খুনিদের আড়াল করতে জয় শ্রীরাম স্লোগান কেন? প্রশ্ন বুলন্দশহর কাণ্ডে মৃত পুলিশ ইন্সপেক্টরের স্ত্রীর

যাদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করা উচিত, তাদেরই মালা পরিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনি দিয়ে কার্যত এই স্লোগানকেই অপমান করা হচ্ছে। উত্তর প্রদেশের বুলন্দশহরে পুলিশ অফিসার সুবোধ কুমার সিংহের হত্যায় অভিযুক্ত ৭ জনের জামিনে মুক্তি এবং তাদের বরণ করে নেওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর এমনই প্রতিক্রিয়া মৃত অফিসারের স্ত্রী রজনী সিংহের।
শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ ইন্সপেক্টর সুবোধকুমার সিংহ খুনে অভিযুক্ত ৭ জন জামিনে মুক্তি পায়। বুলন্দশহর জেলের বাইরে তাদের অপেক্ষায় ছিল সমর্থকেরা। পুলিশ খুনের মামলায় অভিযুক্ত বিজেপির যুব মোর্চা সদস্য শিখর আগরওয়াল জেল থেকে বেরোতেই তাদের গাঁদা ফুলের মালা, জয় শ্রীরাম, ভারত মাতা কি জয় স্লোগানের মধ্যে দিয়ে বরণ করে নেয় সমর্থকেরা।
এই ঘটনার কড়া সমালোচনা করেছে মৃত ইন্সপেক্টরের পরিবার। মৃত সুবোধকুমার সিংহের স্ত্রী রজনী সিংহ বলেন, যাদের সমাজ থেকে বয়কট করা উচিত, তাদেরই শ্রদ্ধা ও অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে! কেন এদের মালা পরানো হচ্ছে এই প্রশ্নই তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছে বলে জানান রজনী সিংহ। তিনি বলেন, ‘বন্দে মাতরম’ বা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি যে কোনও ভারতীয় দিতে পারেন। কিন্তু যাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে এই স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, তাতে ওই ধ্বনিকেই অপমান করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সুবোধ কুমার সিংহের স্ত্রী। ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমারের ছেলের মতে, অভিযুক্তদের ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে সমাজকে। তিনি বলেন, কোনও রাজনৈতিক দলের প্রভাব থাকার কারণে অপরাধীরা যদি পার পেয়ে যান তাহলে তা সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। যদিও উত্তর প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য অবশ্য দলের ঘাড়ে দায় চাপাতে নারাজ। সোমবার তিনি বলেন, যদি কোনও আত্মীয় বা সমর্থক অভিযুক্তদের অভ্যর্থনা জানাতে চান তা অবশ্যই করতে পারেন। তবে তার সঙ্গে বিজেপি বা উত্তর প্রদেশ সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই।
২০১৮ সালের ৩ রা ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের সিয়ানায় একটি চিনি কলের মাঠে গরুর মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে গণ্ডগোলের সূত্রপাত। ঘটনাস্থলে গিয়ে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় পুলিশ অফিসার সুবোধ কুমার সিংহের। সুমিত কুমার নামে আরও এক স্থানীয় বাসিন্দারও মৃত্যু হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় পুলিশ ফাঁড়িতে। চাপের মুখে পড়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এই প্রেক্ষিতে ২৭ জনের নামে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ, তাছাড়াও ৬০ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ অফিসার খুনে অভিযুক্তদের মধ্যে ৭ জনকে শনিবার জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

Comments are closed.