মহারাষ্ট্রের গ্রামে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খরচ কমিয়ে গ্রামবাসীরা স্কুলের জন্য কিনে দিলেন ২ একর জমি, তৈরি হল আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব

মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের পোখরি গ্রাম। এখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশই নিরক্ষর, কেউ কেউ স্কুলের পাঠ শেষ করে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা আগামী প্রজন্মকে কিছুতেই তাঁদের পথে যেতে দিতে চান না। তাই কিছুদিন আগে নিজেদের উদ্যোগে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংস্কার করে বাড়ির কচিকাঁচাদের শিক্ষার বন্দোবস্ত করেছিলেন। এবার নিজেদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খরচ কাটছাঁট করে জেলা পরিষদ স্কুল সংস্কারে হাত লাগালেন তাঁরা।
মাস তিনেক আগে পোখরির গ্রামবাসীরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এবার তাঁদের এক সপ্তাহব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘ভগবত সপ্তাহ’-এ খরচ কমিয়ে সেই টাকা দিয়ে স্কুলের উন্নয়ন করা হবে। নিজেদের বাড়ির ছেলে-মেয়েরা যেন দামি বেসরকারি স্কুলের মতো সুযোগ-সুবিধা পায়, এটাই তাঁদের লক্ষ্য। গ্রামবাসীদের এই উদ্যোগে উৎসাহ দিয়ে তাদের পাশে ছিল ঔরঙ্গাবাদ জেলা পরিষদ।

বর্তমানে স্কুলটি মাত্র ২০ হাজার স্কোয়ার ফিট এলাকা জুড়ে রয়েছে। গ্রামবাসীরা দুই একর জমি কিনে এলাকার একমাত্র স্কুলের ক্যাম্পাস বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এর প্রধান উদ্যোক্তা বালাসাহেব ভোঁসলে জানান, স্কুল ক্যাম্পাস বাড়ানোর জন্য তিন মাস আগে থেকে টাকা জমানো শুরু করেন গ্রামবাসীরা। তাই প্রথমেই গ্রামবাসীরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খরচ কমাতে থাকেন। এমনকী তাঁরা অন্যতম প্রধান উৎসব ‘ভাগবত সপ্তাহ’-র খরচেও রাশ টানেন। বরং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এক জায়গায় ডাল রান্না করে এবং যে যার বাড়ি থেকে চাপাটি এনে একসঙ্গে বসে খাবার খান তাঁরা। একদিকে যেমন সবাই মিলে আনন্দ করে খাবার খাওয়া হয়, তেমনি বাড়ি বাড়ি রান্নার খরচও কমে যায়। এইভাবে ১০ লক্ষ টাকার তহবিল তৈরি করে তাঁরা স্কুলের কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করেছেন। এই কাজের জন্য গ্রামপঞ্চায়েত থেকে ৫০ হাজার টাকা সাহায্য এসেছিল, বাদবাকি টাকা যোগান গ্রামবাসীরা।
পোখরি গ্রামে মোট সাড়ে চারশো বাড়ি। প্রতি বাড়ি থেকে ন্যূনতম সাহায্য নেওয়া হয় ৫ হাজার টাকা। এরপর যাঁদের পাঁচ একরের বেশি জায়গা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে চাঁদার পরিমাণ ধার্য হয় একর প্রতি ১০০০ টাকা।

এইভাবে গ্রামবাসীর এখনকার উদ্দেশ্য হল স্কুল ক্যাম্পাস বাড়ানো। বর্তমানে স্কুলটির ছাত্র সংখ্যা ২৪০ জন। স্কুলটির উন্নতির সঙ্গে আশেপাশের গ্রাম থেকেও ছাত্রদের ভিড় বাড়ছে। তাদের অভিভাবকরা এই মহান উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়াতে চাইছেন।

Comments are closed.