শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও এক আইনজীবী করবেন অযোধ্যা মামলার মধ্যস্থতা

মধ্যস্থতার মাধ্যমে অযোধ্যা জমি মামলা মেটানোর পথেই হাঁটল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইব্রাহিম কলিফুল্লার নেতৃত্বে আর্ট অফ লিভিং-খ্যাত শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর এবং সিনিয়র আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চু, এই তিনজনের প্যানেল অযোধ্যা জমি মামলার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করবেন। ফৈজাবাদে হবে মধ্যস্থতা।

মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া চলবে গোপনে। প্রক্রিয়া চলাকালীন তা নিয়ে সংবাদমাধ্যম কোনও খবর করতে পারবে না বলে এদিন জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানায়, এক সপ্তাহের মধ্যেই কাজ শুরু করে দেবে মধ্যস্থতাকারীদের প্যানেল। ৮ সপ্তাহের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। ৪ সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে হবে প্রথম স্টেটাস রিপোর্ট।

এবারই প্রথম নয়, অযোধ্যা মামলার নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এর আগেও মধ্যস্থতার চেষ্টা হয়েছে। ৯-এর দশকে প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর থেকে শুরু করে গতবছর শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর, একাধিকবার মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া চললেও, সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনও সমাধানসূত্র তা থেকে বেরোয়নি, মেটেনি সমস্যা। বছর দুয়েক আগে তত্কালীন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর মধ্যস্থতার মাধ্যমে অযোধ্যা মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও পক্ষের কাছেই সেই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য মনে না হওয়ায়, ভেস্তে যায় মধ্যস্থতার পরিকল্পনা।

১৯৭৫ সালের ২০ অগাস্ট আইনজীবী হিসেবে জীবন শুরু করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কলিফুল্লা। শ্রম আইনের উপর কাজ করতে তারপর তিনি যোগ দেন ল ফার্ম ‘টি এস গোপালন অ্যান্ড কোং’-এ। ২০০০ সালের ২ রা মার্চ তাঁকে মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টের সদস্য হন তিনি। দু’মাসের মধ্যেই তাঁকে জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার দেওয়া হয়। সেবছরের সেপ্টেম্বরেই তাঁকে জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ২০১২ সালের ২ রা এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের তত্কালীন প্রধান বিচারপতি জাস্টিস এস এইচ কাপাডিয়া তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। বিচারপতি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে কাজ শুরু করেন জাস্টিস কলিফুল্লা। ২০১৬ সালের ২২ শে জুলাই সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবসর নেন বিচারপতি কলিফুল্লা। সুপ্রিম কোর্টে নিজের কর্মজীবনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিয়েছেন তিনি, সামলেছেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিসিসিআই প্রশাসন মামলা, চেন্নাই সিটি কর্পোরশনে নির্বাচন সংক্রান্ত মামলা। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে আয়োজিত বিচারপতি কলিফুল্লার ফেয়ারয়েল অনুষ্ঠানে তাঁর সম্বন্ধে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর। বিচারপতি কলিফুল্লা নিজের কর্মজীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরে। সেদিন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের বক্তব্যে উঠে এসেছিল জাস্টিস কলিফুল্লার সেই কাশ্মীর-বাসের কথা। তত্কালীন প্রধান বিচারপতি স্মরণ করেছিলেন, রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত চষে ফেলতেন জাস্টিস কলিফুল্লা। সাধারণ মানুষকে যাতে আইনের দরজায় পৌঁছতে কোনও অসুবিধার মুখে পড়তে না হয়, তা নিশ্চিত করেছিলেন জাস্টিস কলিফুল্লা, সেদিন মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি।

অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত মধ্যস্থতাকারীদের প্যানেলের অন্যতম সদস্য আর্ট অফ লিভিং এর স্রষ্টা শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর। এর আগেও তিনি মধ্যস্থতার মাধ্যমে অযোধ্যা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু গতবছরের সেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। গত বছর একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শ্রী শ্রী বলেছিলেন, বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি বিতর্কের দ্রুত সমাধান না হলে ভারতের অবস্থা হতে পারে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়ার মত। ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর বলেন, সিরিয়ায় চলা গৃহযুদ্ধে শেষ দুসপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে ৫২০ জনের। ভারতকে সেই অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যেকোনও মূল্যে রুখতে হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

Comments are closed.