Benefits of Sleeping Early – তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপকারিতা অনেক

”Early to bed, early to rise, makes a man, healthy, wealthy and wise.” বেঞ্জামিন ফ্র‍্যাঙ্কলিনের এই কথার সঙ্গে সবাই পরিচিত। ছোটবেলার স্কুল, পড়াশোনা, খেলাধুলোর রুটিনে রাতে তাড়াতাড়ি বিছানায় যাওয়া আর ভোরে ওঠায় প্রায় সবাই অভ্যস্ত হয়। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই সু-অভ্যাসটি দৈনিক রুটিন থেকে হারিয়ে যায়। যখন তখন খাওয়া-দাওয়া, কাজ, দৌড়ঝাঁপের মধ্যে ঘুমের ব্যাঘাত হয়। আর তার প্রভাব কিন্তু শরীরেই পড়ে। সুস্থ জীবন-যাপনের জন্য রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং সকালে বিছানা ছাড়ার একাধিক উপকারিতা আছে।

 

আসুন দেখে নেওয়া যাক, তাড়াতাড়ি ঘুমের কী কী উপকারিতা (Health Benefits of Sleeping Early)

health benefits of Sleeping Early

 

রোগ প্রতিরোধ

তাড়াতাড়ি ঘুমোলে মানুষের বুড়িয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা-সহ কয়েকটি মানসিক রোগ কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা যায়। এমনকী ক্যানসারের মতো ভয়ঙ্কর অসুখ-বিসুখও এড়ানো যায় ঘুমের রুটিন ঠিক থাকলে। এই অভ্যাস গড়ে তুললে পেটও আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে। যার প্রভাব পড়বে আপনার ত্বক ও চোখের সুস্থতায়। নিয়মিতভাবে রাতে তাড়াতাড়ি শুতে গেলে শরীরের নানা রোগ-ব্যাধির বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

 

ওজন নিয়ন্ত্রণ

কিছু মানুষ আছেন যাঁরা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিশ্রম ও খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু অনেকেই তারপরেও ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন। এর বড় কারণ হিসেবে দেখা যায় ঘুম।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীর নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। অপরদিকে পর্যাপ্ত ঘুমালে মানুষের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়ে যায়। তাছাড়া ডিপ্রেশনের মতো ভয়ঙ্কর অসুখ এড়াতে সঠিক সময়ে ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

 

কাজে উদ্যম

মানুষ মাত্রেই সব সময় আরও উদ্যমী ও সৃষ্টিশীল হতে চায়। আর তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়ার মাধ্যমে এ কাজ করা সম্ভব। দিনের কাজকর্ম চালানোর জন্য আপনি যখন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠবেন তখন আপনি আরও বেশি প্রাণবন্ত বোধ করবেন। যে কোনও কাজে আসবে উদ্যম। আর রাতে একটি ভালো ঘুমের পর দিনে আপনি সহজে ক্লান্ত বোধ করবেন না।

তাই সারাদিনকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে হলে রাতে যতটা সম্ভব আগে ঘুমাতে যেতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় রাত ৯ টা থেকে ১০টার মধ্যে ঘুমানোর পরিকল্পনা করতে পারলে।

রুটিনের মধ্যে দিনটাকে বেঁধে ফেললে প্রোডাক্টিভিটিও বেড়ে যায়।

 

সৌন্দর্য

beauty and sleep

 

শরীরের সৌন্দর্যের সঙ্গে ঘুমের গভীর সম্পর্ক। আপনি যদি তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান তাহলে তা আপনার ত্বকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে। পর্যাপ্ত ঘুম বাদ দিয়ে হাজার প্রসাধনী ব্যবহারেও কখনোই সৌন্দর্য রক্ষা করা যায় না।

 

