দুর্নীতিতে বিশ্বে ৮১ নম্বর স্থানে ভারত। ১ নম্বরে নিউজিল্যান্ড, সবার শেষে সোমালিয়া, সমীক্ষা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে প্রচারে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’। চার বছর বাদে দেখা যাচ্ছে, দুর্নীতি মোকাবিলার বিভিন্ন সূচকে খুব একটা এগোয়নি ভারত। দুর্নীতির নিরিখে বিশ্বের ১৮০ টি দেশের মধ্যে এক সমীক্ষা করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, দুর্নীতিতে ২০১৭ সালে গোটা বিশ্বে ৮১ নম্বর স্থানে রয়েছে ভারত।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নামে এই আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। কোন দেশে দুর্নীতির কী অবস্থা তা নিয়ে এই আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ১০০ নম্বরের মাপকাঠিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। যে দেশে দুর্নীতি যত কম, তার প্রাপ্ত নম্বর তত বেশি।

১০০ র মধ্যে ৮৯ নম্বর পেয়ে বিশ্বে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে এক নম্বর স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। ৯ নম্বর পেয়ে সবচেয়ে নীচে সোমালিয়া। ১০০ র মধ্যে ৪০ নম্বর পেয়ে ৮১ নম্বর স্থানে রয়েছে ভারত। ভারতের সাথে একই সঙ্গে অবস্থান করছে ঘানা, তুরস্ক এবং মরক্কো। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে দুর্নীতি সবচেয়ে কম ভুটানে। ৬৭ নম্বর পেয়ে এই তালিকায় ২৬ নম্বরে রয়েছে ভুটান। পাকিস্তান রয়েছে ১১৭ নম্বরে। রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারতের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, এবং মায়ানমারের দুর্নীতি এদেশের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, যে দেশে সংবাদমাধ্যম এবং বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার (এনজিও) নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা যত বেশি, সেই দেশে দুর্নীতি তত কম। যে দেশে প্রতি সপ্তাহে গড়ে একজন করে সাংবাদিক খুন হয়েছেন সেই দেশ তত দুর্নীতিগ্রস্থ। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত ছয় বছরে যত সাংবাদিক বিশ্বে খুন হয়েছেন তার ৯০ শতাংশের বেশি সেই সব দেশের, যাদের প্রাপ্ত নম্বর ১০০ র মধ্যে ৪৫ এর নীচে। দুর্নীতি বন্ধে কয়েক দফা সুপারিশও করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। তাদের সুপারিশ, দুর্নীতি কমাতে মুক্তচিন্তা, বাক স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর জোর দিতে হবে। সরকারের উচিত সংবাদমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ কমানো। যেখানে নাগরিক সমাজের মতামত যত গুরুত্ব পাবে, সেই দেশে স্বচ্ছতা তত বাড়বে।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী, দুর্নীতি সবচেয়ে কম নিউজিল্যান্ডে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডেনমার্ক। তিন নম্বর স্থানে রয়েছে এক সঙ্গে তিনটি দেশ। ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইৎজারল্যান্ড। তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থান ১৬ নম্বরে। চিন রয়েছে ৭৭ নম্বর স্থানে। তালিকায় রাশিয়ার স্থান হয়েছে প্রায় শেষের দিকে। ২৯ নম্বর পেয়ে পুতিনের দেশের স্থান হয়েছে ১৩৫ নম্বরে। উত্তর কোরিয়া রয়েছে ১৭১ এ। তালিকার একেবারে শেষ তিনে রয়েছে যথাক্রমে সিরিয়া, দক্ষিণ সুদান ও সোমালিয়া। বিশ্বের ১৮০ টি দেশ ও অঞ্চলকে নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। প্রথম দশটি দেশের মধ্যে এশিয়া থেকে একমাত্র জায়গা পেয়েছে সিঙ্গাপুর।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে দুর্নীতির সূচকে ভারতের প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৩৮। ২০১৬ সালে ২ নম্বর বেড়ে তা হয় ৪০। ২০১৭ সালেও ৪০ নম্বর পেয়ে ৮১ তম স্থানে রয়েছে ভারত। রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতিকালে দুর্নীতির মাপকাঠিতে দক্ষিণ এবং পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ফিলিপিন্স, ভারত এবং মালদ্বীপের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। দুর্নীতি সংক্রান্ত খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে এই তিন দেশে গত ছয় বছরে ১৫ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। বাক স্বাধীনতাও আক্রান্ত হয়েছে মারাত্মকভাবে। রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের তুলনায় এই বছর দুর্নীতির ক্ষেত্রে দেশগুলির অবস্থানে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। তালিকার দুই-তৃতীয়াংশ দেশেরই প্রাপ্ত নম্বর ৫০ এর নীচে। গড় হিসেবে যা ৪৩।

Comments are closed.