কোভিড ১৯ সংক্রমণে মৃতের পরিবারের হাতে সরকারি গাইডলাইন মেনে দেহ হস্তান্তরিত করা যাবে, জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার হাইকোর্ট বলে, যিনি করোনা সংক্রমণে মারা গেলেন, তাঁর পরিবারকে শেষকৃত্য করা থেকে বঞ্চিত করা অনুচিত। কারণ এটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তবে অবশ্যই দেহ নেওয়ার জন্য সেই পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
করোনায় মৃত্যু হলে তাঁর শেষকৃত্য কীভাবে হবে, সেজন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক গত ১৫ মার্চ একটি গাইডলাইন দিয়েছিল। এরপর ৬ জুন রাজ্য সরকারের তরফেও একটি গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তারপরেও করোনায় মৃতদের দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল বি রাধাকৃষ্ণাণ ও বিচারপতি অরিজিৎ ব্যানার্জির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকার, প্রতিটি পুরসভা ও পঞ্চায়েতের জন্য একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ধর্ম-মত নির্বিশেষে করোনায় মৃতের আত্মীয়-পরিজন রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্য করতে পারেন। কেন্দ্র ও রাজ্যের গাইডলাইনের পরেও কেন আদালতকে এই নির্দেশ দিতে হল? হাইকোর্ট এর ব্যখ্যায় জানায়, ভারতের সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন যে, মৃতের শেষকৃত্য যদি রীতি মেনে পালন করা না হয়, তাহলে আত্মা শান্তি পায় না। এই বিশ্বাসের মূল অনেক গভীরে প্রোথিত এবং এর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের আবেগ জড়িয়ে থাকে, মন্তব্য আদালতের।
বুধবার হাইকোর্ট যে গাইডলাইন দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের দরকার নেই, সেই দেহ মৃতের নিকটজনের হেফাজতে তুলে দিতে হবে। দেহ রাখতে হবে বডি ব্যাগে। সেই ব্যাগের বাইরের অংশ জীবাণুমুক্ত করে দিতে হবে। যাঁরা দেহে হাত দেবেন, তাঁদের মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ইত্যাদি পরে থাকতে হবে। পিপিই ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো। আর যে গাড়িতে দেহ শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে, সেটিও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। শ্মশান বা কবরস্থানের কর্মীদের বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। মৃতের মুখ শেষবার দেখা বা পারলৌকিক কাজের জন্য তা খোলা যেতে পারে তবে দেহ স্পর্শ করা যাবে না। অন্তিম কাজ সম্পন্ন হলে উপস্থিত সকলেই নিজেদের জীবাণুমুক্ত করবেন। ভিড় এড়াতে হবে এবং সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বজায় রাখতে হবে। তাছাড়া করোনা মৃতের দেহ হাসপাতাল থেকে সোজা শ্মশান বা কবরস্থানে নিয়ে যেতে হবে। মৃতদেহের দাবিদার যদি নাও থাকে উপযুক্ত সম্মানের সঙ্গে সরকারি খরচে তার শেষকৃত্য করতে হবে।
কলকাতা হাইকোর্টের গাইডলাইন প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, আদালতের নির্দেশ আগে হাতে আসুক। তারপর এ নিয়ে মন্তব্য বা পদক্ষেপ করা হবে।