঘটনার সময় উমর খালিদ ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে বহু পোস্ট ফেসবুকেও ছড়ায়।
কিন্তু এর পরেই আবার নয়া মোড় নেয় এই ঘটনা পরম্পরা। এতক্ষণ ধরে যিনি ট্যুইটারে নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করে ভিডিও বার্তায় বলে আসছিলেন যে, উমর খালিদ ঘটনার সময় ওই জায়গায় উপস্থিত ছিলেন না, সেই সাংবাদিক সন্তোষ কুমার নিজের বয়ান বদল করেন। পরে তিনি জানান, যাঁকে লক্ষ করে গুলি চালাতে যাচ্ছিলেন ওই দুষ্কৃতী তাঁকে তিনি ঠিকমতো দেখতে পাননি। মাটিতে পড়ে যাওয়া ওই ব্যক্তি উমর খালিদ ছিলেন, নাকি অন্য কেউ তাও তিনি বলতে পারবেন না।
পরে এবিষয়ে সত্যাসত্য জানতে চেয়ে altnews-এর পক্ষ থেকে উমর খালিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান, সোমবার কনস্টিটিউশন ক্লাবের বাইরে একটি চায়ের দোকানের কাছেই ঘটনাটি ঘটে। উমরের দাবি, যখন তাঁরা সেই স্থান থেকে চলে আসছিলেন, সেই সময় পিছন থেকে এসে এক ব্যক্তি তাঁকে আক্রমণ করেন। তাঁর ঘাড় চেপে ধরে তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়, ফলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। সে সময় ওই দুষ্কৃতী বন্দুক বার করে তাঁর দিকে তাক করে। উমরের দাবি, উপস্থিত বুদ্ধির জেরে তিনি ওই দুষ্কৃতীর হাত সরিয়ে দেওয়ায়, লক্ষ্যে সফল হয়নি ওই ব্যক্তি। উমরের বন্ধুরাও তাকে বাধা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়, পরে ওই অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে উমরের সাংবাদিক বৈঠকের একটি ভিডিও পোস্ট করে altnews.
একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, উমর খালিদ ও সন্তোষ কুমার দু’জনেই ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছেন তা প্রায় এক। মূল পার্থক্য একটি জায়গায়, উমরের দাবি, তাঁকে লক্ষ্য করেই গুলি চালাতে গিয়েছিল দুষ্কৃতী। আর সন্তোষের দাবি, ঘটনার সময় উমর খালিদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। পরে নিজের এই বয়ানই আবার পরিবর্তন করে সন্তোষ কুমার জানিয়েছেন, উমর খালিদ সেখানে ছিলেন কীনা তিনি নিশ্চিত নন।
পরে altnews-এর পক্ষ থেকে উমর খালিদের সঙ্গী এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত বনজ্যোৎস্না লাহিড়ীর সঙ্গেও কথা বলা হয়। বনজ্যোৎস্না জানান, তাঁরা সকলেই ভেনাসের বাইরে চা খেয়ে যখন ফিরে আসছিলেন, সেসময় একজন পিছন থেকে এসে চেপে ধরে উমরকে। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন ওই ব্যক্তি উমরের পূর্ব পরিচিত কেউ হবেন। ওই ব্যক্তি উমরকে মাটিতে ফেলে দেন। সেই সময় বনজ্যোৎস্না উমরের বাঁ পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই ব্যক্তির ডান হাতে বন্দুক ছিল, যা প্রথমে তিনি লক্ষ করেননি বলে জানিয়েছেন বনজ্যোৎস্না। এরপর ওই দুষ্কৃতীকে তাঁরা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। পরে উমর খালিদকে কনস্টিটিউশন ক্লাবের গেটের ভিতর ঢুকিয়ে তাঁরা ওই দুষ্কৃতীকে ধাওয়া করলে, সে একটি গুলি চালিয়ে মাটিতে বন্দুক ফেলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। উমরের সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সারিক হুসেন নামে এক ব্যক্তিও এই একই কথা জানিয়েছেন। সারিক বলেছেন, বন্দুকটি উমরের পেটে চেপে ধরেছিল ওই দুষ্কৃতী, তখন তিনি ওই দুষ্কৃতীর হাতে লাথি মারেন, ফলে সে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়াও উত্তাল এই ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে। অনেকে সন্তোষ কুমারের ভিডিওর প্রসঙ্গ টেনে জানিয়েছেন যে, উমর মিথ্যা কথা বলছেন। যদিও ইতিমধ্যেই সেই সাংবাদিক নিজের বয়ান বদল করেছেন।

Comments are closed.