ফাঁসিদেওয়ায় CPIML এর তরুণতুর্কি সুমন্তীর অভিধানে নেই অবসর, চা বাগানের কাজ সেরেই চলছে প্রচার

ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছেন সুমন্তী, তারপরেই পেটের তাগিদে চা বাগানে কাজ নেন

দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশের বাসিন্দা তিনি। পেশায় চা শ্রমিক। প্রচারের আলো থেকে বহুদূরে, চা শ্রমিকের অধিকার নিয়ে নিভৃতে লড়াইয়ে চালাচ্ছেন। দাদু ছিলেন নকশালবাড়ি আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। বাবাও জড়িয়ে পড়েন বাম রাজনীতির সঙ্গে। দু’জনকেই জেলে যেতে হয়েছে।

বামপন্থী পরিমণ্ডলে বড় হয়েছেন। ছোটো থেকেই রাজনীতির তপ্ত আঁচের সঙ্গে পরিচিত। একুশের নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের তরুণ প্রার্থী সুমন্তী এক্কা। পঞ্চম দফায় ১৭ এপ্রিল উত্তরবঙ্গের ফাঁসিদেওয়াতে ভোট। তার আগে কথা বললেন The Bengal story-এর সঙ্গে।

ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছেন সুমন্তী, তারপরেই পেটের তাগিদে চা বাগানে কাজ নেন। জানালেন রাজনীতিতে আসার মুখ্য উদ্দেশ্য চা শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরীর অধিকার সুনিশ্চিত করা। আলাপচারিতায় ২৬ বছর বয়সী সুমন্তীর কথায় উঠে এল, চা শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার কথা। তরুণ প্রার্থী স্পষ্ট জানালেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁদের একাধিক অভিযোগ। কিন্তু দেশের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিজেপি।

সুমন্তীর অভিযোগ, চা শ্রমিকদের অবস্থা কোনও সরকারের আমলেই সুখের ছিল না, তবে কেন্দ্রে বিজেপি আসার পর সমস্যা আরও বেড়েছে। একজন অস্থায়ী চা বাগান শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘন্টা পরিশ্রমের বিনিময়ে ১৭৫ টাকা মজুরী পান। বহু আন্দোলনের পর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দৈনিক মজুরী ১৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ২০৬ টাকা হয়েছে।
সুমন্তী জানালেন,ওভারটাইম না দিয়েই ৮ ঘন্টার বেশি বাগানের ম্যানেজার জোর করে তাঁদের কাজ করিয়ে নেন।

চা শ্রমিকদের প্রাপ্য রেশনও তাঁরা ঠিকঠাক পান না। রেশন পান? সুমন্তীর গলায় স্পষ্ট ক্ষোভ, রাজ্য সরকার দু’টাকা কেজি চাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও তাঁরা তা পান না। পাশাপাশি প্রার্থী আরও অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁদের জমির পাট্টা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পূরণ করেননি।

অবসরে কী করেন? প্রশ্ন শুনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের তরুণ প্রার্থীর মুখে হাসির ঝলক। সরল উত্তর, অবসর তো পাই না। আগে বাগানে ৮ ঘন্টা কাজ করতে হত। এখন একটু বেশি টাকার জন্য ফ্যাক্টরিতে কাজ করি। দিনে ১২ ঘন্টা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম, তারপর আর অবসর পাই না।

[আরও পড়ুন- গব্বর সিংহের আদলে সাধারণের পকেট কাটছেন মোদী! ভাইরাল সিপিএমের নয়া মিম]

ধারে ভারে প্রতিপক্ষের প্রার্থীদের থেকে পিছিয়ে থাকলেও, প্রচারে খামতি রাখছেন না সুমন্তী। বললেন, আমি তো চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে একজন। প্রার্থী হওয়ার পরেও কাজে যেতে হচ্ছে, না হলে খাব কী? কাজের ফাঁকে ফাঁকেই মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছেন তিনি। জয়ের বিষয়ে কতটা নিশ্চিত? সুমন্তী একক জানালেন, দেখুন আমি আমার দলের কথা বলছি, মানুষের উপর বিশ্বাস আছে। আমি নিশ্চিত মানুষ আমাদের দলের লড়াইয়ে শরিক হবেন।

Comments are closed.