পঞ্চায়েতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজেপির স্লোগান এবং গানে সরাসরি বিরোধী জোট বার্তা, অস্বস্তিতে সিপিএম।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহুদিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে তলায়-তলায় জোট হয়েছে সিপিএম-বিজেপির। দু’দল এক হয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। যে অভিযোগ বারবারই উড়িয়ে দিয়েছেন সিপিএম এবং বিজেপি নেতারা।
এই অবস্থায়, পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রচারের জন্য রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে কয়েকটি গানের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে কিন্তু রয়েছে স্পষ্ট জোট বার্তা। সেই জোট শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে সমস্ত বিরোধী দলের। আর এই গানের লাইনই পঞ্চায়েত ভোটের আগে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে রাজ্যে শাসক দলের হাতে। কী রয়েছে বিজেপির এই গানের লাইনে, যা প্রকাশ্যে অস্বস্তিতে ফেলছে সিপিএমকে?
পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে সম্প্রতি রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে একাধিক গান তৈরি করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে স্লোগান, যার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘এবার বাংলা, চলো বদলাই’। এই গানগুলি প্রচার করা শুরু হয়েছে সোস্যাল মিডিয়ায়। গানগুলি ব্যবহার করা হবে ভোটের প্রচার অভিযানে। গানে সমস্ত বিরোধী দলকে জোট বার্তা দিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে, জোট বাঁধো একসাথে। বদলে দেব বাংলাকে আজ, সাথী হাত রাখো হাতে’। এরপরেই তৃণমূল কংগ্রেসের নাম না করে বলা হয়েছে, ‘কার সাথে আছো বড় কথা নয়, কার বিরুদ্ধে আছো’।
এর মানে কী তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দল-মত না দেখে সিপিএম, কংগ্রেসকে জোট বার্তা? তাই কি বলা হচ্ছে, ‘কার সাথে আছো বড় কথা নয়’? এ প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের জবাব, ‘আমরা চাই সবাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হোক। এখন কে কার সঙ্গে আছে দেখার সময় নয়। সবাইকে এক হয়েই লড়তে হবে।’ আর বিজেপি রাজ্য সভাপতির এই বক্তব্য এবং পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে তৈরি গানই চরম অস্বস্তিতে ফেলছে সিপিএম নেতাদের। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বক্তব্য, বিজেপি কী গান বানালো তাতে কিছু এসে যায় না। রাজ্যের মানুষ জানেন, কার সঙ্গে কার জোট আছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো অনেকদিন ধরেই বলছেন, সিপিএম আর বিজেপি এক। ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়েই পড়ল শেষ পর্যন্ত। আগে ছিল সিপিএম- কংগ্রেস জোট। এখন ওদের সঙ্গে বিজেপি যোগ হয়েছে। ওদের কাজ শুধু রাজ্যের উন্নয়নের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে গণ্ডগোল সৃষ্টি করা।
২০১৬ বিধানসভা বিধানসভা ভোটের পর যত উপনির্বাচন হয়েছে, সব ক্ষেত্রেই বিজেপির ভোট বেড়েছে, বামেদের ভোট কমেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভোট বেড়েছে তৃণমূলের। যার পরিপ্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই অভিযোগ করেছেন, সিপিএম-বিজেপি এক হয়েছে। সিপিএমের লোকজন বিজেপিকে ভোট দিচ্ছে। এমনকী কয়েক বছর আগে সিপিএম নেতা বিমান বসু বাম নেতাদের নিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীকে ডেপুটেশন দিতে গেলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনাদের ভোট বিজেপিতে চলে যাচ্ছে কেন’? সম্প্রতি ত্রিপুরায় সিপিএম লড়াই না করে বিজেপির কাছে আত্মসমর্থন করেছে বলেও মত তৃণমূল নেত্রীর। এরই মধ্যে সম্প্রতি বিতর্ক তৈরি হয়েছে নদিয়ার করিমপুরের একটি দেওয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে। যেখানে বাম এবং বিজেপি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসেবে পঞ্চায়েত ভোটে লড়ছেন জনৈক বিপ্লব প্রামানিক নামে এক ব্যক্তি। গোটা ইস্যুতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, সিপিএম-কংগ্রেস জোট কিছু করতে পারেনি। সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি জোটও কিছু করতে পারবে না। রাজ্যের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের সঙ্গে আছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.