আর্থিক দুর্নীতি এবং দলবিরোধী কাজের অভিযোগ, প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসানকে বহিষ্কার করতে চলেছে সিপিএম।

অবশেষে দলের প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসানের বিরুদ্ধে চরম অবস্থান নিতে চলেছে সিপিএম। বুধবার মইনুল হাসানকে নিয়ে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা হয় এবং সেখানেই তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। বৃহস্পতি এবং শুক্রবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে পরপর দুদিন সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। সেই বৈঠকের পর লোকসভা এবং রাজ্যসভার এই প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হবে বলে সূত্রের খবর। তার আগে অবশ্য রাজ্য কমিটির সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হবে, কেন শেষ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হল দল? আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রের খবর,মুর্শিদাবাদের এই প্রাক্তন যুবনেতা এবং সাংসদ মইনুল হাসানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই মইনুলের সঙ্গে দলের একটা দূরত্ব তৈরি হওয়া সত্ত্বেও, কেন শেষ পর্যন্ত সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব তাঁকে বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে?
সূত্রের খবর, গোটা ঘটনার সূত্রপাত প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসানের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করাকে কেন্দ্র করে। বেশ কয়েকমাস আগে কিছু দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মইনুলের হাসানের বিরুদ্ধে দুই সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তদন্ত কমিশনের সামনে অভিযুক্ত মইনুল তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করেন। এরপরও কমিশন কাজ চালিয়ে যায় এবং সূত্রের খবর, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের কিছু সারবত্তাও মেলে। মূল অভিযোগ ছিল, জমি এবং সম্পত্তি বেচা-কেনা সংক্রান্ত। তদন্ত কমিশন জানতে পারে, একটি ট্রাস্টের নামে মুর্শিদাবাদে বেশ কিছু সম্পত্তি কেনা-বেচা হয়েছে, যে ট্রাস্টের মাথায় রয়েছেন মইনুল হাসানের স্ত্রী। অভিযোগ, এই সম্পত্তি কেনা-বেচায় পার্টির প্রভাবকেও কাজে লাগানো হয়েছে। যে টাকা দিয়ে সম্পত্তি কেনা হয়েছে তার উৎস সম্পর্কে সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। এর পাশাপাশি, মুর্শিদাবাদে একটি কলেজে, যার পরিচালন সমিতির প্রধান ছিলেন মইনুল হাসান, সেই কলেজটিকে একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে, সেই বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আবার বহু মানুষকে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে।
বিভিন্ন গুরুতর দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের জেরে তদন্ত কমিশনের সুপারিশে সেই সময় মইনুল হাসানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। কিন্তু এই অভিযোগ সামনে আসার পরই, গত বছর দলের সমস্ত কমিটি থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন মইনুল হাসান। সে কথা তিনি জানানও দলকে। সূত্রের খবর, তিনি জানিয়েছিলেন, সাধারণ সদস্য হিসেবে তিনি দলে থাকবেন। এরপরেই সিপিএম নেতৃত্ব মইনুল হাসানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে আর এগোয়নি। সেই রিপোর্ট প্রথা ভেঙে রাজ্য কমিটিতেও পেশ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলা সম্মেলনে জেলা কমিটিতে থেকে যান মইনুল হাসান। যদিও এ বছর মার্চ মাসে রাজ্য সম্মেলনে মইনুল হাসানকে রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়।
সম্প্রতি মইনুল হাসান সিপিএমের সমালোচনা করে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা দল বিরোধী বলেই মনে করছে আলিমুদ্দিন। সিপিএমের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পরও মইনুল হাসানকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তদন্ত কমিশনের রিপোর্টও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। কিন্তু তারপরেও তিনি প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, মুসলমানদের পার্টি বঞ্চনা করছে এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিপিএম আন্তরিক নয়। শুধু তাই নয়, তৃণমূলকে নিয়ে দলের মূল্যায়ন ভুল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এই সমস্ত মন্তব্যকে দল বিরোধী বলেই মনে করছেন সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব। এরই মধ্যে তিনি আর সিপিএম পার্টিতে নেই বলেও জানিয়েছেন এই প্রাক্তন সাংসদ। যদিও তা মানতে রাজি নয় আলিমুদ্দিন। তাদের বক্তব্য, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মইনুল হাসান এখনও পার্টি সদস্য।
সূত্রের খবর, বুধবারের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে মইনুল হাসানের প্রসঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়। সেখানে ঠিক হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ এবং তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে শুক্রবার পেশ করা হবে এবং তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য মইনুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.