Corona Vaccine: অন্তত ১২ থেকে ১৮ মাস কেন লাগবে ভ্যাকসিন বাজারে আসতে? কী বলছে ৪৪ টি বিশেষজ্ঞ দলের গবেষণা?

সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং, সেল্ফ কোয়ারেন্টিনের কঠোর নিয়মাবলী, বিভিন্ন দেশে লকডাউনের মধ্যেও গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ লক্ষ ছাড়িয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৮২ হাজারের বেশি মানুষের।
এই অবস্থায় করোনাভাইরাসকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে দরকার ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক। দুনিয়াজুড়ে চলছে তারই গবেষণা। যদিও বিজ্ঞানী ও গবেষকরা জানাচ্ছেন, করোনা ভ্যাকসিনের উন্নতি, অনুমোদন ও তা বাজারে আনার জন্য অন্তত ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে।

আবিষ্কারের পরও কেন এই দীর্ঘ সময়?

দুনিয়াজুড়ে গবেষণাগারগুলির মধ্যে একরকম প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, কে করোনার প্রথম ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারে! কাদের তৈরি ভ্যাকসিন সফলভাবে প্রয়োগ করে এই অতিমারি নির্মূল করা যাবে। ২০ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO জানিয়েছে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ৪৪ টি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করে যাচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অন্তত একবছর লেগে যাবে ভ্যাকসিনের সফল প্রয়োগ ঘটাতে।

ভ্যাকসিন কাজ করে কীভাবে?

ভ্যাকসিন আবিষ্কার, প্রয়োগের সময়সীমা বোঝার আগে জানা দরকার মানবদেহে কীভাবে তা কাজ করে। নির্দিষ্ট অণু উপস্থাপনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন কাজ করে। যা প্যাথোজেনের (সংশ্লিষ্ট ভাইরাসের) অ্যান্টিজেন বলে পরিচিত। সাধারণত এই অ্যান্টিজেন দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে।
মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই অ্যান্টিজেনকে অবাঞ্ছিত বহিরাগত আক্রমণকারী হিসাবে চিহ্নিত করে আগেই অ্যান্টিবডি তৈরি করে। ভবিষ্যতে যদি আবার একই ভাইরাসের আক্রমণ হয়, তাহলে কী করতে হবে তা প্যাথোজেনকে মনে করিয়ে দেয়। ভবিষ্যতে প্যাথোজেনের আক্রমণে শরীর অসুস্থ হওয়ার আগে তৈরি হয়ে থাকা অ্যান্টিবডি তাকে আক্রমণ করে। কিন্তু নতুন গবেষণায় যে ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে, তা এই দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় প্যাথোজেন দিয়ে নয়, ভাইরাসের জেনেটিক কোড বা জিনগত সংকেত অনুকরণের মাধ্যমে প্রস্তুত হচ্ছে। যদিও এখনও পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন অনুমোদন পায়নি।

করোনা ভ্যাকসিন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদী, নভেম্বরের মধ্যেই ভ্যাকসিন পেয়ে যাবেন। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা ভ্যাকসিন প্রস্তুত হতে আরও ১২ থেকে ১৮ মাস লাগবে। এর অন্যতম কারণ, কোভিড-১৯ হল করোনাভাইরাস গ্রুপের, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই বহু গবেষণা ও পরীক্ষা হয়েছে। এর আগে SARS এবং MERS নিয়ে গবেষণা হয়েছে। এই দুই রোগের ভ্যাকসিন নিয়ে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক আগেই হয়েছে, কিন্তু সে সময়ে এর প্রাদুর্ভাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গবেষণা প্রক্রিয়াও শ্লথ হয়ে যায়।
এবার চিনে প্রথম ছড়ানো কোভিড-১৯ এর সঙ্গে SARS এবং MERS এর ৭৯ এবং ৫০ শতাংশ জিনগত মিল রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই প্রতিষেধক তৈরির কাজ বেশ খানিকটা এগিয়েই রয়েছে।

ভ্যাকসিনের প্রয়োগ

যে কোনও ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগের আগে কোনও প্রাণীর দেহে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু মার্কিন মুলুকে Moderna Trial পদ্ধতিতে সরাসরি মানবদেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাঁদের যুক্তি, এতে আরও দ্রুত এবং সফলভাবে ভ্যাকসিনের উন্নতি ঘটানো যাবে।

তবে ভ্যাকসিন তৈরিতে এত সময় লাগবে কেন?

সরাসরি মানবদেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগ তিন ধাপে হয়।
প্রথমে, অল্প কয়েকজন মানুষের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে নিশ্চিত করা হয় তা নিরাপদ কি না। এই ধাপে মোটামুটি ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। ঠিক কত সময় লাগবে নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও, ধরে নেওয়া হয় প্রথম দফা পরীক্ষা শেষ হতে কয়েক মাস লাগবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের উপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এই পর্যায়ে কয়েক’শো মানুষের উপর ভ্যাকসিন দিয়ে নিশ্চিত করা হয় রোগের বিরুদ্ধে তা কতটা কার্যকরী। অতীতে বিভিন্ন ভ্যাকসিন তৈরির দ্বিতীয় দফার মেয়াদ কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত গড়িয়েছে।
তৃতীয় তথা ফাইনাল স্টেজে কয়েক হাজার মানুষের উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দেখা হয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা কার্যকর হচ্ছে কি না। এই পর্যায়ের মেয়াদও কিছু ক্ষেত্রে কয়েক বছর পেরিয়ে গিয়েছে।
তৃতীয় দফার কাজ শেষ হলে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। ইউরোপে ব্যবসা করতে গেলে চাই ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সির ছাড়পত্র।
করোনার প্রতিষেধক নিয়ে বিভিন্ন গবেষণাগারে এখন প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। আশা করা যাচ্ছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি দ্বিতীয় পর্যায়ের গবেষণা শুরু হয়ে যাবে। কোভিড-১৯ এর বিশ্বব্যাপী তাণ্ডবের কথা মাথায় রেখে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিষেধক বাজারে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও বিজ্ঞানীরা এই নতুন ভাইরাসের সফল প্রতিষেধক তৈরি করছেন বিশেষ সাবধানতার সঙ্গে। বেশি তাড়াহুড়ো করতে চাইছেন না। সেদিক থেকে এক থেকে দেড় বছর সময়কে অল্প সময় বলেই মনে করছেন তাঁরা।

 

Comments are closed.