জানেন, আপনার মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করার সঠিক সময় কোনটি?

ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস যখন লাগাতার সুদ কমাচ্ছে, তখন দেশের মানুষের নতুন ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে মিউচুয়াল ফান্ড। কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডের জগত অনেকের কাছেই এখনও ধাঁধার মতো। কোন ফান্ড কখন ধরবেন, আর কখনই বা বিক্রি করবেন, তা ঠিক করতে হিমশিম খান সাধারণ মানুষ। অ্যাডভাইজার বা পরামর্শদাতারা উপদেশ দেন ঠিকই, কিন্তু অনেক সময়ই তাতে বিনিয়োগকারীর মুখ্য উদ্দেশ্য সাধিত হয় না বলে মনে করেন সিংহভাগ সাধারণ মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারী। এই প্রসঙ্গেই এবার গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিলেন ভ্যালু রিসার্চ সংস্থার সিইও ধীরেন্দ্র কুমার।
প্রথমেই তিনি বলছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ফান্ড কেনাবেচার ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সক্রিয় হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। এই প্রসঙ্গে ধীরেন্দ্র কুমার বলছেন, সাধারণ কতগুলো ধারণার কথা। প্রথমেই আসে সেই বিনিয়োগকারীরা, যাঁদের প্রশ্ন হয়, মিউচুয়াল ফান্ড লাভ করছে, সেই সময় ফান্ড বিক্রি করা কি ঠিক? দ্বিতীয় ধরনের ব্যক্তিরা মিউচুয়াল ফান্ড লস করলেই তা বেচে দেওয়ার পক্ষপাতী। আর তৃতীয় তথা শেষ ধরনের মানুষ, যাঁদের বিনিয়োগ করা মিউচুয়াল ফান্ড কোনও নির্দিষ্ট সময়ে লাভ বা ক্ষতি, কোনওটাই করছে না। সেক্ষেত্রে তাঁরা কী করবেন?
ভ্যালু রিসার্চের সিইও বলছেন, এই সব ক্ষেত্রে সাধারণত হাইপারঅ্যাকটিভ ইনভেস্টার্স বা অতি সক্রিয় বিনিয়োগকারীরা নির্ভর করেন বুকিং প্রফিটের অনুপাতের উপর। ধীরেন্দ্র কুমারের পরামর্শ, স্টক কিংবা ফান্ড, কোনওক্ষেত্রেই এখন আর বুকিং প্রফিট দিয়ে বিচার করা যায় না। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বুকিং প্রফিটের উপর নির্ভর করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লাভ করছে এমন ফান্ড বিক্রি করে দেন। তুলনায় খারাপ পারফর্মেন্স বা লোকসানে চলা ফান্ড ধরে রাখেন। এতে আখেরে বিনিয়োগকারীর লাভ হয় না, বরং তিনি বিনিয়োগ এবং পুনর্বিনিয়োগের ফাঁদে আটকে পড়েন। কারণ অ্যাডভাইজার যদি ভালো হন, তাহলে আপনার কোনও বিনিয়োগই দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে লোকসানে চলার কথা নয়, মনে করেন ধীরেন্দ্র কুমার।
এক্ষেত্রে ধীরেন্দ্র কুমার একটি সাধারণ মানসিকতার কথা বলছেন। তা হল, সাধারণভাবে এই প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের মনে উদয় হয়, কোনও একটি বছর তাঁর বিনিয়োগ করা ফান্ডে তিনি ২৫ শতাংশ অবধি লাভ করেছেন। কিন্তু অন্যান্য বেশ কিছু ফান্ডে লাভের হার ৩০ শতাংশ। তাহলে কি তিনি ৩০ শতাংশ লাভ দেওয়া ফান্ডে শিফট করবেন? এক্ষেত্রে ভ্যালু রিসার্চের সিইওর পরামর্শ, এক বছরের হিসেবে ফান্ড সুইচ করা আত্মহত্যার সামিল। কোনও ফান্ড যদি ধারাবাহিকভাবে লোকসানে চলতে থাকে, তাহলে অন্তত দু’বছর অপেক্ষা করে যান, এবং সেই সঙ্গে হিসেব করুন আন্ডার পারফর্মেন্স বা লোকসানের হার ঠিক কত?
ধীরেন্দ্র কুমারের মতে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখেন সামান্য লাভের মুখ দেখবেন বলে। কিন্তু কয়েক মাস খারাপ পারফর্মেন্স করলেই ফান্ড বিক্রি করে দেওয়া কিংবা লাভের মুখ দেখা ফান্ড বিক্রি করে দেওয়ার আগে সঠিক পর্যালোচনা জরুরি। তিনি বলছেন, নির্দিষ্ট লক্ষ্যের কথা ভেবে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করুন। যাতে বাজারের অবস্থা যেমনই হোক না কেন, সেই লক্ষ্যের কাছাকাছি সময় ফান্ড রিডিম বা ফান্ড বিক্রি করার স্বাধীনতা আপনার থাকে।
শেষে ধীরেন্দ্র কুমার বলছেন, সাধারণ মানুষের কাছে বিনিয়োগের প্রাথমিক শর্তই হল বিক্রি করে লাভের মুখ দেখা, পর্যায়ক্রমে বিনিয়োগের জাল বোনা নয়। তাই কোন ফান্ডে কত টাকা বিনিয়োগ করবেন, তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনই কোন লক্ষ্যে বিনিয়োগ করছেন, তাও সমান গুরুত্বের দাবি রাখে।

 

Comments are closed.