করোনা: চিনে প্রতি ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মীর একজন ভুগছেন অনিদ্রায়, মানসিক স্বাস্থ্যে মহামারির প্রভাব নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমীক্ষা

কোভিড ১৯ এর বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বেই বুক চিতিয়ে লড়ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। করোনাভাইরাস নামে যে মহামারির তাণ্ডবের বিরুদ্ধে মানব সভ্যতার লড়াইয়ের একেবারে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে লড়ছেন ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু জানেন কি, এই লড়াইয়ের মাসুল স্বাস্থ্যকর্মীদের দিতে হচ্ছে ব্যক্তিগত মানসিক অসুস্থতা ডেকে আনার মধ্যে দিয়ে?

সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় উঠে এমনই চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। চিনে যে সময় করোনাভাইরাস পিকে পৌঁছয়, সেই সময় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত মানুষদের উপর করা এই সমীক্ষা বলছে, সেই সময় চিনে কর্মরত প্রতি ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে একজন অন্তত পক্ষে অনিদ্রার সমস্যায় ভুগছেন। ওই সমীক্ষা বলছে, করোনাভাইরাস মহামারি যে কেবলমাত্র একটি শারীরিক সমস্যা, তা নয়। এর সরাসরি প্রভাব মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। যা কার্যত মানসিক স্বাস্থ্য মহামারির শামিল।

সম্প্রতি ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকিয়াট্রি জার্নালে প্রকাশিত এই সমীক্ষা বলছে, যে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী হাসপাতালে ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার পর অনিদ্রায় ভুগছেন, তাঁদের ডিপ্রেশনে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা।

সাধারণত, স্ট্রেস থেকে যে অনিদ্রা তা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ জারি থাকলে এটাই ক্রমশ ক্রনিক ইনসমনিয়ার দিকে এগোবে। যা ভয়ঙ্কর হতে পারে। সমীক্ষার অন্যতম কর্মী তথা চিনের গুয়াংঝৌয়ের সাউদার্ন মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বিন ঝাং।

২৯ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৫৬৩ জন স্বাস্থ্যকর্মীর উপর চালানো সমীক্ষায় ৫৬৪ জন বা ৩৬.১% মানুষ বলেছেন তাঁরা অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ায় ভুগছেন। এই সময় করোনাভাইরাস মহামারি চিনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সমীক্ষার ফল ২০০২ সালে সার্সের প্রাদুর্ভাবের সময় করা সমীক্ষার ফলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সার্সের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি ছিল ৩৭%।

সমীক্ষার এই পর্যায়ে উঠে এসেছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। করোনা মোকাবিলার অন্যতম হাতিয়ার পিপিই বা পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্টস। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, ডাক্তার ও নার্স বাদে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় পিপিই পড়ে থাকাও মানসিক চাপের অন্যতম প্রধান কারণ। সমীক্ষা বলছে, অনভ্যস্ত কেউ ওই পোশাক পড়লে তা চূড়ান্ত অসুবিধার কারণ হতে পারে। কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে পোশাক ছাড়াও যায় না। এই দোটানায় আরও বেশি চাপ পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। চিনে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল, যে একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে দৈনিক গড়ে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত পিপিই পড়ে থাকতে হয়েছে।

এই সমস্ত ক্ষেত্রে অনিদ্রা কিংবা স্ট্রেসের উপসর্গের কথা জানা গিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের অনিদ্রা কিংবা অন্যান্য মানসিক সমস্যার জন্য কগনিটিভ বিভেভারিয়াল থেরাপি লাভদায়ক। চিনেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।

বিশ্বের অন্য যে সমস্ত দেশে করোনাভাইরাস হামলা চালিয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও একইভাবে সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। একই উপসর্গ দেখা গেলে, চিনের ঘটনার সঙ্গে বাকি বিশ্বের সম্পর্করেখা টানা সম্ভব হবে। জানাচ্ছেন সমীক্ষার অন্যতম কর্মী বিন ঝাং।

Comments are closed.