সময় ব্যবস্থাপনা বা টাইম ম্যানেজমেন্ট

অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া এবং তাড়াতাড়ি ওঠা অসম্ভব বলে মনে হয়। বহু কাজে আটকে পড়ে রুটিন মাফিক ঘুমাতে যাওয়া যায় না। তখন অনেকেই ভাবি, প্রতিটি দিন যদি আরও কয়েক ঘণ্টা বড় হতো! কিন্তু এ ঘটনা ঘটে ভুল টাইম ম্যানেজমেন্টের জন্য। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা অনেক বেশি সৃষ্টিশীল কাজ করতে উৎসাহ দেয়।

 

বয়সের ছাপ

রাতে ঘুম ভালো না হলে মুখে বলিরেখা পড়ে এবং চোখের নিচে ‘আন্ডার-আই সার্কলস’ দেখা যায়। এ কারণে অনেক তরুণ তরুণীকেও বয়সের তুলনায় বয়স্ক বলে মনে হয়। কিন্তু তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গিয়ে পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে এ বিষয়গুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর এর ফলে মানুষকে কমবয়সী দেখায়। চেহারায় আসে স্বাভাবিক জেল্লা।

 

ভালো ঘুমের জন্য যা করা দরকার

দিনের বেলা যথেষ্ট ব্যায়াম বা পরিশ্রম ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিছানায় যাবার আগের চার ঘণ্টার মধ্যে ব্যায়াম না করলেই ভালো। কারণ এর ফলে শরীরে যে এ্যাড্রিনালিন নিঃসৃত হয়, তা আপনাকে ঘুমোতে দেবে না। কম ঘুমের সমস্যা থাকলে, দিনের বেলা- বিশেষ করে বিকেল ৪ টার পর না ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনার রাতে ঘুম হবার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।

 

আপনি কী খাচ্ছেন বা পান করছেন সেদিকে নজর দিন (Diet for A Good Sleep)

no alcohol before bed

 

ঘুমানোর আগে গুরুপাক আহার, চিনিযুক্ত খাবার বা মদ্যপান একেবারেই অনুচিত।

প্রকৃতপক্ষে ভালো ঘুমের প্রক্রিয়া শুরু হয় বিছানায় যাওয়ার অনেক আগে। মনে রাখবেন sleeping disorder কিন্তু আপনার কার্যক্ষমতা অনেকটাই কমিয়ে দেয়।

তাই ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে থেকেই ক্যাফেইন আছে এমন কোনও পানীয় গ্রহণ করা বন্ধ করে দিন। ক্যাফেইন এমন এক জিনিস যা আপনার শরীরে থাকে অন্তত ৯ ঘণ্টা। সুতরাং ভালো ঘুমের জন্য দিনের বেলার মধ্যে চা, কফি এবং কোক-পেপসির মতো ‘ফিজি ড্রিংকস’ পান করুন, রাতে নয়।

অনেকেই খালি পেটে ঘুমাতে পারেন না। কিন্তু একেবারে ভরপেট খেয়ে বিছানায় যাওয়ায় ঘুমের অসুবিধে করতে পারে। তাই ঘুমের অন্তত কয়েক ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। এবং তাতে ভারী গুরুপাক খাবার বা চিনি-যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এতে ঘুম না হওয়া বা রাতে জেগে ওঠার সমস্যা কেটে যাবে।

অ্যালকোহল বা মদ্যপান আপনাকে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করতে পারে বটে কিন্তু আপনার সেই ঘুম খুব গভীর হবে না। যাকে বলে ‘র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট’ বা ‘আরইএম স্লিপ’ যা মানুষের স্মৃতি ও শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অগভীর ঘুমে তার ক্ষতি হয়।

তা ছাড়া মদ্যপানের ফলে শরীরে বেশি প্রস্রাব তৈরি হয়, তাই রাতে টয়লেটের জন্য ঘুম ভেঙে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এই জিনিসগুলি মেনে চলুন। রুটিনমাফিক দিন কাটালে তার ভালো প্রভাব শরীরে পড়তে বাধ্য।

Comments are closed.