আলাপনকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত: কী বলছে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসেস অ্যাক্টের 6(1) ধারা?

গত শুক্রবার কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর ‘না থাকা’ ঘিরে বিতর্ক এবং সেদিন রাতেই রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে তলব নিয়ে নবান্ন বনাম সাউথ ব্লক তরজা তুঙ্গে ওঠে।

কেন্দ্র থেকে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে শীঘ্রই মুখ্যসচিবকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩১ মে সকাল ১০ টায় আলাপন ব্যানার্জিকে নর্থ ব্লকের কর্মীবর্গ দফতরে রিপোর্ট করার আদেশ দেওয়া হয়।

এদিকে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় মুখ্যসচিবকে রাজ্যের পরিস্থিতিতে ছাড়া সম্ভব নয়। তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যেখানে রাজ্যের আবেদন মঞ্জুর করে কেন্দ্র মুখ্যসচিবের চাকরির মেয়াদ তিনমাস বৃদ্ধি করেছে, সেখানে বদলির এই নির্দেশ অসাংবিধানিক। মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, রাজ্যের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করে এভাবে একজন অফিসারকে কেন্দ্র ডেকে পাঠাতে পারে না। কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই একাধিক প্রাক্তন আমলা এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে জানান, এধরনের নির্দেশের ক্ষেত্রে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করতে হয় কেন্দ্রকে।

এই পরিস্থিতি দেখা নেওয়া যাক, রাজ্যের অফিসারকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে বদলির ক্ষেত্রে আইনে কী রয়েছে ?

আলাপন ব্যানার্জির বদলির চিঠিতে কেন্দ্র উল্লেখ্য করেছে, ১৯৫৪ সালের ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাক্ট’র ধারা 6(1) ধারা অনুযায়ী ক্যাবিনেটের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কমিটি আলাপনের ব্যানার্জির বদলির নির্দেশ মঞ্জুর করেছে।

সাধারণত রাজ্যের অফিসারদের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে পাঠানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্র প্রথমে রাজ্যের কাছে অফিসারদের নামের একটি তালিকা চান। রাজ্য কোন কোন আইএএস অফিসারকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে পাঠাবে সেই সংক্রন্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে অফিসারদের নামের তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রের কাছে পাঠায়। এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাক্ট’র ধারা 6(1) ধারায় বলা রয়েছে অফিসারদের বদলি নিয়ে যদি রাজ্য-কেন্দ্রের মতানৈক্য তৈরি হলে সেক্ষেত্রে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

পাশাপাশি এও বলা রয়েছে রাজ্য সরকারের কাজে নিযুক্ত কোনও আইএএস অফিসারের বিরুদ্ধে কেন্দ্র সরাসরি কোনরকম শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে না। সেক্ষত্রে রাজ্য এবং কেন্দ্রের যৌথ সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে কেন্দ্র শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে।

যদিও রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকদের দিল্লিতে তলব এই প্রথম ঘটনা নয়।
এর আগে ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই-এর অভিযান নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য সংঘাত চরমে ওঠে।

সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজ্যকে একটি চিঠিতে নির্দেশ দেওয়া হয়, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র সহ পাঁচজন আইপিএস অফিসারকে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্নায় অংশগ্রহণ করেছে। ওই পাঁচ আইপিএসের বিরুদ্ধে রাজ্য যেন সত্তর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, এবং রাজ্য সরকারের প্রদত্ত মেডেল যেন ওই অফিসারদের কাছ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। যদিও রাজ্য তেমন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। এবং কেন্দ্রেকে জানিয়ে দেওয়া হয় ওই অফিসাররা ধর্নায় অংশগ্রহন করেননি।

এরপর গত ডিসেম্বরে ডায়মন্ড হারবারে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় কেন্দ্র রাজ্যের তিনি আইপিএস অফিসারকে সেন্ট্রাল ডেপুটেশনে দিল্লিতে কাজে যোগ দেওয়ার আদেশ দেয়। এডিজি সাউথ বেঙ্গল রাজীব মিশ্র, ডেপুটি জেনারেল প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ প্রভিন ত্রিপাঠী, এবং ডায়মন্ড হারবারের এসপি ভোলানাথ পান্ডেকে দিল্লিতে তলব করা হয়। রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়, রাজ্যে আইপিএসের সংখ্যা কম থাকায় ওই তিন পুলিশকর্তা ছাড়া সম্ভব নয়। এখনও ওই তিন আইপিএস পশ্চিবঙ্গেই পোস্টিং রয়েছেন।

Comments are closed.